Site icon Jamuna Television

অভিবাসন কমাতে আরও কঠোর যুক্তরাজ্য, নতুন ভিসা নীতিতে সুযোগ কমলো বিদেশিদের

যুক্তরাজ্যের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী ক্ষমতায় এসেই বলেছিলেন, তার সরকারের অন্যতম প্রধান লক্ষ্য হবে যুক্তরাজ্যে অভিবাসন কমানো। এনিয়ে বেশ কিছু উদ্যোগ এরই মধ্যে গ্রহণ করেছেন তিনি। এবার আরও কড়াকড়ি করা হলো ভিসা নীতিকে। এর ফলে কাজ নিয়ে যুক্তরাজ্যে যাওয়া, পড়ালেখা শেষে যুক্তরাজ্যে থাকা এমনকি সঙ্গী বা পরিবারকে যুক্তরাজ্যে নিয়ে আসার ক্ষেত্রেও বাড়লো জটিলতা। খবর বিবিসির।

মূলত, অভিবাসন কমাতে ব্রিটিশ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী জেমস ক্লেভারলি গতকাল মঙ্গলবার ব্রিটিশ পার্লামেন্টে নতুন পাঁচ দফা ভিসা আইনবিধির কথা ঘোষণা করেছেন। এ নিয়ে প্রধানমন্ত্রী সুনক নিজেই এক্স হ্যান্ডলে লিখেছেন, অভিবাসন খুব বেড়ে গেছে। আমরা আজ তা কমানোর জন্য কঠোর পদক্ষেপ ঘোষণা করছি। অভিবাসন যাতে ব্রিটেনের উপকারে লাগে, সেটা নিশ্চিত করা হবে। ভিন্ন আরেকটি পোস্টে তিনি লেখেন, আমরা অভিবাসনের গতি রুখতে সবচেয়ে বড় কাটছাঁট ঘোষণা করলাম। এর আগে কোনো প্রধানমন্ত্রী এটা করেননি। এই বদলটা দরকার ছিল, আমি এটা করবই।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ক্লেভারলি যে পাঁচ দফা আইনবিধির কথা ঘোষণা করেছেন, তার সবচেয়ে বড় দিক হলো কাজের জন্য ভিসাপ্রার্থীদের ক্ষেত্রে ন্যূনতম বেতনের ঊর্ধ্বসীমা বাড়িয়ে দেয়া। এতদিন পর্যন্ত ব্রিটেনে কাজের ভিসা পেতে গেলে বার্ষিক ন্যূনতম বেতন হতে হতো ২৬ হাজার ২০০ পাউন্ড। ২০১২ সাল থেকেই এই শর্ত চলে আসছিল। তবে এখন নতুন বিধিতে আগামী এপ্রিল থেকে ভিসাযোগ্য বেতন হবে বছরে ৩৮ হাজার ৭০০ পাউন্ড। অর্থাৎ কম বেতনের কাজ নিয়ে ব্রিটেনে যাওয়ার রাস্তা আর খোলা থাকবে না।

বহু বাংলাদেশি যে ব্রিটিশ রেস্তরাঁগুলোতে বা আতিথ্য (হসপিটালিটি) পরিষেবায় ছোট থেকে মাঝারি পদের কাজ নিয়ে ব্রিটেন যেতেন, সেই সুযোগও আর থাকবে না। স্বাস্থ্য এবং পরিচর্যা (কেয়ার) পরিষেবার ক্ষেত্রকে অবশ্য এ ব্যাপারে ছাড় দেয়া হয়েছে। তবে সেখানেও নতুন আইন স্পষ্ট বলছে, জীবনসঙ্গী বা পরিবারের অন্য কোনো সদস্যকে সঙ্গে আনা যাবে না। সে ক্ষেত্রে পরিচর্যা পরিষেবার কাজ নেয়ার ক্ষেত্রেও বিদেশিদের অনেকেই সমস্যায় পড়বেন।

শুধু বিদেশিদের ক্ষেত্রেই যে জীবনসঙ্গীকে সঙ্গে নেয়ার ব্যাপারে কড়াকড়ি আরোপ করা হচ্ছে তা নয়। কোনো ব্রিটিশ নাগরিক যদি কোনো বিদেশিকে বিয়ে করেন এবং তাকে ব্রিটেনে আনতে চান, সে ক্ষেত্রে তাকেও বার্ষিক ন্যূনতম আয়ের শর্ত পূরণ করতে হবে। অর্থাৎ বছরে ৩৮ হাজার ৭০০ পাউন্ড আয় না করে কোনো ব্রিটিশ নাগরিক তার জীবনসঙ্গীকে ব্রিটেনে নিয়ে আসতে পারবেন না। এত দিন এই আয়ের শর্ত ছিল বছরে ১৮ হাজার পাউন্ড।

অবশ্য বিদেশি শিক্ষার্থীদের ক্ষেত্রে পরিবারকে সঙ্গে আনার সুযোগ আগেই বন্ধ করে দিয়েছিল ঋষির সরকার। এবার নতুন নীতিতে বলা হয়েছে, গবেষণার মতো উচ্চশিক্ষার জন্য আসা শিক্ষার্থীরা ছাড়া বিদেশি শিক্ষার্থীরা তাদের জীবনসঙ্গীকে এ দেশে আনতে পারবেন না। তাছাড়া পড়ুয়াদের ভিসায় স্নাতক পাঠক্রম শেষ হওয়ার পরেও কাজ পাওয়ার নিশ্চয়তা ছাড়াই যে দুবছর পর্যন্ত ব্রিটেনে থাকা যেতো, সেটিও পুনর্বিবেচনা করা হবে।

আরও একটি দিক থেকে যুক্তরাজ্যে বিদেশি কর্মীরা ধাক্কা খেতে চলেছেন, যার মধ্যে পড়বেন বহু বাংলাদেশিও। কর্মীর ঘাটতি রয়েছে এমন পেশার তালিকা নতুন করে তৈরি করা হবে বলে জানিয়েছেন ক্লেভারলি। এত দিন ঘাটতি তালিকায় থাকা পেশায় ২০ শতাংশ কম বেতনে বিদেশি কর্মী নিয়োগ করা যেতো। সেই সুযোগ নতুন আইনে থাকছে না।

ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রীর স্পষ্ট ভাষ্য, তিনি যুক্তরাজ্যে মোট অভিবাসনের সংখ্যা কমাতে চান। গত বছরের অভিবাসী সংখ্যার যে হিসাব এ বছর জুনে প্রকাশিত হয়েছে, তাতে দেখা যাচ্ছে ৭ লক্ষ ৪৫ হাজার অভিবাসী এক বছরে ব্রিটেনে এসেছেন। ক্লেভারলি দাবি করেছেন, নতুন পাঁচ আইনে এই সংখ্যাটা অন্তত ৩ লক্ষ কমে যাবে। অভিবাসনের তথ্য-পরিসংখ্যান নিয়ে কাজ করা আন্তর্জাতিক সংস্থা মাইগ্রেশন অবজারভেটরির তরফে ম্যাডেলিন সাম্পশন বলছেন, এই নতুন আইন নানা দিক থেকেই দূরপ্রসারী প্রভাব ফেলবে।

এসজেড/

Exit mobile version