Site icon Jamuna Television

পরীক্ষার হলে নকলের বিশেষ ব্যবস্থা!

পরীক্ষা চলাকালে ধারণকৃত ভিডিও থেকে সংগৃহীত ছবি।

বাগেরহাট প্রতিনিধি:

এ যেন নকলের বিশেষ ব্যবস্থা। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতক (সম্মান) চতুর্থ বর্ষের পরীক্ষা চলাকালে বাগেরহাটের একটি কেন্দ্রে সিক বেড বাণিজ্যের মাধ্যমে কিছু শিক্ষার্থীকে অন্যায্য সুবিধা দেয়ার অভিযোগ উঠেছে। স্থানীয় রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে মহাসমারোহে নকল করেছে কিছু শিক্ষার্থী। তার প্রমাণ সংগ্রহ করতে গিয়ে লাঞ্ছনার শিকার হন গণমাধ্যমকর্মীও

সোমবার (১৯ জুন) এ ঘটনায় কেন্দ্রটি পরিদর্শন করেন বাগেরহাটের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) হাফিজ আল আসাদসহ একাধিক নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট।

জেলা প্রশাসন সূত্র জানিয়েছে, সোমবার জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অনার্স চতুর্থ বর্ষের পরীক্ষা চলছিলো। ওই পরীক্ষায় বাগেরহাটের খানজাহান আলী ডিগ্রি কলেজ কেন্দ্রের ২১৩ নং কক্ষে অসুস্থ না হয়েও কিছু শিক্ষার্থী সিক বেডে পরীক্ষা দিচ্ছিলেন। এমন অভিযোগে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সেখানে পরিদর্শনে যান। তখন ওই কক্ষে ২৮ জন শিক্ষার্থী পরীক্ষা দিচ্ছিলেন। এ সময় অসদুপায় অবলম্বনের দায়ে সিক বেডে পরীক্ষা দেয়া এক শিক্ষার্থীকে বহিষ্কার করা হয়। পরে নকল প্রতিরোধে পরীক্ষা চলাকালীন পুরো সময় সেখানে একজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট দায়িত্ব পালন করলেও পরীক্ষা শেষে ওই কর্মকর্তা চলে গেলে, সিক বেডে পরীক্ষা দেয়া বিশেষ কিছু শিক্ষার্থীকে লেখার জন্য অতিরিক্ত সময় দেয়া হয়।

এ খবর পেয়ে একজন সংবাদকর্মী সেখানে গিয়ে এ অনিয়মের ভিডিও চিত্র ধারণ করলে সেখানকার কয়েকজন শিক্ষক-পরীক্ষার্থী ওই সংবাদকর্মীকে আটকে ভিডিও মুছে ফেলতে চাপ প্রয়োগ করেন। এ সময় পরীক্ষা কেন্দ্রের সামনে জড়ো হন ভেতরে পরীক্ষা দেয়া শিক্ষার্থীদের প্রায় শতাধিক শুভাকাঙ্ক্ষী।

অভিযুক্তরা পিসি কলেজসহ জেলা-উপজেলার বিভিন্ন ইউনিটের ক্ষমতাসীন দলের ছাত্র সংগঠনের রাজনীতির সাথে জড়িত বলে জানা গেছে।

জানা গেছে, দলীয় প্রভাব খাটিয়ে শিক্ষকদের কাছ থেকে অনৈতিক সুবিধা নিচ্ছিলো ‘বিশেষ’ এই শিক্ষার্থীরা। কেন্দ্রটিতে সরকারি পিসি কলেজের হিসাববিজ্ঞান বিভাগের অ্যাকাউন্টিং থিওরি, ব্যবস্থাপনা বিভাগের ইন্ট্রোডাকশান টু বিজনেস ও গণিত বিভাগের থিওরি অব নাম্বারস বিষয়ের পরীক্ষা চলছিলো। সোমবার দুপুর দেড়টা থেকে বিকেল ৫টা ৩০ মিনিট পর্যন্ত পরীক্ষার চলার কথা থাকলেও, নির্ধারিত সময়ের পরও কিছু পরীক্ষার্থী বই খুলে ও চিরকুট দেখে লিখছেন এমন একটি ভিডিও চিত্র ছড়িয়ে পড়ে।

ভিডিওতে দেখা যায়, সে সময় ওই কক্ষে অন্তত ২০ জন পরীক্ষার্থী ছিলেন। যাদের সবাই বই, বিভিন্ন চিরকুট ও মোবাইলে ধারণ করা ছবি দেখে পরীক্ষার খাতায় লিখছিলেন।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে খানজাহান আলী ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ খোন্দকার আছিফ উদ্দিন রাখি বলেন, পরীক্ষা শেষে নিজ কক্ষে আমি টপশিট স্বাক্ষর করছিলাম। এমন সময় একটি কক্ষের কিছু শিক্ষার্থী তখনও খাতা জমা দেয়নি বলে জানতে পারি। সাথে সাথে আমি পরীক্ষা বন্ধের ব্যবস্থা নেই। এ সময় কলেজের সামনে একদল যুবক অবস্থান নিয়ে ভেতরে প্রবেশের চেষ্টা করে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হস্তক্ষেপে পরীক্ষা কেন্দ্রের পরিবেশ বিঘ্নিত হওয়া থেকে রক্ষা পায়।

এ ঘটনায় কলেজের ইসলাম শিক্ষা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মো. মোশারেফ হোসেন ও অর্থনীতি বিভাগের জেষ্ঠ প্রভাষক হেমায়েত হোসেনকে নিয়ে দুই সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। ২৪ ঘণ্টার মধ্যে তাদের প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে বলেও জানান তিনি।

এ বিষয়ে বাগেরহাট জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আজিজুর রহমান বলেন, সেখানে সিক বেডে পরীক্ষায় নকল হচ্ছিলো বলে শুনছিলাম। তাৎক্ষণিকভাবে দুজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটকে ঘটনাস্থলে পাঠানো হয়। নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট এক শিক্ষার্থীকে বহিষ্কারও করেন। পরীক্ষা শেষ হওয়া এবং উত্তরপত্র জমা নেয়ার পরে ম্যাজিস্ট্রেট চলে আসেন। পরে আবার শুনতে পাই যে ওখানে আবারও উত্তরপত্র সরবরাহ করা হয়েছে এবং নির্ধারিত সময়ের পরও পরীক্ষা দিয়েছে অনেকে।

জেলা প্রশাসক আরও বলেন, এ বিষয়ে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মো. হাফিজ আল আসাদ ও নেজারত ডেপুটি কালেক্টরেট (এনডিসি) মোহাম্মাদ মোজাহারুল হককে পাঠানো হয়। তারা সেখানে সবার সাক্ষ্য, উপস্থাপিত প্রমাণ ও বিস্তারিত তথ্য নিয়ে আসেন। তারা আগামীকাল (মঙ্গলবার) এ বিষয়ে প্রতিবেদন জমা দেবেন। প্রতিবেদন পেলে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় ও সংশ্লিষ্ট বিভাগকে জানানো হবে।

এর আগে বাগেরহাট সরকারি মহিলা কলেজ কেন্দ্রে সিক বেড বাণিজ্যের ঘটনা প্রকাশিত হওয়ায় জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। ওই ঘটনায় একাধিক শিক্ষকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থাও গ্রহণ করেছিলো কর্তৃপক্ষ।

/এসএইচ

Exit mobile version