বরিশাল সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মেয়রপ্রার্থী মুফতি সৈয়দ মুহাম্মদ ফয়জুল করিমের ওপর হামলার ঘটনায় প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়ালের মন্তব্য বিকৃত করে প্রচার করা হয়েছে বলে দাবি করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)।
সোমবার (২৬ জুন) এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ দাবি করে ইসি। তারপরও সিইসির কোনো মন্তব্যে কেউ মর্মাহত হলে তিনি সে জন্য আন্তরিকভাবে দুঃখিত বলে তাতে জানায় ইসি।
‘উনি কি ইন্তেকাল করেছেন’— বরিশাল সিটির ভোটের দিন ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মেয়রপ্রার্থীর ওপর হামলার প্রসঙ্গে সিইসির এমন বক্তব্য প্রত্যাহার করে ক্ষমাপ্রার্থনা, পদত্যাগ ও ৫০০ কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ চেয়ে কাজী হাবিবুল আউয়াল বরাবর আইনি নোটিশ পাঠান সৈয়দ মুহাম্মদ ফয়জুল করিম। গত ২২ জুন এই নোটিশ পাঠানো হয়। এরপর আজ এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে সিইসির দুঃখ প্রকাশের কথা জানায় ইসি।
বিজ্ঞপ্তিতে আরও দাবি করা হয়, প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়াল বাংলাদেশের সংবিধান ও প্রচলিত আইন অনুযায়ী স্বচ্ছতা ও নিরপেক্ষতার সঙ্গে এবং কোনো রাজনৈতিক দল ও প্রার্থীর প্রতি অনুরাগ বা বিরাগভাজন না হয়ে তার ওপর অর্পিত দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন। তিনি কখনো ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ দলের মেয়র পদপ্রার্থী মুফতি সৈয়দ মুহাম্মদ ফয়জুল করিমের সুনাম ও সম্মানের হানি ঘটে, এমন কোনো মন্তব্য করেননি। প্রধান নির্বাচন কমিশনার বর্ণিত প্রার্থীর মৃত্যু কামনা করেছেন মর্মে প্রচারিত সংবাদ ও বক্তব্য সম্পূর্ণ অলীক, মনগড়া, অনুমাননির্ভর ও ভ্রান্ত ধারণাপ্রসূত। উক্তরূপ অসত্য সংবাদ ও বক্তব্য প্রচার ও প্রকাশ করে নির্বাচন কমিশন ও প্রধান নির্বাচন কমিশনারকে উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে বিতর্কিত ও অগ্রহণযোগ্য করার অপচেষ্টা করা হচ্ছে।
ইসির ওই বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, ১২ জুন বরিশাল সিটি করপোরেশন সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচন শেষ হওয়ার পর আনুমানিক বিকেল পাঁচটার দিকে উপস্থিত সাংবাদিকদের ব্রিফ করার সময় ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ দলের পক্ষে হাতপাখা প্রতীক নিয়ে মেয়র পদপ্রার্থী মুফতি সৈয়দ মুহাম্মদ ফয়জুল করিমের ওপর হামলা ও রক্তাক্ত করার বিষয়ে সাংবাদিকদের ‘উপর্যুপরি প্রশ্নের জবাবে’ প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়াল উদ্বেগ ও উৎকণ্ঠার সঙ্গে গণমাধ্যমকর্মীদের কাছে ওই প্রার্থীর বর্তমান শারীরিক অবস্থাসংক্রান্ত তথ্য জানতে চেয়েছেন। বিষয়টি বিকৃতভাবে ও ভুলভাবে ব্যাখ্যা করে প্রধান নির্বাচন কমিশনার ওই প্রার্থীকে কটাক্ষ করেছেন এবং তার মৃত্যু কামনা করেছেন মর্মে বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রচারিত ও প্রকাশিত হয়েছে। এমনকি এ বিষয়ে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারাও নির্বাচন কমিশনকে হেয়প্রতিপন্ন করে বিভিন্ন সভা-সমাবেশে বক্তব্য দিয়েছেন বলে নির্বাচন কমিশনের গোচরীভূত হয়েছে।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, প্রকৃত বিষয় হলো, বরিশাল সিটি করপোরেশন নির্বাচনে বর্ণিত প্রার্থীর ওপর আক্রমণ হওয়ার ঘটনা অবহিত হওয়ামাত্রই প্রধান নির্বাচন কমিশনারসহ অন্য নির্বাচন কমিশনারগণ দোষী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করার জন্য সংশ্লিষ্ট প্রশাসন ও পুলিশের কর্মকর্তাগণকে নির্দেশনা প্রদান করেন। নির্বাচন কমিশনের উক্ত নির্দেশনার আলোকে বরিশাল জেলা প্রশাসন ও বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশ তদন্তপূর্বক বর্ণিত বিষয়ে দায়ী ব্যক্তিদের চিহ্নিত করত আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করেছেন মর্মে ১৪ জুন নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ে প্রতিবেদন প্রেরণ করেছেন। ওই প্রতিবেদনসমূহ পর্যালোচনায় দেখা যায়, ওই ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার অপরাধে মো. মঈনুল ইসলাম স্বপন ও মো. জহিরুল ইসলাম রেজভীকে গ্রেপ্তার করে বিজ্ঞ আদালতে সোপর্দ করা হয়েছে। এ ঘটনায় উপর্যুক্ত ব্যক্তি ছাড়াও অন্য অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদের ভিডিও ফুটেজ ও সাক্ষ্য–প্রমাণের মাধ্যমে শনাক্তকরণসহ পরবর্তী আইনগত ব্যবস্থা অব্যাহত রয়েছে এবং উক্ত বিষয়টি নির্বাচন কমিশন সার্বক্ষণিক তদারকি করে যাচ্ছে।
/এমএন

