Site icon Jamuna Television

‘কিসওয়া’ বুননের দায়িত্ব মক্কায়, তবুও ঐতিহ্য ধরে রেখেছে মিসরীয় কাসবাগি পরিবার

কয়েক শতক ধরে পবিত্র কাবা শরিফ ঢাকার কাপড় ‘কিসওয়া’ বুনছে মিসরের কাসবাগি পরিবার। অথচ দেশটি থেকে মক্কায় পবিত্র এই কাপড় পাঠানো বন্ধ হয়েছে প্রায় ৬০ বছর আগে। তবু পবিত্র নানা বাণী অঙ্কিত কিসওয়া বোনা বন্ধ হয়নি মিসরে। বিশ্বজুড়েই ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের মধ্যে চাহিদা আছে হুবহু কিসওয়ার মতো এই কাপড়ের।

ত্রয়োদশ শতাব্দী থেকে মিসরের হস্তশিল্পীরা কিসওয়া বুননের জন্য খ্যাতি লাভ করে। উনিশ শতকের শুরুতেই, মিসরের তৎকালীন শাসক ঘোষণা দেন রাষ্ট্রীয় কোষাগার থেকে যাবে কিসওয়া তৈরির খরচ। যা বানাতো দেশটির দার আল খোরোনফোশ নামক প্রতিষ্ঠান। দীর্ঘদিন পবিত্র এ কাপড় তৈরির দায়িত্ব পালন করে তারা। কিন্তু ১৯৬২ সাল থেকে পুরোপুরি সেই দায়িত্ব নিজেদের হাতে নেয় মক্কা। তবুও মিসরে রয়ে গেছে বুননের এই চর্চা। কাবাঘর আবৃত করার এই পবিত্র কাপড় এখনও বুনে যাচ্ছে অনেক পরিবার। 

জানতে চাইলে মিসরের কিসওয়া শিল্পী আহমেদ শাওকি ওসমান আল কাসবাগি বলেন, ১৯২৩ থেকে ২৬ সাল পর্যন্ত আমার দাদা কাবাঘরের পবিত্র কিসওয়া সেলাইয়ে নিয়োজিত ছিলেন। তার তত্ত্বাবধানে কাজ করতেন ১০ জন কারিগর। বংশ পরম্পরায় এই শিল্প বহনে আমরা গর্বিত। দাদার কাছ থেকে কাজটি শিখেছিলেন বাবা; তার থেকে আমি শিখেছি। পরের প্রজন্মকে কাজটি বুঝিয়ে দেয়ার দায়িত্ব আমার। চাই না দ্রুত শেষ হোক এই সফর।

কিসওয়া বুনছেন মিসরের হস্তশিল্পী। ছবি: মিডলইস্ট আই।

তিনি আরও বলেন, প্রথমে আমরা কার্ডবোর্ডে লেখাটি এঁকে নেই। তারপর, সুতার মাধ্যমে পূরণ করি খালি জায়গা। তাহলে ঠিকঠাক মতো নকশাটি ফুটে উঠে। কপার আর সিল্কের সুতার মাধ্যমে করা হয় বুনন। তাতে ক্রেতাদের জন্য খুব একটা ব্যয়বহুল হয় না পণ্যটি। তবে, তামার সুতা দিয়ে সেলাই করাটা বেশ ক্লান্তিকর এবং কষ্টদায়ক প্রক্রিয়া।

মক্কায় সরবরাহ বন্ধ হলেও সাধারণ মানুষের কাছে কিসওয়ার কপি বিক্রি করছে কাসবাগি পরিবার। বর্তমানে ক্রেতার সংখ্যা কম। কিন্তু স্বল্পদামে ভালো পণ্যটি বুঝিয়ে দেয়ার চেষ্টা করে তারা। হজের মৌসুম এলেই বাড়ে চাহিদা।

প্রতিবছর জিলহজ্জ্ব মাসের ৯ম দিনে পাল্টানো হয় কাবাঘরের কিসওয়া। সৌদি আরবেই বিশেষ ব্যবস্থাপনায় সিল্কের কাপড়ের ওপর স্বর্ণের সুতো দিয়ে তৈরি হয় এটি। একেকটি কিসওয়া বানাতে খরচ হয় ২২ মিলিয়ন সৌদি রিয়েল। যার দৈর্ঘ্য প্রায় ৬৫৮ বর্গমিটার।

সূত্র: দ্য আরব উইকলি, রয়টার্স ও অন্যান্য গণমাধ্যম।

এটিএম/

Exit mobile version