Site icon Jamuna Television

‘আসলেই চালিয়ে যেতে পারছিস না? না কি কোনও চাপ তোকে বাধ্য করেছে’

হঠাৎই করেই ক্রিকেট ভক্তদের স্তম্ভিত করে দিয়েছে জাতীয় দলের ওয়ানডে অধিনায়ক তামিম ইকবাল খানের অবসরের ঘোষণা। বৃহস্পতিবার চোখের পানিতে বিদায়ের ঘোষণা দিলেন আবেগাপ্লুত তামিম। এমন ঘোষণায় অবাক হয়েছে জাতীয় দলের সাবেক অধিনায়ক মাশরাফী বিন মোর্ত্তজা। নিজের ফেসবুকে দেয়া এক স্ট্যাটাসে তামিমের সিদ্ধান্তকে সাধুবাদ জানালেও ম্যাশ প্রশ্ন তুলেছেন, আসলেই কি চালিয়ে যেতে পারছিস না? না কি কোনও চাপ তোকে বাধ্য করেছে!

বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় দেয়া স্ট্যাটাসে এক সময়ের ঘনিষ্ঠ সতীর্থের উদ্দেশে মাশরাফী লিখেছেন, তোর সিদ্ধান্ত অবশ্যই একান্তই তোর। এটা কারও ভালো লাগলেও তোর, ভালো না লাগলেও তোর। পক্ষে-বিপক্ষে অনেক কথাই হবে। তবে সবচেয়ে ভালো কোনটা, সেটা তুই ছাড়া কেউই ভালো বুঝবে না। তাই তোর এই সিদ্ধান্তকে আমি ব্যক্তিগতভাবে শতভাগ সম্মান জানাই।

তামিমের সিদ্ধান্তকে সম্মান জানালেও এমন সিদ্ধান্তে নিজের অবাক হওয়াটা লুকাতে পারেননি মাশরাফী। লিখেছেন, তবে কিছু কথা জানতে মন চায়, মাত্র ৩৪ বছর ১০৮ দিনেই বিদায় কেন! আসলেই কি চালিয়ে যেতে পারছিস না? না কি কোনও চাপ তোকে বাধ্য করেছে! তোর অনেক ভক্ত হয়তো খুঁজে ফিরবে এই প্রশ্নগুলোর উত্তর। আজ খুঁজবে, এমনকি ভবিষ্যতও আরও অনেকদিন খুঁজবে।

তামিমের সাথে প্রথম সাক্ষাতের স্মৃতিচারণ করে মাশরাফী লেখেন, তোকে প্রথম দেখেছি চট্টগ্রামে তোদের বাসায়, হাফ প্যান্ট পরে খেলছিলি। তোর ভাই, আমার বন্ধু নাফিস ইকবাল তোকে আমার সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিল। পরের বার দেখলাম জাতীয় লীগে ওপেন করতে, খুলনার মাঠে। তারপর ২০০৭ বিশ্বকাপ থেকে একসঙ্গে পথ চলতে চলতে তুই হয়ে গেলি বন্ধুর মতো। কত দিন কত রাত এক সঙ্গে সময় কাটিয়েছি, একসঙ্গে খেতে যাওয়া, ঘণ্টার পর ঘণ্টা আড্ডা, দুষ্টুমি, মজা, তর্ক, খেলা নিয়ে কত কত আলোচনা করেছি, সেসবের কোনও হদিস নেই।

তামিমের আবেগ ছুঁয়ে গেছে মাশরাফীকেও। তিনি লিখেছেন, যখন বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের অধিনায়ক ছিলাম, তখন তুই ছিলি আমার অন্যতম ‘স্নাইপার।’ সেটা তুই নিজেও খুব ভালো করেই জানিস। যেদিন দল থেকে বের হয়ে এলাম, সেদিন তুই আমাকে কাঁধে তুলে নিয়েছিলি। পরে সারারাত একসঙ্গে আড্ডা দিয়েছিলাম। যে কোনও সিরিজ বা সফরে তুই ছিলি আমার রুমে আড্ডার অবধারিত সঙ্গী। আরও কত শত স্মৃতি এখন মনে পড়ছে! তোকে যতটুকু চিনি, তাতে তোর এই সিদ্ধান্তকে আমি অনায়াসে পোস্টমর্টেম করতে পারতাম। কিন্তু তা করব না, কারণ ওই যে, তোর নিজস্ব সিদ্ধান্তকে অবশ্যই সম্মান জানানো উচিত।

এমন কঠিন সিদ্ধান্তের দিনেও সাবেক ক্যাপ্টেনকে পাশে পাচ্ছেন তামিম। ম্যাশ লিখেছেন, তোর মানসিক অবস্থা আমি বুঝতে পারছি, সেই সঙ্গে এটাও বলছি যে, তুই বাংলাদেশের ক্রিকেটকে যা কিছু দিয়েছিস, তা আমরা আজীবন মনে রাখব। একজন তামিম হয়ে উঠতে কতটা পরিশ্রম, কতটা সময়, কতটা মেধা আর কত ত্যাগ থাকতে হয়, তা সময় সব কিছু বুঝিয়ে দেবে। তোর প্রতি রইল অফুরন্ত ভালোবাসা। পরবর্তী জীবন পরিবার নিয়ে দারুণ কাটাবি, সেই আশাই করছি। আর একটা কথা, দলের ভেতর নানা পরিসংখ্যান নিয়ে বিশ্লেষণ নির্ভর আলোচনা এখন কে করবে, ঠিক জানি না। হয়তো কেউ করবে। তবে তুই এই জায়গায় সবসময়ই থাকবি সেরাদের সেরা।

একজন কিংবদন্তির বিদায়ের আবেগ স্পর্শ করেছে, তবু দলের প্রতি শুভ কামনা জানাতে ভুল করেননি মাশরাফী। লিখেছেন, গুড বাই মি. তামিম ইকবাল খান। একজন কিংবদন্তির বিদায়। বাংলাদেশ ক্রিকেটের জন্য শুভ কামনা, এগিয়ে চলুক দুর্বার গতিতে। আমাদের এখন সামনে এগিয়ে যাওয়ার সময়।

Exit mobile version