Site icon Jamuna Television

শতবর্ষে ‘মৈমনসিংহ গীতিকা’

ছবি: সংগৃহীত

হোসাইন শাহীদ, ময়মনসিংহ:

তৎকালীন ভারতবর্ষের অন্যতম বৃহৎ জেলা ছিল ময়মনসিংহ। এই অঞ্চলের মানুষের প্রেম, দুঃখ-বেদনার চিত্র প্রকাশ পেতো নানা পালা গানের মাধ্যমে। এসব লোকসাহিত্য সংগ্রহ করে ১৯২৩ সালের ২৪ নভেম্বর প্রকাশ করা হয় মৈমনসিংহ গীতিকা। আজ মঙ্গলবার (২৪ নভেম্বর) মৈমনসিংহ গীতিকা প্রকাশের ১০০ বছর।

মৈমনসিংহ গীতিকার মহুয়া পালা ছিল জমিদার ও বেদের মেয়ের প্রেম কাহিনীর নৃত্যনাট্য রুপ। যেটিতে ছিল রোমান্টিকতায় পরিপূর্ণ। আমরা কি মনে রেখেছি চন্দ্র কুমার দে, দিনেশ চন্দ সেনকে? গীতিকার চর্চাই বা কতটুকু করেছি? নতুন প্রজন্ম কি কাজে লাগাতে পেরেছে নিজেদের লোকসাহিত্যের সম্পদ?

এ বিষয়ে নৃত্যশিল্পী ও প্রশিক্ষক মানস তালুকদার বলেন, মহুয়া নদের চাঁদকে বলে তুমি জলে ডুবে মরো। তারপরে সে মহুয়াকে বলে তুমি যদি গহীন গাঙ হও তাহলে আমি সেই জলে ডুবে মরতে পারি। এতেই বোঝা যায়, আমাদের ময়মনসিংহ গীতিকা কতোটা প্রেম সমৃদ্ধ।

কলকাতার দীনেশ চন্দ্র সেন মৈমনসিংহ ও পূর্ব বঙ্গ গীতিকায় মোট ৫৫টি গাথা সংকলন করেন। এর মধ্যে কাজল রেখা, দশ্যু কেনারাম, চন্দ্রাবতি, মহুয়া মলুয়া’সহ ১০টি পালা মৈমনসিংহ গীতিকায় পাওয়া যায়। এই পালাগুলো সংগ্রহ করেন চন্দ্র কুমার দে। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের দিনেশ চন্দ্রের সম্পাদনায় ১৯২৩ সালে আজকের এই দিনে প্রকাশ করেন মৈমনসিংহ গীতিকা। ২৩টি ভাষায় মুদ্রিত এই গীতিকা সাড়া ফেলে পৃথিবীজুড়ে।

বিষয়টি নিয়ে লেখক ও লোকসাহিত্য গবেষক স্বপন ধর বলেন, ১৯২৩ সালে এটি যখন ইংরেজিতে অনুবাদ হয় তখন ইতালি-স্পেন-ফ্রান্স, আমেরিকা-রাশিয়া-ইংল্যান্ডসহ বিভিন্ন দেশে ছড়িয়ে পড়ে। এরপর তারা বিস্মৃত হতে থাকে। আমাদের সাহিত্য এমনই সমৃদ্ধ।

তবে সেসব সাহিত্য বাঁচিয়ে রাখার জন্য নেই তেমন কার্যকর কোনো উদ্যোগ। যাদের জন্য এই অর্জন তাদেরকেও কতটুকু মনে রেখেছি আমরা সে প্রশ্ন থেকে যায়।

এ বিষয়ে লোকজ সংস্কৃতি সংগ্রাহক রেজাউল করিম আসলাম বলেন, পাঁচ বছর আগে আমি স্থানীয় কর্তৃপক্ষের কাছে লিখিত আবেদন দিয়েছি। কিন্তু আজ পর্যন্ত এ ব্যাপারে কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি।

একটি দেশের নিজস্ব সংস্কৃতিকে জানতে ও বুঝতে ফোকলোর অপরিহার্য হলেও দেশের স্কুল-কলেজ পর্যায়ে অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি ফোকলোর বিষয়টি। ফোকলোর অন্তর্ভুক্ত করা হলেই কেবল পূর্ণাঙ্গভাবে নতুন প্রজন্মের কাছে ময়মনসিংহ গীতিকা বা এই জাতীয় স্বদেশী সাহিত্যের গুরুত্ব তুলে ধরা সম্ভব বলে মনে করেন বিশ্লেষকরা।

বিষয়টি নিয়ে দীনেশচন্দ্র সেনের প্রপৌত্রী অধ্যাপক দেবকন্যা সেন বলেন, চন্দ্র কুমার দে, দীনেশচন্দ্র সেন, ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ স্যার এদের যদি আমরা না জানি, আমাদের প্রজন্মকে যদি না জানাই তাহলে তারা কী শিখবে? সব নষ্ট হয়ে যাবে তো।

লোকসাহিত্য গবেষক ড. মো. আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, এগুলোর চর্চা না থাকলে তো হারিয়ে যাবে। কয়জনের বাড়িতে গিয়ে ময়মনসিংহ গীতিকা পাওয়া যাবে? আর এই প্রজন্মের কয়জন এসে এসব সম্পর্কে জানে?

/এনকে

Exit mobile version