Site icon Jamuna Television

ডেঙ্গুতে খালি হবে আর কত মায়ের বুক?

ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে প্রতিদিন মরছে মানুষ। ছবি: সংগৃহীত

যেসময়ে চাঁদের অনাবিষ্কৃত মেরু আবিস্কারের সফলতা উদযাপিত হচ্ছে, যেসময়ে রকেট গতিতে ঊর্ধ্বশ্বাসে ছুটছে বিশ্বসভ্যতা, ঠিক সেই সময়ে কাঁদছে মানুষ সুস্থতার আশায়। অসুস্থ সন্তান কোলে নিয়ে কাঁদছে জননী। অসহায় জনক ছুটে যাচ্ছে হাসপাতাল থেকে হাসপাতালে। কেউ কেউ হয়তো পাচ্ছে ‘আপাত স্বর্গের মতো’ হাসপাতালের এক চিলতে জায়গা। কেউ কেউ তিল পরিমান ঠাঁইও পাচ্ছে না। মায়ের কোলে অসুস্থ শিশু ক্রমশ নেতিয়ে পড়ছে আর বাবা জনে জনে যোগাড় করতে চলেছে রক্ত। রক্ত পেলেই কি শিশুটি বেঁচে যাবে?

সম্প্রতি সোশ্যাল মিডিয়ায় ঘুরে বেড়ানো একটি ছবি দেখে হৃদয় আর্দ্র হয় অনেকের। শিশু উমরের ছবি। ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে মাত্র চারদিনের মাথায় তার মৃত্যু শোকাচ্ছন্ন করে সবাইকে। ঈদে রংপুরে পারিবারিক কবরস্থানের সামনে দাঁড়িয়ে একটি ছবি তুলেছিল উমর। ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর পর সোমবার (২৮ আগস্ট) এখানেই দাফন করা হয় ক্লাস ফাইভ পড়ুয়াকে। উমরের বাবার ফেসবুক স্ট্যাটাসে দেখা যায়, চারদিন আগে শিশুটির ডেঙ্গু পজিটিভ হয়। পিআইসিইউতে নেয়া হয় শিশুটিকে। এরপর অবস্থার অবনতি হওয়ায় তাকে নেয়া হয় লাইফ সাপোর্টে। সেদিনই ছিল পৃথিবীতে শিশু উমরের শেষ দিন।

শিশু উমরের মরদেহ এবং পিতার ফেসবুক পোস্ট।

এটা শুধু একটা খণ্ডচিত্র। প্রতিদিন ডেঙ্গুতে অসংখ্য মানুষের মৃত্যু হচ্ছে। শুধু শিশু নয়, বৃদ্ধ কিংবা গর্ভবতী নারীরাও দাঁড়িয়ে আছে মৃত্যুর দুয়ারে। নিজের বাঁচার লড়াই চলছে, একইসঙ্গে চলছে গর্ভের সন্তানটিকে বাঁচানোর প্রয়াস। এই প্রয়াস অনেকক্ষেত্রে জীবনের তীরে ফিরছে না। তখন না ফেরার দেশে তার সঙ্গী হচ্ছে গর্ভস্থ শিশুটিও।

ওদিকে, মশা মারতে কামান দাগার ব্যাপারে উঠেছে প্রশ্ন। যুগের পর যুগ ধরে চলে আসা মশা মারতে সিটি করপোরেশনের ফগিং পদ্ধতি কতটা কার্যকর? ঢাকা দক্ষিণ সিটির দাবি, ফগিংয়ে কাজ হচ্ছে। এক এলাকায় ৭ দিনে ১০ জনের বেশি রোগী থাকবে না বলে তারা আটঘাট বেঁধে নেমেছে। অন্যদিকে, ঢাকা উত্তর বলছে ভিন্ন কথা। তাদের দাবি, ফগিং পুরনো পন্থা। এডিস দমনে এটা আর আগের মতো কার্যকর নয়।

কীটতত্ত্ববিদরা বলছেন, এতো বছরের পুরনো কীটনাশকে উল্টো বেড়েছে মশার প্রতিরোধ সক্ষমতা। রেজিসটেন্স গবেষণা করে তা বদলানো দরকার। অন্যথায় শুধু ওষুধই ছিটানো হবে, মশা আর মরবে না।

চলতি বছর ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে মৃতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৫৬৯ জনে। আগস্টেই প্রাণহানি ছাড়িয়েছে তিনশ। এর মধ্যে শূন্য থেকে ১৫ বছর বয়সী শিশু-কিশোরের সংখ্যা ৬৮। ডেঙ্গু থেকে রেহাই পাচ্ছে না সত্তরোর্ধরাও। চলতি বছরে (২৯ আগস্ট পর্যন্ত) সারাদেশে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছেন মোট এক লাখ ১৯ হাজার ১৩৩ জন।

ঘরে ঘরে শিশু-কিশোর আক্রান্ত হয় জ্বরে। বাবা-মায়ের চোখে নেমে আসে দুশ্চিন্তার ছায়া। তারা কায়মনোবাক্যে প্রার্থনা করে স্রষ্টার কাছে। হাসপাতালের দ্বারে দ্বারে ঘুরে চিৎকার করে– প্লাটিলেট কমে যাচ্ছে.. রক্ত লাগবে.. প্লাটিলেট কমে যাচ্ছে.. রক্ত লাগবে.. একসময় এই ঘোষণার সমাপ্তি হয়। রক্তের আর প্রয়োজন হয় না। সন্তান চিরতরে ঘুমিয়ে যায়। কর্তৃপক্ষের অবহেলায় শিশুটি মারা যায়। কর্তৃপক্ষের উদাসীনতায় শিশুরা মারা যায়। এভাবে লম্বা হয় মৃত্যুর মিছিল। সন্তান হারানোর শোকে পাগলপারা হয়ে যায় পিতা-মাতা।

নগর পিতারা কি শুনতে পান এইসব আহাজারি? কর্তৃপক্ষ কি খবর রাখেন হাসপাতালের চালচিত্রের? অনেকের প্রশ্ন, ডেঙ্গুতে আর কত মায়ের বুক খালি হবে?

/এএম

Exit mobile version