Site icon Jamuna Television

ট্যাক্সিচালক থেকে ক্রিকেট তারকা, পাকিস্তানি অলরাউন্ডারের গল্প যেন সিনেমাকেও হার মানায়

অভাব অনটনের সংসারে হাল ধরতে ট্যাক্সি চালানো শুরু করেন পাকিস্তানি যুবক আমের জামাল। চার বছর পর স্টিয়ারিং ছেড়ে ব্যাট-বল হাতে আবারও ছোটেন স্বপ্নের বাইশ গজে। ট্যাক্সিচালক থেকে আজ তিনি রেকর্ড বইয়ে নাম লেখানো তারকা ক্রিকেটার।

কঠোর পরিশ্রম আর একবুক প্রত্যাশাই জামালকে আজ পৌঁছে দিয়েছে ট্যাক্সি ড্রাইভার থেকে জাতীয় দলের অলরাউন্ডার তথা তারকা ক্রিকেটার জায়গায়। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে তার শুরুটা হয়েছিল নাসিম শাহর অসুস্থতার কারণে। গত বছর ইংল্যান্ডের সাথে সিরিজ নির্ধারণী সেই টি-টোয়েন্টিতে অভিষিক্ত জামালের বুদ্ধিদীপ্ত বোলিংয়ে দুর্দান্ত এক জয় পায় পাকিস্তান। টেস্ট অভিষেকও বাজিমাত জামালের। পার্থে চলমান অস্ট্রেলিয়া সিরিজের প্রথম টেস্টে বল হাতে ৬ উইকেট তুলে ফিরিয়ে আনেন ৫৯ বছর আগের স্মৃতি। আর এবার সিডনিতে ৯ নামাব্রে ব্যাটিংয়ে নেমে ৮২ রানের ইনিংস খেলে জানান দিলেন তিনি এসেছেন জয় করতে।

জীবন গল্পে এক সংগ্রামী নায়ক আমের জামালের জন্ম ১৯৯৬ সালে পাকিস্তানের মিয়ানওয়ালিতে। ২০১৪ সালে পাকিস্তান অনূর্ধ্ব-১৯ দলেও খেলেছেন তিনি। কিন্তু এরপরই তার পেশাদার ক্রিকেটার হওয়ার স্বপ্নে আসে বড় ধাক্কা। ২৭ বছর বয়সে দেশের হয়ে টেস্ট জার্সি গায়ে তোলার গল্পটা এতটাও সহজ ছিল না। একটা সময় সংসার চালানোর জন্য অস্ট্রেলিয়ায় গিয়ে ট্যাক্সির স্টিয়ারিং হাতে তুলে নিয়েছিলেন আমের।

আমের বলেন, ভোর ৫টা থেকে সকাল সাড়ে ১০টা পর্যন্ত ছিল আমার ট্যাক্সি চালানোর প্রথম শিফট। তারপর ১১টা থেকে ১টা পর্যন্ত বোলিং অনুশীলন, আবার ২টা থেকে সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত রাইড। সেই কষ্ট আমাকে নিয়মানুবর্তিতা শিখিয়েছে। এটাও বুঝিয়েছে জগতে সবকিছুরই মূল্য আছে। যখন আপনি কঠোর পরিশ্রম করে কিছু অর্জন করবেন তখন সবকিছুকে মূল্য দিতে শিখবেন।

এতসব ম্যানেজ করে ফিল্ডিং ও অল্প ব্যাটিং প্র্যাক্টিসটাও করে নিতেন আমের। দুপুরে একবার খেতেন। আর রাতের খাবার কোনো সময় বাড়িতে তো কখনও আবার বাইরে। যা জুটত, তা দিয়েই কাজ চালিয়ে নিতেন। আশপাশের মানুষের কাছ থেকেও অনেক অপমানজনক কথা শুনেছেন এই ক্রিকেট তারকা।

আমের বলেন, অনেকে আমাকে ক্রিকেট খেলা বন্ধ করে দিতে বলেছিল। সবাই বলতো আমি যে ক্রিকেট খেলি তাতে কোনো আশা নেই। আর আমি বরাবর বলতাম, আশা সব সময়ই থাকে। তার জন্য শুধু এগিয়ে যেতে হবে। কঠোর পরিশ্রম করতে হবে। বাকিদের থেকে অনেক বেশি পরিশ্রম করতে হবে।

ট্যাক্সির হুইল ধরায় প্রায় চার বছর পেশাদার ক্রিকেটের বাইরে থাকতে হয়েছিল আমেরকে। তবে স্বপ্নটা হারিয়ে যেতে দেননি, রেখেছিলেন মুঠোবন্দি করেই। আর তাই স্টিয়ারিং ছেড়ে ধরেছিলেন সেই প্রিয় ব্যাট-বল। আবারও দেশে ফিরে শুরু করেছিলেন নতুন করে, যার শেষটা করতে চান বাইশ গজে, বিজয়ীর বেশে।

এসজেড/

Exit mobile version