Site icon Jamuna Television

তামিম ইকবাল: ব্যাট হাতে কিংবদন্তির নায়ক

লর্ডসে সেঞ্চুরির উদযাপনে তামিম ইকবাল। ছবি: সংগৃহীত

ঘণ্টা দুয়েক আগেই দলের ফিজিও জানিয়েছেন, কবজিতে আঘাত লাগায় চলমান এশিয়া কাপটাই শেষ হয়ে গেছে তামিম ইকবালের। কিন্তু যখন বাংলাদেশের পতন ঘটেছে ৯ উইকেটের তখন দেখা গেলো, ফিজিওর সিদ্ধান্ত পাল্টে গ্লাভস বিশেষভাবে কেটে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ব্যাট হাতে মাঠে পড়েছেন তামিম ইকবাল খান। বাঁহাতটা ঝুলছে স্লিংয়ের সাহায্যে। এক হাতে কোনোমতে ব্যাট ধরে মাঠে নেমে মাত্র ১ রানই করেছেন তিনি। কিন্তু শেষ উইকেট জুটিতে বাংলাদেশের রান এসেছে ৩২, আর দলীয় সংগ্রহের খাতায় ২৬১। শেষ ৩ ওভারে মুশফিকুর রহিম ঝড় তুলতে পেরেছিলেন তামিমের অবিস্মরণীয় বীরত্বের কারণেই। ম্যাচটাই জিতেছিল বাংলাদেশ। আর ৬ সপ্তাহের জন্য মাঠের বাইরে চলে গিয়েছিলেন তামিম।

ম্যাচের দ্বিতীয় ওভারেই সুরাঙ্গা লাকমলের লাফিয়ে ওঠা বলে বাম কবজিতে আঘাত পেয়েছিলেন এই ওপেনার। সঙ্গে সঙ্গে ফিজিওথেরাপিস্টকে ডাকেন। ৩ বলে ২ রান করা অবস্থায় আহত অবসর। তারপর যান হাসপাতালে। স্ক্যানে ধরা পড়ে বাঁ হাতের তর্জনীতে হাড়ে চিড় ধরেছে। কিন্তু সেসব কিছুই যেন তামিমের কাছে অর্থহীন হয়ে পড়ে যখন ৪৭ ওভারে বাংলাদেশ হারিয়ে ফেলে ৯ম উইকেট। মাঠে নামলেন তামিম। রচনা করলেন ক্রিকেটীয় বীরত্বের এক অপূর্ব গাঁথা। ভাঙা কবজি নিয়ে মাঠে নেমে পড়েছিলেন বলেই মুশফিকুর রহিম পূর্ণ করেন এক দুর্দান্ত সেঞ্চুরি। বাংলাদেশের জয়ে পর্দার আড়ালের নায়ক ছিলেন তামিম ইকবাল খান।

দেশকে অনেকবারই তিনি উপহার দিয়েছেন উদযাপনের উপলক্ষ। পোর্ট অব স্পেনে ভারতের বিরুদ্ধে অবিস্মরণীয় জয়ে তামিম ইকবাল খেলেছিলেন ম্যাচ জয়ী অর্ধশতক। জহির খানকে ড্যান্সিং ডাউন দ্য উইকেটে এসে গ্যালারিতে আছড়ে ফেলা সেই শট জন্ম দিয়েছিল বাংলাদেশ ক্রিকেটের অন্যতম সেরা এক আইকনিক ছবির। সাহসেরও কি নয়?

লর্ডসে দুর্দান্ত সেঞ্চুরি করে উদযাপনে ইঙ্গিত করেছিলেন, আমার নাম তামিম ইকবাল। অনার্স বোর্ডে নামটি লিখে দিও। লর্ডসে তা লেখা হয়ে গেছে। তামিম ইকবালের হাত ধরে নাম উঠেছে বাংলাদেশের। নানা চড়াই-উৎরাই পেরিয়ে ক্রমে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেন দেশের সফলতম ব্যাটার হিসেবে। বাংলাদেশের ব্যাটিং রেকর্ডের অনেকগুলোই নিজের করে নিয়েছেন তিনি। বাংলাদেশের ক্রিকেটে অনেক প্রথমের জন্ম তার হাত ধরে। ২০০৭ সালের ৯ ফেব্রুয়ারি হারারে স্পোর্টস ক্লাব মাঠে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ওয়ানডে অভিষেক হয় তামিমের। আফগানিস্তানের বিপক্ষে ঘরের মাঠে এই সংস্করণেই তার শেষ আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেললেন তামিম। ২৪১ ম্যাচের ওয়ানডে ক্যারিয়ারে ৩৬.৬২ গড়ে ৮৩১৩ রান করেছেন, সেঞ্চুরি ১৪টি, ফিফটি ৫৬টি।

ওয়ানডে অভিষেকের বছরেই ক্রিকেটের সংক্ষিপ্ত ফরমেটে পা রাখেন খান সাহেব। টি-টোয়েন্টিতে ৭৪ ম্যাচে করেছেন ১৭০১ রান। এই সংস্করণে দেশের হয়ে একমাত্র সেঞ্চুরি খান সাহেবেরই । পরের বছর ২০০৮ সালে ক্রিকেটের বনেদী ফরম্যাট টেস্টে অভিষেক হয় তার। টেস্টে ৭০ ম্যাচে ৩৮.৮৯ গড়ে ৫১৩৪ রান করেছেন তামিম। সেঞ্চুরি ১০টি ও ফিফটি ৩১টি। এই সংস্করণে বাংলাদেশের হয়ে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রান ও সেঞ্চুরি করেছেন তিনি।

আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ২৫ সেঞ্চুরি করা তামিম তিন সংস্করণ মিলিয়ে ১৫ হাজারের বেশি রান করেছেন। দেশের আর কোনো ক্রিকেটার আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে এত রান করতে পারেননি। তবে পরিসংখ্যানে কখনও লেখা থাকবে না পোর্ট অব স্পেনে ভারতীয় সমর্থকদের স্রোতকে থামিয়ে দেয়া লং অনের উপর দিয়ে মারা ওভার বাউন্ডারির কথা। সেখানে থাকবে না তামিমের লর্ডস বীরত্বের কথা। কিংবা, সংখ্যার কী সাধ্য ভাঙা কবজি নিয়ে ফাস্ট বোলারের শর্ট লেন্থ বলকে মোকাবেলা করার সাহসকে বর্ণনা করে! এবার সব বিতর্ক থামিয়ে দিয়ে অশ্রুসিক্ত নয়নে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট ছাড়লেন তামিম। তার বিদায়ে শেষ হয়ে গেল বাংলাদেশ ক্রিকেটের একটি অধ্যায়েরও। ৬ জুলাই ২০২৩ থেকে জাতীয় দলের সাবেক ক্রিকেটার হয়ে যাওয়ার ক্ষণে তামিম রেখে গেলেন বর্ণাঢ্য পরিসংখ্যান, আক্ষেপ ও সাহসী ক্রিকেটের ইশতেহার ঘোষণার অজস্র স্মৃতি।

/এম ই

Exit mobile version