Site icon Jamuna Television

‘হেড’এ ভর করেই ছুটলো অজিদের দুনিয়া সেরার জয়রথ

হেডের ইনিংসটি মনে রাখবে ক্রিকেট বিশ্ব। ছবি: এএফপি

আল মাহফুজ:

হাত ভেঙে যাওয়ায় বিশ্বকাপে তার খেলার নিশ্চয়তা ছিল না। লিগপর্বে অস্ট্রেলিয়ার প্রথম ৫ ম্যাচে ছিলেন না এই মারকুটে ব্যাটার। তবু টিম ম্যানেজমেন্ট তাকে দলে রেখেছিল। অজিরা জানতো, হেড বড় মঞ্চের খেলোয়াড়। কামিন্সরা জানতো, হেড মানে গর্দান উঁচু করে খেলে যাওয়া, দলকে জেতানো।

প্রতিদান কি অসাধারণভাবে ফিরিয়ে দিলেন তিনি! নিরানব্বইতে সেমি ও ফাইনালের জয়ের নায়ক ছিলেন কিংবদন্তি শেন ওয়ার্ন। ২০২৩’এ তার মতো পারফরম্যান্স উপহার দিলেন ট্রাভিস হেড। বিশ্বকাপ সেমিফাইনালে ২ উইকেট ও ৪৮ বলে ‘ম্যাচসেরা’ ৬২ রান। আর ১৯ নভেম্বর রাতের ফাইনালে খেললেন অবিস্মরণীয় এক ইনিংস। ভারতের ২৪০ রান তাড়া করতে নেমে ৪৭ রানে ৩ উইকেট হারিয়ে যখন বিপদে অস্ট্রেলিয়া, সেখান থেকে দলকে জয়ের বন্দরে ভিড়িয়েছে হেডের ১২০ বলে ১৩৭ রানের ইনিংস। ম্যান অব দ্য ম্যাচের পুরস্কারও ওঠে তার হাতে। অনন্য পারফরম্যান্স উপহার দিয়ে বুঝিয়ে দিয়েছেন– তিনি শুধু বড় ম্যাচের খেলোয়াড়ই নন, বরং বিশ্বকাপ জয়েরই নায়ক।

ফাইনাল ম্যাচ শেষে ট্রাভিস হেড জানালেন সে কথাই– বিশ্বকাপ জয়ী দলের অংশ হতে পেরে নিজেকে গর্বিত মনে করছি। ঘরে সোফায় বসে বিশ্বকাপ দেখার চেয়ে মাঠে খেলাটা অনেক ভালো।

চতুর্থ উইকেটে হেড ও মারনাস লাবুশেনের ২১৫ বলে ১৯২ রানের জুটি ভিত গড়ে দিয়েছিল অস্ট্রেলিয়ার ফাইনাল জয়ের। এতো চাপের মধ্যে এটা করলেন কীভাবে? এ প্রসঙ্গে হেড বলেন, আমি শুরুতে একটু নার্ভাস ছিলাম। কিন্তু লাবুশেন সব চাপ শুষে নিয়ে অসাধারণ খেলেছে। ফাইনালে তার সতীর্থ মারনাস লাবুশেনেরও অবদান কম নয়। তিনি খেলেন ১১০ বলে অপরাজিত ৫৮ রানের ইনিংস।

এই হেড অন্য ধাতুতে গড়া খেলোয়াড়। ঠিক যেমনটা হয়ে থাকে ‘অজি ব্লাড’। কিছু প্রমাণ দেয়া যাক– অ্যাশেজ অভিষেকে তিনি ১৫২ রানের ইনিংস খেলে হয়েছিলেন ম্যাচসেরা। চলতি বছরের ‘টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ ফাইনাল’-এ এই ভারতের বিপক্ষেই সেঞ্চুরি হাঁকিয়েছিলেন এবং হয়েছিলেন ম্যাচসেরাও। বিশ্বকাপ ডেব্যুতেও ৬৭ বলে ১০৯ রানের বিধ্বংসী ইনিংস খেলেছিলেন। সেমিফাইনাল ও ফাইনালের পারফরম্যান্সের কথা তো আগেই বলেছি।

২০০৩ বিশ্বকাপে রিকি পন্টিং ও ২০০৭ বিশ্বকাপে অ্যাডাম গিলক্রিস্টের পর এবার হেড হলেন বিশ্বকাপ ফাইনালে তৃতীয় অস্ট্রেলিয়ান সেঞ্চুরিয়ান। আর বিশ্বকাপ ফাইনালের ইতিহাসে রান তাড়া করতে নেমে সেঞ্চুরি ও জয়ের কথা বললে এতোদিন শুধু ১৯৯৬ সালের অরবিন্দ ডি সিলভার নাম আসতো। আজ থেকে আসবে ট্রাভিস হেডের নামও।

এই বিশ্বকাপের সেমিফাইনাল ও ফাইনালে যা করলেন, তাতে বলা যায়, হেডের অবদান অস্ট্রেলিয়ান ক্রিকেট কখনও ভুলবে না। ট্রফি উঁচিয়ে ধরার এই ম্যাচে হেডের অনবদ্য ইনিংস বিশ্বক্রিকেটও হয়তো ভুলবে না। আমরা তাই কবিতার ভাষায় বলতেই পারি– ‘হেড’এ ভর করেই এবার ছুটলো অজিদের দুনিয়া সেরার জয়রথ। সেই রথের মুকুটে নিশ্চয়ই ট্রাভিস হেড নামটা সোনার অক্ষরে লেখা হলো..

Exit mobile version