Site icon Jamuna Television

স্বামীর ওপরেই দোষ চাপালেন এডিসি সানজিদা

কোলাজ ছবি: সংগৃহীত

হারুন কাণ্ডে এই প্রথম মুখ খুলেছেন এডিসি সানজিদা আফরিন। তিনি বলেছেন, ছাত্রলীগ নেতাদের নিয়ে তার স্বামী প্রথমে এডিসি হারুনকে মারধর করেছেন।

মঙ্গলবার (১২ সেপ্টেম্বর) গণমাধ্যমকে দেয়া সাক্ষাৎকারে তিনি সেদিনের ঘটনাবলি বর্ণনা করেছেন। ঘটনার বর্ণনায় তিনি বলেন, সিভিয়ার চেস্ট পেইনে ভুগছিলাম। তাই ডাক্তার দেখানোর দরকার ছিল। যেহেতু ইব্রাহিম কার্ডিয়াক হাসপাতাল এডিসি হারুন স্যারের জুরিসডিকশনের মধ্যে পড়ে, তাই ডাক্তারের সিরিয়াল পাওয়ার জন্য আমি স্যারের হেল্প চেয়েছিলাম। স্যারকে জানালে তিনি এসে ডাক্তারের সঙ্গে কথা বলেন। ডাক্তার কিছু টেস্ট দিলে আমি ব্লাড স্যাম্পল দেই। ইকো টেস্ট আর ইসিজিও করানো হয়। ইটিটি করানোর ১৫-২০ মিনিট পর আমি বাইরে একটা হট্টগোলের শব্দ শুনি।

এডিসি সানজিদা জানান, তিনি তখন বাইরে এডিসি হারুনের চিৎকার শুনতে পান। হারুন বলছেন–’ভাই আপনি আমার গায়ে হাত তুললেন কেন? আপনি তো আমার গায়ে হাত তুলতে পারেন না’। সানজিদা বলেন, আমার প্রথমে ধারণা হয়েছিল যে, হয়তো অন্য কারও সঙ্গে ঝামেলা। কিন্তু এর কিছুক্ষণ পর আমি দেখতে পাই আমার হাজবেন্ড (রাষ্ট্রপতির এপিএস আজিজুল হক মামুন) সেখানে। তিনি ওখানে কী করছিলেন, কেন গিয়েছিলেন, আমি জানি না। তাকে পুরোপুরি আউট অব মাইন্ড লাগছিল (মানসিকভাবে স্থির ছিলেন না) এবং খুবই উত্তেজিত ছিলেন। তার সঙ্গে আরও কয়েকজন ছেলে ছিল, যাদেরকে আমি চিনতাম না। তারা এডিসি হারুন স্যারকে মারতে মারতে টেনে হিঁচড়ে ইটিটি রুমে নিয়ে এলো।

ওই সময়ে স্যার নিজের নিরাপত্তার জন্য আমার পেছনে (রুমের কোণার দিকে) দৌঁড়ে এসে দাঁড়ালেন। ইটিটি রুমে এতো মানুষ ঢোকার কারণে তখন সেখানে একটা বিব্রতকর পরিস্থিতি তৈরি হয়। কারণ, ইটিটি রুমে কড়াকড়ি থাকে। তখন আমি চিৎকার করছিলাম।

সানজিদা আরও বলেন, এরপর আমার হাজবেন্ড তার সঙ্গে থাকা লোকজনকে বলেন, ‘এই ভিডিও কর’। এরপর সবাই ফোন বের করে ভিডিও করা শুরু করে। যখন তারা ভিডিও শুরু করে তখন আমি আমার হাজবেন্ড এবং তার সঙ্গে থাকা লোকজনের সঙ্গে চেঁচামেচি করছিলাম। সেই অবস্থায় আমার হাজবেন্ড আমার গায়ে হাত তোলেন এবং এডিসি স্যারকে বের করার চেষ্টা করছিলেন। তখন স্যারের কাছে বিষয়টি সেইফ মনে হয়নি। এরপর স্যার কিছুক্ষণ অপেক্ষা করছিলেন, পুলিশের ফোর্সকে আসতে বলেছিলেন। এর ১০-১৫ মিনিট পর ফোর্স এলে তারা সেখান থেকে বের হয়ে যায়।

সানজিদা আফরিন আরও যোগ করেন, যারা ভিডিও করছিল, আমি তাদের ফোন কেড়ে নেয়ার চেষ্টা করলে তাদের সঙ্গেও আমার একপ্রকার হাতাহাতি হয়। কারণ, আমি চাচ্ছিলাম না, সেই অবস্থায় কেউ আমার ভিডিও করুক। এডিসি সানজিদার দাবি, ঘটনার দিন তার স্বামী আজিজুল হক মামুন প্রথম এডিসি হারুন অর রশিদকে আঘাত করেন।

সানজিদা আফরিন আজিজুল হক বিসিএস কর্মকর্তা আজিজুল হক মামুনের স্ত্রী। তিনি ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) ক্রাইম বিভাগে অতিরিক্ত উপকমিশনার (এডিসি) হিসেবে দায়িত্বে রয়েছেন।

উল্লেখ্য, গত ৯ সেপ্টেম্বর রাতে এডিসি আফরিনের স্বামী আজিজুল হক মামুনের সঙ্গে এডিসি হারুনের বাগবিতণ্ডা ও হাতাহাতি হয়। মামুনের সঙ্গে ছিল ছাত্রলীগের দুজন নেতা। পরে পুলিশ ফোর্স নিয়ে এসে ছাত্রলীগের দুই নেতাকে শাহবাগ থানায় নিয়ে বেদম মারধর করেন এডিসি হারুন অর রশীদ। দুই ছাত্রলীগ নেতা হলেন ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক আনোয়ার হোসেন নাঈম, বিজ্ঞান বিষয়ক সম্পাদক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদুল্লাহ হলের সাধারণ সম্পাদক শরীফ আহমেদ।

পরদিন ১০ সেপ্টেম্বর এডিসি হারুনকে তার ওপর অর্পিত দায়িত্ব থেকে প্রত্যাহার করা হয়। পরবর্তীতে, তাকে ডিএমপি থেকে আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নে (এপিবিএন) বদলি করা হয়। এরপর ১১ সেপ্টেম্বর এই বিতর্কিত পুলিশ কর্মকর্তাকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। সর্বশেষ ১২ সেপ্টেম্বর তাকে পুলিশ সদর দপ্তর থেকে সরিয়ে রংপুর রেঞ্জ ডিআইজির কার্যালয়ে সংযুক্ত করা হয়েছে।

/এএম

Exit mobile version