Site icon Jamuna Television

অবিক্রিত গরু নিয়ে চরম বিপাকে পাবনার খামারি ও ব্যবসায়ীরা

সনম রহমান, পাবনা
পাবনা অঞ্চলের গো-খামারি ও ব্যবসায়ীদের এবারের কোরবানির ঈদে প্রায় ১১ কোটি টাকা লোকসান হয়েছে। এছাড়া ক্রস হাইব্রিড ও দেশি জাতের অবিক্রিত প্রায় ১০ হাজার গরু নিয়ে গো-খামারি ও ব্যবসায়ীরা চরম বিপাকে পড়েছেন। অনেক ব্যবসায়ী চাষিদের পাওনা টাকা পরিশোধ না করতে পেরে পালিয়ে ফিরছে বলে জানা গেছে।

পাবনার বেড়া, সাঁথিয়া, সুজানগর, আটঘড়িয়া, ঈশ্বরদী, ফরিদপুর, ভাঙ্গুড়া, চাটমোহর উপজেলার খামারি ও চাষিরা ক্রস জাতের পাবনা ব্রিড, অষ্ট্রেলিয়ান-ফ্রিজিয়ান ব্রিড, ইন্ডিয়ান হরিয়ান ব্রিড, পাকিস্তানি সাহিয়াল ব্রিড ও দেশি জাতের গরু পালন করেন। সারা দেশে এ অঞ্চরের গরুর খ্যাতি ও চাহিদা রয়েছে। কিন্তু এবার দেশের কোরবানির পশুরহাটগুলোতে ক্রস হাই ব্রিড ও দেশি জাতের গরু চাহিদার তুলনায় সরবরাহ বেশি থাকায় গরুর দরপতনে এ অঞ্চলের প্রায় দুই হাজারের অধিক গরুর ব্যাপারি ও খামারি মূলধন হারিয়ে পথে বসেছেন। তবে মওসুমী গরু ব্যবসায়ীরা সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন।

গবাদিপশু সমৃদ্ধ পাবনা অঞ্চলের খামারি ও চাষিরা জেলার চাহিদা মিটিয়ে প্রায় ৫০-৬০ হাজার কোরবানির পশু দেশের বিভিন্ন হাটে সরবরাহ করেছিলেন। গরু ব্যবসায়ীরা খামারি ও চাষিদের বাড়ী থেকে নগদ-বাকিতে গরু কিনে বিক্রির জন্য সড়ক ও নৌপথে ঢাকা, সিলেট, চট্টগ্রামসহ বিভিন্ন জেলার পশুরহাটে নিয়ে যায়। চাহিদার তুলনায় গরুর সরবরাহ বেশি থাকায় ঈদের দুই দিন আগে গরুর দাম কমে যায়। এতে অনেক ব্যবসায়ী ও খামারি বাধ্য হয়ে লোকসান দিয়ে গরু বিক্রি করেছেন, আবার অনেকেই গরু বিক্রি করতে না পেরে ফেরত নিয়ে এসেছেন।

একাধিক গরু ব্যবসায়ী ও খামারির সাথে কথা বলে জানা যায়, হাটে চাহিদার চেয়ে সরবরাহ বেশি হওয়ায় ঈদের দুই দিন আগে গরুর দাম ব্যাপকভাবে কমে যায়। ট্রাক ও নৌকার ভাড়াসহ পথ খরচ উঠানোর জন্য ব্যবসায়ী ও খামারিরা লোকসান দিয়ে গরু বিক্রি করেছেন। বেড়ার নতুনপাড়া গ্রামের হায়দার আলী ঢাকার গাবতলী পশুরহাটে ৭০টি গরু তুলেছিলেন। এরমধ্যে ৩৫টি গরু ১৫ লাখ টাকা লোকসান দিয়ে বিক্রি করেছেন। অবিক্রিত অবশিষ্ট ৩৫টি গরু ফেরত নিয়ে এসেছেন। একই গ্রামের মন্টু ব্যাপারির ৪৩টি গরুর ২১টি বিক্রি হয়েছে, ২২টি ফেরত নিয়ে এসেছেন। তার লোকসান হয়েছে প্রায় ৭ লাখ টাকা। নদী পাড়ের সোলেমান ব্যাপারির ১০৫টি গরুর মধ্যে ৫৫টি বিক্রি হয়েছে। অবিক্রিত ৫০টি গরু ফেরত নিয়ে এসেছেন। তার লোকসান হয়েছে প্রায় ১৩ থেকে ১৪ লাখ টাকা।

বেড়ার রাকশা গ্রামের কালা ব্যবসায়ী ৮টি গরু বিক্রি করে এক লাখ টাকা, হাতিগাড়া গ্রামের আকরাম ও আলতাফ ব্যবসায়ী লোকসান দিয়ে গরু বিক্রি করেছেন। সাঁথিয়া উপজেলার সেলন্দা গ্রামের খামারি রজব আলী হাইব্রিড জাতের ২০টি গরু চট্রগ্রাম হালিশহর হাটে নিয়েছিলেন। তার ৮টি গরু বিক্রি হয়েছে। অবিক্রিত ১২টি অনেক কষ্ট করে ফেরত নিয়ে এসেছেন। তার লোকসান হয়েছে প্রায় ৫ লাখ টাকা। পাবনা জেলার গরু ব্যবসায়ী ও খামারি প্রত্যেকের ৫০ হাজার থেকে ২০ লাখ টাকা পর্যন্ত লোকসান হয়েছে বলে ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন।

এদিকে অনেক খামারি বাকি টাকা না পাওয়ার আশঙ্কায় ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে গরু ফেরত নিয়ে যাচ্ছেন। আবার অনেক ব্যবসায়ী খামারী ও চাষিদের পাওনা টাকা পরিশোধ করতে না পেরে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন বলে তাদের পরিবারের সদস্যরা জানিয়েছেন।

Exit mobile version