Site icon Jamuna Television

৩৬ বছর পর মাধ্যমিক পাশ করলেন কুড়িগ্রামের রহিমা

কোনো বাধাই দমাতে পারেনি কুড়িগ্রামের রহিমা বেগমকে।

স্টাফ করেসপনডেন্ট, কুড়িগ্রাম:

অদম্য ইচ্ছাশক্তি আর পরিবারের অনুপ্রেরনায় ৩৬ বছর পর মাধ্যমিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে অনন্য এক দৃষ্টান্ত স্থাপন করলেন কুড়িগ্রামের রহিমা বেগম (৪৬)। তিনি কুড়িগ্রাম সরকারি কলেজের চতুর্থ শ্রেনীর কর্মচারী হিসেবে কর্মরত আছেন।

শুক্রবার (২৮ জুলাই) এসএসসি সমমান পরীক্ষায়  কুড়িগ্রাম কাঁঠালবাড়ি মহিউস সুন্নাহ মহিলা দাখিল মাদ্রাসা থেকে এবারের দাখিল পরিক্ষায় মানবিক বিভাগ থেকে ৩.৬০ জিপিএ পেয়ে উত্তীর্ণ হন রহিমা।

জানা গেছে, চতুর্থ শ্রেণীর পর দারিদ্রের কষাঘাতে আর পড়াশোনা করতে পারেননি রহিমা। অল্প বয়সে বসতে হয় বিয়ের পিঁড়িতে। এক মেয়ে ও এক ছেলের জননী তিনি। ছেলে কুড়িগ্রাম সরকারি কলেজে মাস্টার্স পড়ছেন, আর মেয়েকে বিয়ে দিয়েছেন রহিমা। অনেক বছর পর নাতিকে (মেয়ের ছেলে) নিয়ে স্কুল যাওয়া আসা করতে করতেই পড়াশোনায় আগ্রহী হয়ে ওঠেন রহিমা। এরপর, কুড়িগ্রাম কাঁঠালবাড়ি মহিউস সুন্নাহ মহিলা দাখিল মাদরাসা থেকে দাখিল পরীক্ষায় ৩.৬৭ জিপিএ পেয়ে উত্তীর্ণ হন তিনি। এতোদিন পর মাধ্যমিক পাশ করায় পরিবার, আত্মীয়-স্বজন ও সহকর্মীদের অভিনন্দন ও ভালোবাসায় সিক্ত হয়েছেন রহিমা বেগম।

রহিমা বেগম বলেন, লোক লজ্জা আর বয়সের কথা না ভেবে আমি পড়াশোনা চালিয়ে গেছি। চতুর্থ শ্রেণীর পর পড়াশোনা বন্ধ হয়ে যায়।আগ্রহ থেকেই আবারও পড়তে শুরু করি। আলহামদুলিল্লাহ এ বছর এসএসসি পাশ করলাম। আমার পড়াশোনা করার ব্যাপারে আমার স্বামী-সন্তান ও সহকর্মীরা উৎসাহ দিয়েছেন। আমার ইচ্ছে পড়াশোনা চালিয়ে যাওয়ার।

রহিমা বেগমের মেয়ে মজিদা আক্তার পপি বলেন, মা এই বয়সে এসে সংসার ও চাকুরি করার পরও পরীক্ষায় পাশ করেছে- এই খুশি ভাষায় প্রকাশ করার মতো না। আমার মা সামনে আরও এগিয়ে যাবে, এজন্য সবার কাছে দোয়া চাই।

কুড়িগ্রাম সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ মির্জা মোহাম্মদ নাসির উদ্দীন বলেন, রহিমা বেগম আমাদের কলেজের একজন কর্মচারী। তিনি চাকরি করার পর দীর্ঘ পথ পাড়ি দিয়ে মাদরাসায় যেতেন। এ বছর এসএসসি/সমমান পরীক্ষায় অংশ গ্রহণ করে জিপিএ ৩.৬০ অর্জন করেছে। বয়স কিংবা অন্য কোনো বাধা তাকে আটকাতে পারেনি। পড়াশোনায় মাঝপথে কিংবা শুরুতে থেমে যাওয়া যেকোনো মানুষের জন্য রহিমা এক অনুপ্রেরণার উৎস হয়ে থাকবেন। যে কোনো বয়সেই যে শিক্ষা অর্জন করা যায় রহিমা নিঃসন্দেহে তার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। কুড়িগ্রাম সরকারি কলেজ কর্তৃপক্ষের পক্ষ থেকে রহিমাকে অভিনন্দন। তিনি আমাদের কলেজে উচ্চ মাধ্যমিক শ্রেণীতে ভর্তি হতে চাইলে তাকে সর্বপ্রকারের সহযোগিতা করা হবে।

/এসএইচ

Exit mobile version