Site icon Jamuna Television

৩১ বছর ধরে বিনামূল্যে পড়াচ্ছেন রশিদ মাস্টার, নিজ খরচে চালান পাঠশালা

চাঁপাইনবাবগঞ্জ করেসপন্ডেন্ট:

গত তিন দশক ধরে চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার শিবগঞ্জ উপজেলার দরিদ্র ও ঝরে পড়া শিক্ষার্থীদের বিনামূল্যে পড়াচ্ছেন আব্দুর রশিদ। গড়ে তুলেছেন ‘রশিদ মাস্টারের পাঠশালা’। সীমান্তবর্তী প্রত্যন্ত অঞ্চলটির শিক্ষার বাতিঘর এখন তিনি। বর্তমানে তার পাঠশালায় পড়ছেন ১২৫ জন শিক্ষার্থী।

রশিদ মাস্টার পেশায় একজন পল্লী চিকিৎসক। নানা প্রতিবন্ধকতায় উচ্চশিক্ষা গ্রহণ করতে পারেননি তিনি। তাই হতদরিদ্র ও ঝরে পড়া শিক্ষার্থীরা যাতে তার মতো শিক্ষাবঞ্চিত না হন সেজন্য তিনি নিজেই গড়ে তুলেছেন পাঠশালা। ৩১ বছর ধরে শিবগঞ্জের তারাপুর গ্রামে অবৈতনিক শিক্ষা দিচ্ছেন ৭৬ বছর বয়সী এই শিক্ষা অনুরাগী।

তার পাঠশালা থেকে এ পর্যন্ত ৯ হাজারের অধিক ছাত্র-ছাত্রী শিক্ষা নিয়েছেন। তারা এখন কর্মক্ষেত্রে নানা অবদান রাখছেন। নিজের উপার্জিত অর্থের অধিকাংশই তিনি ব্যয় করেন পাঠশালার শিক্ষার্থীদের পেছনে। বর্তমানে দুই শিফটে ১২৫ জন শিক্ষার্থীকে পড়াচ্ছেন তিনি। গরীব ও বয়স্কদের জন্য রয়েছে নাইট স্কুলও।

আব্দুর রশিদ মাস্টার বলেন, পড়শোনো থেকে যারা ঝরে পড়ে, অর্থ নেই, স্কুলে পড়তে পারে না, বেতন দিতে পারে না কিংবা প্রাইভেট পড়তে পারে না, এমন ছেলে-মেয়েদের আমি পড়াই। দরিদ্র শিক্ষার্থীদের পড়াই।

তিনি আরও বলছিলেন, আমি খুব বেশি শিক্ষা অর্জন করতে পারিনি। সেজন্য আমি চাই না, কেউ শিক্ষা নেয়া থেকে বঞ্চিত হোক। নিজের আয়ের অধিকাংশ অর্থ এদের পেছনে ব্যয় করি। এটাই আমার তৃপ্তি।

তার পাঠশালার এক শিক্ষার্থী বলেন, আমার পরিবারের কেউ পড়ালেখা করেনি। আমরা গরিব। সেজন্য বাবা-মা আমাকে পড়াচ্ছিল না। রশিদ স্যারের কাছে পড়তে টাকা লাগে না। এখানে দুই বছর ধরে পড়ছি।

এই পাঠশালার সাবেক এক শিক্ষার্থী বলেন, রশিদ স্যারের কাছ থেকে পড়ালেখা শিখেছি। তিনি অনেক সহযোগিতা করেছেন। এখন একটি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করছি।

এদিকে, তার শিক্ষার্থীর সংখ্যা ও পরিসর বৃদ্ধি পাওয়ায় এ পাঠশালায় সহযোগী হিসেবে কাজ করছেন একই এলাকার অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক সচিন্দ্র নাথ দাস ও রশিদ মাষ্টারের দুই ছেলে।

স্কুলটিকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দিতে সহায়তার আশ্বাস দিয়েছেন শিবগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আবুল হায়াত। বললেন, ঝরে পড়া শিক্ষার্থীদের মধ্যে তার আলো ছড়িয়ে দেয়ার প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকুক। যেকোনো সহযোগিতা বা সাহায্যের প্রয়োজনে তিনি আমাদেরকে বললে তাকে যথাসাধ্য সহযোগিতা করবো।

/এনকে/এমএন

Exit mobile version