
হামাস কমান্ডার মোহাম্মদ দেইফের পুরনো ছবি।
এক চোখে দেখেন না, অচল একটি পাও। হুইলচেয়ার ছাড়া চলাফেরা করতে পারেন না। শারীরিক প্রতিবন্ধী এই ফিলিস্তিনিই কাঁপিয়ে দিয়েছেন ইসরায়েলি প্রতিরক্ষার ভিত্তি। তার নাম মোহাম্মদ দেইফ। চলৎশক্তিহীন এই মানুষটিই হামাসের সামরিক শাখার প্রধান। বলা হচ্ছে, ইসরায়েলে এই ঐতিহাসিক অভিযানের মূল মাস্টারমাইন্ড তিনিই। চোখের আড়ালে থাকা এই ব্যক্তি কয়েক দশক ধরে ইসরায়েলের মোস্ট ওয়ান্টেড তালিকায় আছেন। দফায় দফায় চেষ্টা করেও তাকে ধরতে পারেনি দুর্ধর্ষ গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদ। খবর দ্য ওয়াল স্ট্রিট জার্নালের।
এবার হামলা চালিয়ে নতুন করে আলোচনায় আসলেও দীর্ঘদিন ধরেই অবশ্য ইসরায়েলের ত্রাস দেইফ। অন্তত সাতবার তাকে হত্যার চেষ্টা চালিয়েও ব্যর্থ হয়েছে তেলআবিব। ইসরায়েলেরই এক হামলায় দৃষ্টিশক্তি, এক হাত ও পা হারিয়েছেন তিনি। এরপর থেকে হুইলচেয়ারে বসেই ফাঁকি দিচ্ছেন মোসাদের মতো দুর্ধর্ষ গোয়েন্দা সংস্থাকে।
ফিলিস্তিনিদের কাছে ব্যাপক জনপ্রিয় এই দেইফ। এমনকি হামাস প্রধান ইসমাইল হানিয়ার চেয়েও বেশি জনপ্রিয় তিনি। অথচ তার অস্তিত্ব ছায়ার মতো। কয়েক দশক ধরে লোকচক্ষুর আড়ালে আছেন এই হামাস নেতা। ইসরায়েলের কাছে তার যে তিনটি ছবি আছে, তার মধ্যে একটি তার ২০ বছরের যুবক বয়সের। আর বাকি দুটির একটিতে মুখে মাস্ক, অন্যটিতে দেখা যায় কেবল ছায়া।
পশ্চিমাদের দাবি, হামাসের অন্য অনেক শীর্ষ নেতা বিভিন্ন দেশ থেকে দল পরিচালনা করলেও, দেইফ থাকেন গাজাতেই। গোপন কোনো টানেল থেকে নেতৃত্বে দেন হামাসের কাশেম বিগ্রেডের।
১৯৬৫ সালে খান ইউনিস রিফিউজি ক্যাম্পে জন্ম নেয়া দেইফের আসল নাম মোহাম্মদ মাসরি। লেখাপড়া করেছেন গাজার ইসলামিক বিশ্ববিদ্যালয়ে। হামাসে যোগ দেয়ার পর দ্রুতই শীর্ষ নেতৃত্বে জায়গা করে নেন তিনি। কাশেম বিগ্রেডের প্রধান হয়েই মাটির নিচে টানেল স্থাপনে জোর দেন তিনি। এছাড়া বোমা তৈরির বিশেষজ্ঞ দলও গড়ে তোলেন মোহাম্মদ দেইফ। ১৯৮৯ সালে ইসরায়েলিদের কাছে গ্রেফতার হওয়ার পর ১৬ মাস আটকও ছিলেন দেইফ। ডজনের বেশি ইসরায়েলিকে হত্যার অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, দুই বছর ধরে ইসরায়েলের ভেতরে ঢুকে হামলা চালানোর এই পরিকল্পনা করেছেন দেইফ। পশ্চিমারা বলছে, এই হামলায় ইরান অর্থায়ন করলেও তারা জানতো বড় কিছু ঘটতে যাচ্ছে, তবে কী ঘটবে আর কবে ঘটবে তা কেবল জানতেন দেইফের বিশ্বস্ত কয়েকজন।
কঠোর গোপনীয় জীবনযাপন করা দেইফের ভাষণ হামলার দিন শনিবার প্রচারিত হয় হামাসের টেলিভিশনে। সেদিনই ফিলিস্তিনের মানুষ বুঝেছিল, বড় কিছু ঘটতে যাচ্ছে। গাজার বাসিন্দারা বলছেন, যে দুঃসাহস দেখিয়েছেন এই হামাস নেতা, তা তাদের কাছে ইতিহাস হয়ে থাকবে।
এসজেড/



Leave a reply