Site icon Jamuna Television

বাংলাদেশের মানবাধিকার বিষয়ে ‘অপপ্রচার’ নিয়ে ইউরোপীয় পার্লামেন্টে সভা

বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে অপপ্রচার ও বিকৃত তথ্য উপস্থাপন বন্ধে ইউরোপীয়ান পার্লামেন্টে একটি আলোচনাসভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। কিছু এনজিও ইচ্ছাকৃতভাবে ভুল তথ্য সরবরাহ করেছে বলে অভিযোগ করেছেন বক্তারা।

বাংলাদেশ ইউরোপীয় পার্লামেন্টের সদস্য ম্যাক্সিমিলিয়ান ক্রাহ এবং যুক্তরাজ্যভিত্তিক বাংলাদেশি গবেষণা প্রতিষ্ঠান স্টাডি সার্কেলের যৌথ পরিচালনায় বুধবার (১১ অক্টোবর) এ সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় মূল আলোচক ছিলেন ড. ম্যাক্সিমিলিয়ান ক্রাহ। তিনি মানবাধিকার সংস্থাগুলোর প্রশ্নবিদ্ধ ভূমিকা নিয়ে আলোচনা করেন।

ড. ম্যাক্সিমিলিয়ান ক্রাহ বলেছেন, এনজিও মানে বেসরকারি সংস্থা, কিন্তু প্রায় সব এনজিওরই একটি রাজনৈতিক উদ্দেশ্য রয়েছে। কিছু সংস্থা হয়তো নিজস্ব স্বার্থে তথ্য বিকৃত করে প্রচার করে, যার ফলাফল আরও ভয়াবহ হয়। সাধারণত এ ঘটনাগুলো দু’বার চেক করা হয় না। কিন্তু আমি সেগুলো অন্তত দুবার চেক করার চেষ্টা করি। তাই, আমি দূতাবাসগুলোকে তাদের যুক্তি দেওয়ার সুযোগ দিই।

তিনি বলেন, বাংলাদেশের ক্ষেত্রেও এমনটি হয়েছে। ঘটনাটি বিশ্বাসযোগ্য ছিল না, কারণ একজন এনজিওকর্মী পুলিশি সহিংসতার বিষয়ে ভুল বিবৃতি দিয়েছিলেন। এতে সত্যিকারের দাঙ্গা তৈরি করার ঝুঁকি ছিল এবং এই ধরনের ‘ভুল তথ্য’ ইউরোপেও শাস্তিযোগ্য। সুতরাং, এমন আচরণের বিচার করার কারণে আমরা বাংলাদেশিদের দোষারোপ করছি অথচ আমরা ইউরোপে তাই করি, এই বিষয়টি গ্রহণযোগ্য নয়।

ক্রাহ বলেন, বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই বিদেশিদের দ্বারা কমিশন করে ইউরোপীয় ইউনিয়নের বৈদেশিক নীতিকে প্রভাবিত করার প্রচেষ্টা চলছে- এটি এমন একটি ঘটনা যা ইইউ প্রতিষ্ঠানগুলো বর্তমানে সমাধান করতে চাইছে।

তিনি বলেন, বিশ্বে পশ্চিমা পররাষ্ট্রনীতির স্বার্থকে উন্নীত করার জন্য মানবাধিকার একটি শক্তিশালী হাতিয়ার। এর মানে হলো যে, আপনাকে সচেতন হতে হবে। কারণ মানবাধিকার ইস্যুগুলো আবেগিক ইস্যু এবং এর জন্য নিবেদিত এনজিও রয়েছে। তবে আপনাকে এটিও সচেতন থাকতে হবে যে, এটি এখন বিশ্বে পশ্চিমের পররাষ্ট্রনীতিকে এগিয়ে নেওয়ার সবচেয়ে শক্তিশালী হাতিয়ার।

সভায় বক্তা হিসেবে ছিলেন রাজনৈতিক বিশ্লেষক ক্রিস ব্যাক বার্ন। আরও উপস্থিত ছিলেন রাজনৈতিক বিশ্লেষক ক্রিস র্ল্যাকবার্ন, আইনজীবী ও আন্তর্জাতিক অপরাধ আইন বিশেষজ্ঞ রশিদ রায়হান বিন এবং স্টাডি সার্কেল লন্ডনের চেয়ারম্যান সৈয়দ মোজাম্মেল আলী।

আলোচনায় উঠে আসে, ২০১৩ সালের ৫ মে রাজধানীর মতিঝিলে হেফাজতের সমাবেশের বিষয়টি। হেফাজতকে সন্ত্রাসী গোষ্ঠী উল্লেখ করে তাতে বলা হয়, ২০১৩ সালে তারা ইসলামিক স্টেটের দাবিতে রাস্তায় নেমে আসে। মূলত তাদের সমর্থকরা হচ্ছে মাদারাসায় পাঠ নেয়া শিক্ষার্থীরা। তাদের এই ইসলামিক স্টেট হবে তালেবানদের মতো। নারী ও শিক্ষাসহ সবকিছু বিষয়ে তাদের দাবিগুলো ছিল হুবুহু তালেবানদের প্রস্তাবের মতোই।

এ বিষয়ে রশিদ রায়হান বিন বলেন, দুর্ভাগ্যবশত, এ সময় অন্যান্য ইসলামিক আলেমরাও তাদের (হেফাজত) সমর্থন দেয়। আর তারা রাস্তায় নামলে বাংলাদেশে শাটডাউনের মতো পরিস্থিতি তৈরি হয়। তখন গণমাধ্যমের উপস্থিতিতে এসব গ্রুপকে ছত্রভঙ্গ করে দেয় সরকার। কিন্তু হুট করে শোনা যায়, এ ঘটনায় ২০ হাজার লোক নিখোঁজ। পরে আবার বলা হয়, ২০ হাজার নয়, তা হচ্ছে ৬৩। অধিকার দাবি করে, এ ঘটনায় ৬৩ লোক নিখোঁজ রয়েছেন।

অধিকারের বিষয়ে তিনি আরও বলেন, অধিকার এমন একটি মানবাধিকার সংস্থা, যেটির নেতৃত্বে থাকা ব্যক্তি বিএনপির শাসনামলে অ্যাটর্নি জেনারেলের (ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল) দায়িত্ব পালন করেন। তার রাজনৈতিক উদ্দেশ্য থাকতে পারে। নিখোঁজদের এ তথ্য জানার পর শুরুতে আমি আগ্রহ জানাই। ভেবেছিলাম, এটি সত্য হলে এ বিষয়ে ‘অ্যাড্রেস’ করা উচিত। কিন্তু আমি হতাশ হলাম, নিখোঁজ ব্যক্তিদের গল্পটি বানানো ছিল। আর তা উঠে এসেছে।

রশিদ রায়হান বিন এ সময় উল্লেখ করেন, আন্তর্জাতিক ও জাতীয় পর্যবেক্ষকদের উচিত বাংলাদেশের মানবাধিকার বিষয়ে প্রচারিত সংবাদগুলোর তথ্য যাচাই করে দেখা। যেন কেউ কোনও বিকৃত সংবাদের ফাঁদে না পড়ে।

সভায় মোজাম্মেল আলী বাংলাদেশের বর্তমান মানবাধিকার পরিস্থিতি ও উন্নয়নের চিত্র সংক্ষিপ্ত আকারে তুলে ধরেন।

/এমএন

Exit mobile version