Site icon Jamuna Television

রাজনৈতিক ভিত্তির অভাবে সংগঠিত হতে পারেনি রোহিঙ্গারা

মোহসীন-উল হাকিম

রাজনৈতিক ভিত্তি না থাকায় দীর্ঘ সময়েও সংগঠিত হতে পারেনি রোহিঙ্গারা। তৈরি হয়নি নেতৃত্ব। এই জনগোষ্ঠীর অধিকার আদায়ে বিভিন্ন সময় কিছু সংগঠন তৎপর হলেও রাজনৈতিকভাবে তারা প্রতিষ্ঠিত হতে পারেনি। যে কারণে আন্তর্জাতিক সমর্থন সত্ত্বেও বারবারই ভেস্তে গেছে রোহিঙ্গাদের অধিকার আদায়ের লড়াই।

রোহিঙ্গাদের বঞ্চনার ইতিহাস দীর্ঘদিনের। দফায় দফায় সেই বঞ্চনার প্রতিবাদ করেছে তারা। দেশটির সেনাবাহিনীও বার বার চড়াও হয়েছে পুরো জনগোষ্ঠীর ওপর। জীবন বাঁচাতে লাখ লাখ রোহিঙ্গা প্রতিবেশী বাংলাদেশে আশ্রয়ের জন্য ছুটে এসেছে। গত আগস্ট থেকে মাসখানেকের বেশি সময় ধরে রোহিঙ্গাদের বড় ঢল বাংলাদেশে। এই বিপন্ন রোহিঙ্গারা জানেন না, কেনো তাদের এই পরিণতি!

রোহিঙ্গাদের বিভিন্ন পর্যায়ে কথা বলে জানা গেছে, সাম্প্রতিককালে হঠাৎ আলোচিত সংগঠন ‘আরসা’র কথিত নেতা আতাউল্লাহকে তারা কেউ চিনতেন না। তার ছবিও এরা কেউ আগে দেখেননি।

প্রশ্ন উঠেছে আরসার শক্তিমত্তা ও নেতৃত্ব নিয়ে। মিয়ানমার থেকে পালিয়ে আসা মানুষও বিভ্রান্ত আরসার তৎপরতা নিয়ে। কেউ কেউ বলছেন- ‘আরসা’ মিয়ানমার সেনাবাহিনীরই মস্তিষ্কপ্রসূত একটি সংগঠন।

বিভিন্ন সময় বিভিন্ন নামে গড়ে উঠা রোহিঙ্গা সংগঠনগুলোর নেতৃত্বও সন্দিহান আরসার ভূমিকা নিয়ে। বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি ও কক্সবাজারের টেকনাফে রোহিঙ্গাদের সংগঠন এআরএনও এবং আরএসও’র সাবেক কয়েকজন কর্মীর সাথে কথা হয় যমুনা টেলিভিশনের। নাম প্রকাশ না করার শর্তে তারা জানান, আতাউল্লাহ’র কাছে তেমন কোনো অস্ত্র-গোলাবারুদ আছে বলে তারা মনে করেন না। তাদের দাবি, আতাউল্লাহ কাল্পনিক অস্ত্র ও টাকার কথা বলে কতিপয় রোহিঙ্গা তরুণকে বিভ্রান্ত করছে।

মিয়ানমার সীমান্তে তৎপর বিদ্রোহী সংগঠনগুলোকে কখনোই সমর্থন দেয়নি বাংলাদেশ। অন্যদিকে, মিয়ানমার সরকারও নানা কৌশলে সংগঠিত হতে দেয়নি নিপীড়িত রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীকে। যে কারণে গড়ে ওঠেনি তাদের নেতৃত্বও। রোহিঙ্গাদের বিভিন্ন সংগঠনগুলোর সাবেক নেতারা স্বীকার করেছেন তাদের মধ্যে সে অর্থে কোনো রাজনৈতিক নেতৃত্ব গড়ে উঠেনি।

দেয়ালে পিঠ ঠেকে যাওয়ায়, রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর মধ্যে এখন ঘুরে দাঁড়ানোর প্রবণতা কাজ করছে। কিন্তু, নিজেদের মধ্যে অনৈক্য এক্ষেত্রে একটা বড় বাধা বলে মানছেন তারা। যে কারণে এতো বছরেও রাজনৈতিকভাবে প্রতিষ্ঠিত হতে পারেনি রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী।

বার্মিজ রোহিঙ্গা অরগানাইজেশনের (ইউকে) প্রেসিডেন্ট তুন খিন গাফফার বলেন, আমরা মিয়ানমারে মাইনরিটি গ্রুপ। আমাদের নিজস্ব রাজনৈতিক দল গড়ে ওঠা দরকার। আশা করি ভবিষ্যতে আমাদের নেতৃত্ব গড়ে উঠবে। এলক্ষ্যে আমরা যারা বিভিন্ন দেশে আছি তারা চেষ্টা করে যাচ্ছি।

সাম্প্রতিক পরিস্থিতিতে, রোহিঙ্গাদের প্রতি বিশ্ব জনমত গড়ে উঠেছে। সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, রাজনৈতিক ভিত্তি আর সঠিক নেতৃত্ব প্রতিষ্ঠিত হলেই এখন সম্ভব রোহিঙ্গাদের নাগরিকত্বের দাবি আদায় করা।

(এ বিষয়ে যমুনা টেলিভিশনের বিশেষ প্রতিবেদক মোহসীন-উল হাকিমের প্রতিবেদন )

যমুনা অনলাইন: এমএইচ/টিএফ

 

Exit mobile version