ইউএনওকে ‘গামছা পরিয়ে’ বিদায় করার হুঁশিয়ারি উপজেলা চেয়ারম্যানের

|

ভোলাহাট উপজেলা চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক রাব্বুল হোসেন।

স্টাফ করেসপনডেন্ট, চাঁপাইনবাবগঞ্জ:

আগামী ঈদের পরে ভোলাহাট নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) উম্মে তাবাসসুমকে গামছা পরিয়ে বিদায় করার হুঁশিয়ারি দিয়েছেন ভোলাহাট উপজেলা চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক রাব্বুল হোসেন। তার এ বক্তব্যের একটি ভিডিও এখন সামাজিক যোগযোগ মাধ্যমে ভাইরাল।

সোমবার (১৯ জুন) বিকেলে মেডিকেল মোড়ে ভোলাহাট উপজেলা যুবলীগের ডাকে শান্তি সমাবেশ তিনি এমন বক্তব্য দেন। ২ মিনিট ৪৩ সেকেন্ডের প্রকাশিত ভিডিওটিতে পুরো সময়জুড়ে ইউএনওকে নিয়ে বিষোদগার করেন তিনি।

রাব্বুল হোসেন বলেন, আমাকে বরখাস্ত করার জন্য উৎপাত চলছে। আমার উপজেলা পরিষদের কর্মচারীদের বেতন টিএডিএ দেয়া হচ্ছে না, আমার ড্রাইভারের ওভারটাইম দেয়া হচ্ছে না। শুধু জামায়াত-বিএনপি নয়, প্রশাসনে বসে শেখ হাসিনার নাম ভাঙ্গিয়ে যারা চলছে তাদের সাথে বর্তমান ইউএনও যড়যন্ত্রে যুক্ত।

ইউএনওকে হুঁশিয়ারি দিয়ে তিনি বলেন, আগামী ঈদের পরে ইউএনও উম্মে তাবাসসুমকে গামছা পরিয়ে এখান থেকে বিদায় করা হবে। দাঁত ভাঙা জবাব কেউ দেয়নি, ঈদের পরে আসল রূপ দেখতে পাবে।

তিনি অভিযোগ করে বলেন, ইউএনও আওয়ামী লীগের চেয়ারম্যানকে সরিয়ে জামায়াত-বিএনপি’র লোককে বসানোর পাঁয়তারা করেছে, ষড়যন্ত্র করেছে। ঈদের পরে তার চৌদ্দ গুষ্টির নাম ভুলিয়ে দেয়া হবে।

আওয়ামী লীগ নেতাদের উদ্দেশে তিনি বলেন, আপনারা এই ইউএনওকে কন্ট্রোলে আনুন। না হলে তাকে বিদায় করুন। ঈদের পরে জামায়াত বিএনপির আন্দোলন তীব্রতর হলে আর এই ইউএনও ভোলাহাটে থাকলে আমাদের আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগের অর্ধেক নেতাকর্মীকে কারাগারে থাকতে হবে, তাদের জীবনের হুমকি রয়েছে।

উপজেলা চেয়ারম্যান হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেন, সামনে ২৫ তারিখের মধ্যে কোনো স্টেপ না নেয়া হলে যতোগুলো প্রকল্পের কাজ চলছে আমিও কোনো চেয়ারম্যান বা মেম্বারের প্রকল্পে স্বাক্ষর করবো না। এতে টাকা ল্যাপ্স (ফেরত) গেলে টাকা ল্যাপ্স (ফেরত) যাবে।

এ বিষয়ে ভোলাহাট উপজেলা চেয়ারম্যান রাব্বুল হোসেন জানান, ইউএনও ভিজিডি কার্ডে ব্যাপক অনিয়ম-দূর্নীতি করেছে। এগুলোর প্রতিবাদ করায় তিনি আমাদের ওপর নাখোশ। উন্নয়ন প্রকল্প এডিবি নিজের ইচ্ছামত কার্যক্রম পরিচালনা করে। কৃষি প্রণোদনার অর্থ আত্মসাতের পাঁয়তারা করছে, কিশোর গ্যাংয়ের কাছে ক্যারাম বোর্ড বিতরণের প্রকল্প গ্রহণ করেছে। প্রশিক্ষণে প্রেরণের জন্য মহিলা ভাইসচেয়াম্যানের কাছে ঘুষ দাবি করেছে। বিভিন্ন জাতীয় দিবসের নামে টাকা আদায় করে আত্মসাৎ করছে। এক কথায় ইউএনও’র বিভিন্ন অনিয়ম-দুর্নীতিতে আমরা অতিষ্ঠ। জেলা প্রশাসক মহোদয়কে মৌখিকভাবে জানিয়েও কোনো প্রতিকার পাইনি।

উপজেলা যুবলীগের সভাপতি রেজাউল করিম বাবু মুঠাফোনে বলেন, চেয়ারম্যান ইউএনওকে হুমকি দেয়ার বিষয়ে কারও জানা ছিলো না, এটা অনাকাঙ্ক্ষিতভাবে হয়েছে। তবে প্রকাশ্যে হুমকি দেয়া ঠিক হয়নি, এ নিয়ে আমরা বিব্রত।

অপরদিকে, ভোলাহাট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) উম্মে তাবাসসুমের বক্তব্য জানতে একাধিকবার কল দেয়া হলেও তিনি কল রিসিভ করেননি। এমনকি বক্তব্য জানতে চেয়ে ক্ষুদে বার্তা পাঠানো হলেও কোনো উত্তর মেলেনি।

এ প্রসঙ্গে চাঁপাইনবাবগঞ্জের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক আহমেদ মাহবুব-উল-ইসলাম বলেন, উপজেলা চেয়ারম্যানের বক্তব্য দেয়ার ভিডিওটি আমাদের নজরে এসেছে। এ বিষয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে জানান তিনি।

/এসএইচ


সম্পর্কিত আরও পড়ুন




Leave a reply