Site icon Jamuna Television

জীবন্ত পুড়ে মৃত্যুর ঘটনা, ট্রেন যাত্রায় ভীতি

প্রিয় দুই সন্তান, স্নেহের ছোট বোন আর স্ত্রীকে নিয়ে ঘরে ফিরছেন আসাদুজ্জামান। ভালোবাসার এই মানুষগুলোকে নিয়ে তাদের গন্তব্যে ট্রেন ছাড়বে আরও দেরিতে। তারপরও প্ল্যাটফর্মে ঢুকতে এই ব্যস্ততার অন্য কারণ। এখন পথটা যে বড় বিপদের! দ্রুত ঘরে ফিরতে পারলেই যেন স্বস্তির বাতাস ফিরে পাওয়া।

আসাদুজ্জামানের স্ত্রী বলেন, সাম্প্রতিক ট্রেন দুর্ঘটনা খুবই মর্মান্তিক। জার্নি করছি ভীতি নিয়ে। বাচ্চাগুলোকে নিয়ে সবচেয়ে বেশি টেনশন হচ্ছে। সময়মতো ঘরে ফিরতে পারলেই স্বস্তি। আসাদুজ্জামান বলেন, আতঙ্ক আছে অনেক কিন্তু কিছু করার নেই। যেতে তো হবে।

স্কুল শিক্ষক ফরিদা পারভিন ফিরছেন কর্মস্থলে। শিশু সন্তানকে নিয়ে তার এই যাত্রাকে তিনি বললেন শ্বাপদ সংকুল। কয়েকদিন আগে ট্রেনে পুড়ে মরার দৃশ্য তার সন্তানও দেখেছে। তাই কাটছেই না ভয়। তিনি বলেন, আমি যদি সন্তানের জন্য নিরাপত্তা না নিয়ে আসতে পারি, সেটা আমার জন্য অনেক বেশি ভয়ের কারণ। মা হিসেবে অবশ্যই আমার খারাপ লাগবে।

পুরো ট্রেনের যাত্রীরাই এমন শঙ্কায়। কেউ খেয়াল করছেন অস্বাভাবিক কিছু নেই তো! কেউবা জানালা দরজা পরখ করছেন ঠিকঠাক কাজ করে কিনা। ভয়ে বন্ধও করে দিচ্ছেন কেউ কেউ। বলছেন, দোয়া দুরুদ পড়তে পড়তে যাচ্ছি। মাকেও বলেছি, তাই করতে। তাদের জীবনে হুমকি বা আশঙ্কা হয়ে দাঁড়িয়েছে যে, ট্রেনে উঠলে শেষ পর্যন্ত বাসায় পৌঁছতে পারা যাবে কিনা।

যাত্রীদের এই ভীতি কমাতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তেমন কোনো তৎপরতা নেই। নেই তল্লাশি। এ প্রসঙ্গে কমলাপুর রেলস্টেশনের স্টেশন ম্যানেজার মাসুদ সারওয়ার বলেন, সব ট্রেন পূর্ণরুপে চলছে। জিআরপি পুলিশ আরও সতর্ক আছে। আনসার বাহিনী কাজ করছে। আশা করি, যাত্রীরা নিরাপদেই তাদের বাড়িতে ফিরতে পারবেন।

প্রসঙ্গত, গত ৫ জানুয়ারি রাত ৯টার দিকে রাজধানীর গোপীবাগ এলাকায় বেনাপোল এক্সপ্রেসে আগুন লাগে। এতে জীবন্ত পুড়ে মারা যায় চারজন। এ ঘটনায় আহত হয়ে শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে ভর্তি রয়েছেন আরও ১০ জন।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া মৃত্যুর অন্তিম সময়ের সেই দৃশ্য মানুষকে করেছে হতবাক। মানুষের সব কথা নিমিষেই চুপসে গেছে। হতবাক হওয়ার সীমা ছাড়িয়েছে। এ প্রসঙ্গে সোশ্যাল মিডিয়ায় একজন লিখেছেন, ‘ট্রেনের জানালা দিয়ে যে মানুষটার পোড়া মৃতদেহটা ঝুলে আছে, ওটাই বাংলাদেশ। এই মৃত্যু উপত্যকাই আমার দেশ ছিলো। মাঝে মাঝে ভুলে যাই। মাঝে মাঝে আমাদের মনে করিয়ে দেয়া হয়।’

/এএম




Exit mobile version