Site icon Jamuna Television

পোড়া ক্ষত আর দগ্ধ স্মৃতি নিয়েই ছেড়ে গেলো মোহনগঞ্জ এক্সপ্রেস

অন্য দশটা দিনের মতোই স্বাভাবিক ছিল সোমবারের (১৮ ডিসেম্বর) রাতটা। নেত্রকোণার মোহনগঞ্জ থেকে যাত্রী নিয়ে ঢাকার উদ্দেশে ছেড়ে এসেছিল মোহনগঞ্জ এক্সপ্রেস। যাত্রীরাও জীবনের তাগিদে প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র সঙ্গে নিয়ে সওয়ার হয়েছিলেন ‘নিরাপদ’ এই বাহনে। কেই বা জানতো, তাদের সামনে অপেক্ষা করছে ভয়াবহ দৃশ্য!

মঙ্গলবার (১৯ ডিসেম্বর) ভোরে রাজধানীর তেজগাঁও রেলস্টেশনে ট্রেনের তিনটি বগিতে আগুন দেয়া হয়। ফায়ার সার্ভিস বলছে, দুর্বৃত্তরা আগুন দিয়েছে। আর এতে পুড়ে অঙ্গার হয়েছে চারটি তাজা প্রাণ। নাদিরা আক্তার পপি ও তার তিন বছরের শিশু সন্তান ইয়াসিনের পরিচয় শনাক্ত হলেও অন্য দু’জনের পরিচয় নিশ্চিত হওয়া যায়নি। অথচ তারা কতই না উজ্জ্বল ভোরের স্বপ্ন দেখেছিলেন। গন্তব্যে পৌঁছানোর অল্প দূরত্বে তাদেরকে আলিঙ্গণ করতে হলো নির্মমতাকে।

মোহনগঞ্জ এক্সপ্রেস ট্রেনের পুড়ে যাওয়া বগি যেন এখনও হতভাগা যাত্রীদের স্মৃতি রোমন্থন করছে। প্রয়োজনীয় জিনিস ফেলেই জীবন বাঁচাতে ট্রেন থেকে নেমে পড়েছিলেন যাত্রীরা। তাদের ফেলে যাওয়া সেসব মালপত্র এখন পুড়ে কয়লা।

আগুন লাগা বগির আসনগুলো পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। আছে কেবল লোহার আকৃতি। এটি যেন তুলে ধরছে আগুনের ভয়াবহতাকে। পুড়ে যাওয়া বগির এক কোণে পড়েছিল একটি স্কুলব্যাগ। পছন্দের ব্যাগটিকে সঙ্গে নিয়েই হয়তো ট্রেনে চড়েছিল কোনো ছোট্ট শিশু। অথচ ধ্বংসস্তুপের মধ্যে অসহায়ের মতো পড়ে আছে সেই ব্যাগ। অবশ্য ব্যাগটি কার ছিল তা জানা যায়নি।

অগ্নিকাণ্ডে ক্ষতিগ্রস্ত ট্রেনটির আরেক জায়গায় পড়ে থাকতে দেখা গেছে একটি হোমিওপ্যাথিক বাক্স। বাক্সটির মালিক বেঁচে আছেন কিনা সেটি নিশ্চিত নয়। একটু দূরেই পড়ে আছে অবসর সময়ের পরম বন্ধু বই। কোনো বই প্রেমিক হয়তো ভ্রমণের একঘেয়ে সময় কাটাতে সঙ্গে নিয়েছিলেন এটি।

ট্রেনের আরেক কোণে চোখে পড়ে থাকতে দেখা গেলো ওষুধ, স্যালাইনের প্যাকেট আর দুটি চশমা। পাশেই রয়েছে পানের কৌটা। ছোট্ট শিশুকে নিয়ে রেলভ্রমণের সময় বাচ্চার খাবারের জন্য দুধের কৌটা নিয়ে এসেছিলেন মা। শীতের কষ্ট থেকে শিশু বাঁচাতে সাথে নিয়েছিলেন অতিরিক্ত গরম কাপড়ও। অথচ পোড়া ট্রেনের মেঝেতে পড়ে আছে সেই দুধের কৌটা আর শীতের কাপড়।

মোহনগঞ্জ এক্সপ্রেসের আগুন নিভেছে। বিভীষিকাময় এক অভিজ্ঞতা আর পোড়া ক্ষত নিয়েই ট্রেনটি ছেড়ে গেছে গন্তব্যে। শুধু গন্তব্যে পৌঁছানোর জন্য ট্রেনে চড়া মানুষগুলো এতে নেই। তাদের ভাগ্যে কী ঘটেছে, তাও অজানা।

এনকে/

Exit mobile version