Site icon Jamuna Television

মাশরাফী ও সাহেলের জন্মদিন আজ

২০২০ সালে এভাবেই জন্মদিন উদযাপন করতে দেখা গেছে বাবা-ছেলেকে। ছবি: সংগৃহীত।

আজ ৫ অক্টোবর। বাংলাদেশ ক্রিকেটের রূপকথার নায়ক এবং বাংলাদেশের ওয়ানডে ক্রিকেট ইতিহাসের সবচেয়ে সফল অধিনায়ক মাশরাফী বিন মোর্ত্তজার জন্মদিন। আজকের দিনে জীবনের ৩৯ বসন্ত পেরিয়ে ৪০তম বসন্তে পৌঁছে গেলেন ‘ক্যাপ্টেন ফ্যান্টাস্টিক’। কাকতালীয়ভাবে, ২০১৪ সালের আজকের এই দিনে মাশরাফীর পুত্র সাহেলেরও জন্মদিন।

১৯৮৩ সালের আজকের দিনে নড়াইলের চিত্রা নদীর পাড়ে মহিষখোলা গ্রামে নানার বাড়িতে জন্মেছিলেন এই কিংবদন্তি ক্রিকেটার। মাতামহ ডাকনাম রাখেন কৌশিক। তিনি নড়াইলে এই নামেই সমধিক পরিচিত। নানি-মামাদের কোলে-পিঠেই বড় হয়েছেন তিনি। মাশরাফির বাবা গোলাম মোর্ত্তজা ও মা হামিদা মোর্ত্তজা।

বাইক প্রিয় মোর্ত্তজাকে সবাই হাসিখুশি আর উদারচেতা মানুষ হিসেবেই জানে। নিজের শহরে তিনি প্রচণ্ড রকমের জনপ্রিয়। শহরের সরকারি ভিক্টোরিয়া কলেজে পড়ার সময় তার পরিচয় হয় সুমনা হক সুমির সঙ্গে। সেই সূত্রেই পরিণয় অতঃপর ২০০৬ সালে বিয়ে। তাদের ঘর আলোকিত করেছে এক মেয়ে ও এক ছেলে। বড় মেয়ের নাম হুমায়রা ও ছোট ছেলের নাম সাহেল।

গতিময় ও আক্রমণাত্মক বোলিং দিয়ে অনূর্ধ-১৯ দলে থাকতেই ওয়েস্ট ইন্ডিজের সাবেক ফাস্ট বোলার অ্যান্ডি রবার্টসের নজর কেড়েছিলেন ম্যাশ। অ্যান্ডি রবার্টস তখন অনূর্ধ-১৯ দলের অস্থায়ী বোলিং কোচের দায়িত্বে ছিলেন। এরপরে রবার্টসের পরামর্শেই মাশরাফিকে বাংলাদেশ এ-দলে অন্তর্ভুক্ত করা হয়।

বাংলাদেশ এ-দলের হয়ে প্রথম ম্যাচ খেলার পরেই জাতীয় দলে জায়গা করে নেন জনপ্রিয় এই ক্রিকেটার। ২০০১ সালের ৮ নভেম্বর বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে জিম্বাবুয়ের বিরুদ্ধে টেস্ট ক্রিকেটে অভিষেক হয় তার। বৃষ্টির বাগড়ায় ম্যাচটি অমীমাংসিত থাকলেও অভিষেকেই নিজের জাত চিনিয়েছিলেন ম্যাশ। অভিষেকে ম্যাচে ৪ উইকেট নিয়েছিলেন তিনি।

একই বছরের ২৩ নভেম্বর ওয়ানডে ক্রিকেটেও অভিষেক হয় মাশরাফির । একই সাথে অভিষেক হয় ফাহিম মুনতাসির ও তুষার ইমরানের। অভিষেক ম্যাচে বোলিংয়ে ৮ ওভার ২ বলে ২৬ রান দিয়ে নিয়েছিলেন ২ উইকেট।

ব্যক্তিগত তৃতীয় টেস্ট খেলার সময় হাঁটুতে আঘাত পান ম্যাশ। দু’ বছরের জন্য ছিটকে যান ক্রিকেটের বাইরে। ইনজুরি থেকে ফিরে ২০০৪ সালে ভারতের বিপক্ষে খেলার সময় রাহুল দ্রাবিড়কে অফ-স্ট্যাম্পের বাইরের একটি বলে আউট করে স্বরূপে ফেরার আভাস দেন এই কিংবদন্তি। ওই সিরিজে বোলিং বৈচিত্রে শচীন টেন্ডুলকার ও সৌরভ গাঙ্গুলিকেও আউট করার সুযোগ তৈরি করেছিলেন তিনি। তবে ফিল্ডারদের ব্যর্থতায় তার উইকেট পাওয়া হয়নি। সেই সিরিজে ভারতের বিপক্ষে একটি একদিনের আন্তর্জাতিক ম্যাচে অবিস্মরণীয় জয়ের নায়কও ছিলেন তিনি।

২০০৬ সালে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে টেস্ট সিরিজে বাংলাদেশি বোলারদের মধ্যে তার গড় ছিল সবচেয়ে আকর্ষণীয়। অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে কার্ডিফের সেই নাটকীয় জয়েও তার অবদান ছিল অসামান্য। ওই ম্যাচে বিশ্বখ্যাত মারকুটে ব্যাটসম্যান অ্যাডাম গিলক্রিস্টকে শূন্য রানে আউট করেন তিনি। ম্যাচে দশ ওভার হাত ঘুড়িয়ে মাত্র ৩৩ রান দেন ক্যাপ্টেন ফ্যান্টাস্টিক।

২০১১ সালে দেশের মাটিতে অনুষ্ঠিত বিশ্বকাপ খেলতে পারেননি ম্যাশ। ঘরের মাঠে বিশ্বকাপ খেলতে না পারলেও ২০১৫ সালে বিশ্বকাপে বাংলাদেশকে নেতৃত্ব দিয়েছেন তিনি। দেশের ক্রিকেটকে নিয়ে গেছেন অনন্য এক উচ্চতায়। তার নেতৃত্বে গ্রুপপর্বে আফগানিস্তান ও ইংল্যান্ডকে হারিয়ে প্রথমবারের মতো কোয়ার্টার ফাইনালে ওঠে বাংলাদেশ। সেখানে ভারতের সঙ্গে বিতর্কিত হারে বিদায় নেয় টাইগাররা।

তার নেতৃত্বেই ঘরের মাঠে ১৬ বছর পর পাকিস্তানের বিপক্ষে জয় ছিনিয়ে নেওয়ার পাশাপাশি হোয়াইটওয়াশ করে টাইগাররা। বিশ্বকাপে বিতর্কিতভাবে হেরে যাওয়া ভারতের বিপক্ষে ঘরের মাঠে সিরিজও জেতান তিনি। সবশেষ দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষেও তার নেতৃত্বে বাংলাদেশ সিরিজ জিতে নেয়।

বাংলাদেশের ক্রিকেট ইতিহাসে ওয়ানডে র‍্যাংকিংয়ে সবচেয়ে ভালো অবস্থান ছিল তার নেতৃত্বাধীন সময়ে। দশ বছর পর তার আমলেই চ্যাম্পিয়নস ট্রফিতে খেলার সুযোগ পায় বাংলাদেশ। দ্বিতীয় মেয়াদের নেতৃত্বে বাংলাদেশ ক্রিকেটকে তিনি এনে দিয়েছিলেন অভাবনীয় সাফল্য।

দেশের ক্রিকেট ইতিহাসের সফলতম অধিনায়ক ও পেসার তিনি। ক্যারিয়ার শেষ হওয়ার আগেই রাজনীতিতে নাম লিখিয়েছেন তিনি। বর্তমানে নড়াইল-২ আসনের সংসদ-সদস্য (এমপি) হিসেবে সবার আস্থাভাজন হয়ে উঠেছেন।

/এমএইচ

Exit mobile version