Site icon Jamuna Television

কেদার যাদব ফ্যাক্টর এবং ক্যাপ্টেন অফ দ্যা টুর্নামেন্ট

৬-০-২২-২
৯-০-৪১-২
প্রথম বোলিং ফিগারটা গত বছর চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির সেমিফাইনালের৷ দ্বিতীয়টা এশিয়া কাপের ফাইনালে৷ চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির সেমিফাইনালে তামিম-মুশফিকের ১২৩ রানের পার্টনারশিপ যখন জমে উঠছিল, তখনই পরপর তামিম-মুশফিক আউট। আর এবার, ১২০ রানের ওপেনিং পার্টনারশিপে আঘাত, এবং পরবর্তীতে মুশফিকুর রহিমের উইকেট। দু’ক্ষেত্রেই হন্তারক “কেদার যাদব”৷ আপাতদৃষ্টিতে পার্ট টাইমার, কিন্তু বাংলাদেশের বিরুদ্ধে মহেন্দ্র সিং ধোনির সব থেকে বড় অস্ত্র। (মাঠে অধিনায়কত্ব ধোনিই করেন)। চলুন একটু বোঝার চেষ্টা করি, কী হয় কেদার যাদবের বলে।

ফ্যাক্টর ৩ টা। ১ টা হচ্ছে স্পিড, আরেকটা লেন্থ, আরেকটা এই ধরনের বলে সাইকোলজি।


ছবিতে একটু খেয়াল করে দেখুন৷ কেদার যাদবের ৯০ শতাংশ বলগুলোই একটু খাটো লেন্থ এর (৪ মিটার থেকে ৮ মিটার) এবং বলের স্পিডগুলো ৫৫ মাইলের নিচে ৷ চাহাল, কুলদীপ এর গড় গতি ৫৫ মাইলের উপর এবং বেশিরভাগ বলই ফুল লেন্থ এর ৷ এবার আসি সাইকোলজিকাল ফ্যাক্টরে, এমন শর্ট লেন্থ এর ৫৫ মাইলের নিচে আসা বলগুলো স্বাভাবিকভাবেই ব্যাটসম্যান ব্যাকফুটে গিয়ে স্কয়ার অফ দ্যা উইকেট টেনে পুল বা কাট করবেন। নন ফরমাল ভাষায় বললে এগুলো ” মোয়া” বল। এই মোয়া বলগুলো যখন ২২ গজে আসে, তখন সাইকোলজিকালি ব্যাটসম্যানের মনে হয়, ” পেয়েছি এটা”৷ এই ধরনের বলে সিংগেল খেলাটা সাইকোলজিকালি একটু ফ্রাস্ট্রেটিং। টেস্টে ফিল্ডিং ছড়ানো অবস্থায় এই ধরনের বলে কুমার সাংগাকারাকে দেখেছি ২ ধরনের কাজ করতে।
১. ডাউন দ্যা উইকেট এগিয়ে এসে ” ভি” জোনে ফ্রন্ট ফুট ড্রাইভ।
২. ব্যাক ফুটে গিয়ে “ভি” তে ড্রাইভ
শেষের কাজটা ইদানিংকালে ন্যাচারালি মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ ভাল করতে পারেন। আফগানিস্তানের সাথে ম্যাচে ৯০ শতাংশ রান ব্যাক ফুটেই নিয়েছেন৷ মজার বিষয় হচ্ছে মাহমুদুল্লাহ ব্যাটিং এ আসার পরই কেদার যাদব চেইঞ্জ৷ নিয়ে আসা হল মাহমুদুল্লাহ আউট হওয়ার পরের ওভারেই। ক্রিকেটে পড়াশোনার এক অনন্য নজির। পড়াশোনা আমরাও করি, তবে এ যাত্রায় মনে হয় কেদার যাদবকে নিয়ে আলাদা করে পড়াশোনা করতে ভুলে গিয়েছিলাম আমরা। অর্থাৎ, কাজ করার জায়গা আমাদের আছে অনেক।

তবে হ্যা, মহেন্দ্র সিং ধোনি যদি মাস্টার টেকনেশিয়ান হোন, তবে পরিস্থিতি বিবেচনায় তাকে ছাড়িয়ে গেছেন মাশরাফী বিন মোর্তুজা। গত কয়েক বছরে এই লোকটার ক্রিকেটিং সেন্স যে কি পরিমাণ উন্নতি করেছে, কালকের ম্যাচের কিছু দৃশ্যপট দেখাই:

১। ধাওয়ানের বিপক্ষে অপুর রিস্ট স্পিন বল৷ ফিংগার স্পিনার অপু ধাওয়ানকে রিস্ট স্পিন করেছেন৷ প্রথম প্রচেষ্টায় ফাইন লেগে ৪, দ্বিতীয় প্রচেষ্টায় ধরা। এগুলো পরিকল্পিত ট্যাকটিক্স৷
২। দীনেশ কার্তিক আসার পরই লেগ সাইডে একটা ওয়াইড দিলেন মাশরাফি। এরপরের বলেই প্রমাণ পাওয়া গেল এটাও ট্যাকটিক্স। দীনেশ কার্তিক বারবার শাফল করে লেগ স্ট্যাম্প থেকে সরে অফ স্ট্যাম্পের দিকে আসেন। এ কারণে বারবার লেগ স্ট্যাম্প জোনে বল করা এবং মিড উইকেটেও সার্কেলের ভেতর ফিল্ডার ছিল৷
৩। সেট হওয়া রোহিত শর্মার সময় রুবেলকে এনে মিড উইকেটে ফিল্ডার রেখে বারবার শর্ট বল করে যাওয়া, ফলাফল কি, আমরা সবাই জানি৷

এরকম ছোটছোট অনেক বিষয় আছে যেগুলো এই পুরো টুর্নামেন্ট এ মাশরাফিকে আলাদা করেছে। গতকাল ফিল্ডিং এ জুনিয়রদের সমর্থন পেলে ফলাফলটা অন্যরকম হতে পারতো৷ আর পারফর্মার মাশরাফীকে নিয়ে তো কোন কথাই নেই৷ কালও ডেথ ওভারসে ভাইটাল স্পেল। টেকনিক্যাল- ট্যাকটিক্যাল ক্যাপ্টেন্সি, পারফরম্যান্স, দলকে উজ্জ্বীবনি শক্তি দেয়া – সব মিলিয়ে ক্যাপ্টেন্সির এক কম্পিলিট প্যাকেজ৷ ২০১৮ এশিয়া কাপের “ক্যাপ্টেন অফ দ্যা টূর্নামেন্ট “- ক্যাপ্টেন মাশরাফী।

লেখক: আবিদ হুসাইন সামি

Exit mobile version