Site icon Jamuna Television

জামালপুরের বাবু চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে যতো অভিযোগ

সাংবাদিক নাদিম হত্যার মূল অভিযুক্ত মাহমুদুল আলম বাবু।

জামালপুর প্রতিনিধি:

অভিযোগের যেন অন্ত নেই জামালপুর বকশীগঞ্জের সাধুরপাড়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মাহমুদুল আলম বাবুর বিরুদ্ধে। সম্প্রতি তার বিরুদ্ধে সংবাদ প্রকাশের জেরেই হত্যা করা হয় সাংবাদিক গোলাম রব্বানী নাদিমকে। এলাকাবাসী বলছেন, চেয়ারম্যান হওয়ার পর থেকেই বেপরোয়া ও অপ্রতিরোধ্য হয়ে ওঠে বাবু। অবৈধ সম্পদের পাহাড়ের পাশাপাশি গড়ে তোলে নিজের ক্যাডার বাহিনী।

গত বছরের ২১ ডিসেম্বর কন্যা সন্তানের জন্ম দেন সাধুরপাড়া ইউপি চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মাহমুদুল আলম বাবুর দ্বিতীয় স্ত্রী সাবিনা ইয়াসমিন। এরপর, গত ১০ মে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি জানান, সন্তানকে অস্বীকার তাকে তালাক দিয়েছেন বাবু। বাবুর বিরুদ্ধে নির্যাতনের অভিযোগও করেন বাবুর দ্বিতীয় স্ত্রী।

মাহমুদুল আলম বাবুর দ্বিতীয় স্ত্রী সাবিনা ইয়াসমিন বলেন, মেয়ে হওয়ার পর আমি তাকে বলি আমাকে স্বীকৃতি দিয়ে বাড়িতে উঠিয়ে নিতে। তখন সে আমাকে ও মেয়েকে অস্বীকার করে এবং দায়িত্ব নিতে অস্বীকৃতি জানায়। আমি ন্যায় বিচারের আশায় দ্বারে দ্বারে ঘুরেছি।

পরে স্বামী মাহমুদুল আলম বাবুর বিরুদ্ধে আদালতে নির্যাতন ও যৌতুকের মামলা দায়ের করেন সাবিনা। দলীয় পদ ব্যবহার করে নানা অপকর্মের কথা উল্লেখ করে বাবুকে দল থেকে বহিষ্কারের দাবি জানিয়ে উপজেলা আওয়ামী লীগের কাছে আবেদনও করেন তিনি। তবে এ বিষয়ে সে সময় সাংগঠনিক কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয়নি।

এ প্রসঙ্গে জামালপুর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি অ্যাডভোকেট বাকী বিল্লাহ বলেন, তার দ্বিতীয় স্ত্রীর কোনো অভিযোগ আমাদের কাছে আসেনি। সাংবাদিক নাদিম হত্যাকাণ্ডে তার সক্রিয় হাত আছে বলে শুনেছি। এজন্যই তাকে ইউনিয়িন আওয়ামী লীগের পদ থেকে অব্যাহতি দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।

এসব সংবাদ প্রকাশের কারণে সাংবাদিক গোলাম রব্বানী নাদিমের ওপর ক্ষুব্ধ হন চেয়ারম্যান বাবু। গত ১৪ মে সাইবার ক্রাইম ট্রাইব্যুনালে নাদিমসহ ৩ জনের বিরুদ্ধে মামলাও করেন তিনি। গত বুধবার (১৪ জুন) মামলাটি খারিজ করে দেন আদালত। ওইদিনই নাদিমের ওপর হামলা হয়। ময়মনসিংহ মেডিকেলে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান নাদিম। স্বজনদের অভিযোগ, ইউপি চেয়ারম্যান বাবু ও তার ছেলের নির্দেশেই ঘটেছে এ হত্যাকাণ্ড।

পরিবার-সংগঠন তো বটেই বাবুর বিরুদ্ধে অভিযোগের শেষ নেই সাধারণ মানুষেরও। স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, এক সময়ের মুদি দোকানদার বাবু অপ্রতিরোধ্য হয়ে ওঠেন ২০১৪ সালে ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও ২০১৬ সালে ইউপি চেয়ারম্যান হওয়ার পর। এ সময় অবৈধভাবে গড়ে তোলেন সম্পদের পাহাড়। কামালের বার্ত্তী বাজারে তিন তলা মার্কেটসহ একাধিক মার্কেট, বকশীগঞ্জ, ময়মনসিংহ ও ঢাকায় একাধিক বাড়ি, বিভিন্ন জায়গায় কয়েক কোটি টাকার জমিসহ বিপুল পরিমাণ সম্পদের মালিক বনে যান বাবু। তার ভয়ে মুখ খুলতেও সাহস পেতেন না কেউ।

স্থানীয়দের অভিযোগ, ভিজিডি কার্ড দেয়ার জন্য ৭-৮ হাজার করে টাকা নিতো বাবু চেয়ারম্যান। এজন্য শুধু টাকাওয়ালারাই কার্ড পেতো। নারী কেলেঙ্কারি থেকে শুরু করে সুদ-ঘুষ-মাদক-জুয়া-হুন্ডি ব্যবসাসহ বিভিন্ন অপকর্মে সে সংশ্লিষ্ট ছিল। ঢাকা ও বকশীগঞ্জে তার বাড়ি আছে। কামালের বার্ত্তী বাজারের পুরোটাই তার দখলে।

এদিকে, নাদিম হত্যায় জড়িত সবাইকে দ্রুত আইনের আওতায় আনার আশ্বাস পুলিশ সুপারের। জামালপুর পুলিশ সুপার নাসির উদ্দিন আহমেদ বলেন, অতিসত্বর এ ঘটনার সাথে জড়িত সব অপরাধীকে গ্রেফতার করে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে।

/এসএইচ

Exit mobile version