Site icon Jamuna Television

অমরত্বের এক বছর

ছবি: সংগৃহীত

‘লিওনেল মেসি হ্যাজ শেকেন হ্যান্ডস উইথ প্যারাডাইস’ লুসাইলের প্রেস বক্সে জনপ্রিয় ধারাভাষ্যকার পিটার ড্রুরির সেই উক্তি এখনও কোটি কোটি আর্জেন্টাইন সমর্থকদের গায়ে কাঁটা দিয়ে ওঠে। ড্রুরি কথাটা বাড়িয়ে বলেননি মোটেই। মেসি সেদিন হয়তো সত্যিই স্বর্গের দুয়ারে হাত রেখেছিলেন। কাতার বিশ্বকাপের ফাইনালে লিওনেল মেসির জাদুতেই ৩৬ বছরের প্রতীক্ষার অবসান ঘটে আকাশি-নীল শিবিরে। সেই সাথে ‘অমরত্ব’ পেয়ে যান আর্জেন্টাইন ফুটবল জাদুকর।

তিনি এমন একজন, যার হাতেই মানায় সোনালী ট্রফি। তার হাতেই ধরা দেয় অধরা বিশ্বকাপ শিরোপা। যে ট্রফিও হয়তো তার হাতে উঠতে পেরে রাজ্যের শান্তি পেয়েছে। এই ট্রফিই হয়তো অপেক্ষার প্রহর গুনছিলো এই ম্যাজিকাল মানুষটার হাতে উঠার।

আমি পাইলাম, ইহাকে পাইলাম, অবশেষে পাইলাম। মনে মনে হয়তো এমনটাই বলছে সোনালী রংয়ের ট্রফিটা। তার কাছে যাওয়ার জন্যই যে ব্যাকুল হয়ে ছিলাম, ধরা দিতে চেয়েছিলাম, কাছে গিয়েও তার সাথে ফেরা হয়নি ঘরে; অপেক্ষার পালা হয়েছে দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর। তবুও হাল ছাড়িনি, অপেক্ষার প্রহর গুনেছি, অবশেষে সেই ফুটবল জাদুকরের হাতেই শোভা পেলাম। যেন এমনটাই বলছিল সোনালী ট্রফি!

২০০৬ থেকে শুরু, ২০১০ হয়ে ২০১৪, পেরিয়েছে ২০১৮ বিশ্বকাপও। চোখের নোনা জল বারবার হতাশার রেশ তুলে গেছে। তার বিরস নয়নে চেয়ে থাকা বলে যায় একের পর এক বিরহের কবিতা। কানে বাজে বাশির করুণ সুর।

আর্জেন্টিনা ফাইনালে নামার আগে চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী সমর্থকটাও আনমনে বলে উঠেছে, সোনালী ট্রফিটা তার হাতেই উঠুক। তার হাতেই শোভা পায় এই অর্জন। আলবিসেলেস্তাদের ৩৬ বছরের অপেক্ষার অবসান তার হাত ধরেই, এর থেকে মধুর দৃশ্য আর কী হতে পারে ফুটবলের জন্য!

বার কয়েক একাই টেনেছেন। গ্লানি বয়েছেন নিজের কাধেই। হতাশায় আকাশী-সাদা জার্সিটাও তুলে রাখতে চেয়েছিলেন। কিন্তু আবারও ফিরেছেন সবুজ গালিচায়; দেশের টানে, ফুটবলের ভালোবাসার টানে। যে ফুটবলকে তিনি দিয়েছেন পুরোটা উজাড় করে, সেই ম্যাজিকাল মানুষটাকে এবার ফুটবল দিলো দু’হাত ভরে।

কাতার বিশ্বকাপের ফাইনালে নামার দিনই গড়েছেন রেকর্ড। একমাত্র ফুটবলার হিসেবে বিশ্বমঞ্চে খেলেছেন সর্বোচ্চ ২৬ ম্যাচ। শুধু তাই নয়। প্রথম ব্যক্তি হিসেবে এক বিশ্বকাপের সবক’টি নকআউট ম্যাচে গোল করেছেন। যার মধ্যে দু’টি করেছেন ফাইনালেই। আর্জেন্টিনার ৩৬ বছরের অপেক্ষার অবসান ঘটাতে যা ছিলো অন্যতম নিরামক।

বিশ্বকাপ ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি ম্যাচ, আর্জেন্টিনার হয়ে সবচেয়ে বেশি গোল, ভিন্ন পাঁচ বিশ্বকাপে অ্যাসিস্ট, বিশ্বকাপে অধিনায়ক হিসেবে সর্বোচ্চ ম্যাচ, সবচেয়ে বেশি মিনিট খেলা, সবচেয়ে বেশি গোল অবদানে মেসি একাই নিজের করে নেন কাতার বিশ্বকাপ।

বিশ্বকাপে ছুঁয়ে ফেলেছেন পেলেকে, সমান ১২ গোল করেছেন। করিয়েছেন সমান আট গোলও। নিজের শেষ বিশ্বকাপটাকে যে বেছে নিয়েছিলেন সবাইকে ছাড়িয়ে যেতে। সেই দৌড়ে দ্বিতীয়বারের মতো তার হাতে উঠেছে বিশ্বকাপের সেরার তকমা। গোল্ডেন বলও ছিল তারই অপেক্ষায়। ক্যারিয়ারে কত কী অর্জন তার! শোকেজে ভরা ট্রফি। এমন হেন অর্জন নেই যেনো তার ডেরায় নেই। কিন্তু আক্ষেপ অপেক্ষা সবকিছুই যেন মিলেছিল এক বিন্দুতে। যে বিন্দু মহিরুহের মতো ছড়িয়েছে দেশ থেকে দেশান্তরে।

সেই বিন্দু জমতে জমতে এক মহাসমুদ্রে রুপ নিয়েছে। যেই মহাসমুদ্রের একমাত্র নাবিক তিনি, যার হাতেই মানায় এই সোনালী ট্রফি, অবশেষে তার হাতেই উঠলো অধরা শিরোপাটা। এখন সপ্তামাকাশে উঠে গেছেন রোজারিওর ছোট্ট সেই বালক। পেয়েছেন অমরত্বের স্বাদ।

/আরআইএম

Exit mobile version