Site icon Jamuna Television

নাইট্রোজেন গ্যাস দিয়ে প্রথম মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করছে যুক্তরাষ্ট্র

খুনি কেনেথ স্মিথ। ফাইল ছবি: রয়টার্স

যুক্তরাষ্ট্রের আলাবামা অঙ্গরাজ্যে নাইট্রোজেন গ্যাস ব্যবহার করে এক আসামির মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের সিদ্ধান্ত বহাল রেখেছেন মার্কিন সুপ্রিম কোর্ট। পৃথিবীর ইতিহাসে কোনো আসামিকে এভাবে মৃত্যুদণ্ড দেয়ার নজির এটাই প্রথম।

আজ বৃহস্পতিবার (২৫ জানুয়ারি) এ তথ্য জানিয়েছে যুক্তরাজ্যভিত্তিক গণমাধ্যম বিবিসি।

মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের সিদ্ধান্ত স্থগিতের অনুরোধ জানিয়ে আসামি কেনেথ স্মিথের করা আবেদনটি বুধবার (২৪ জানুয়ারি) খারিজ করে দেওয়া হয়। কয়েক ঘণ্টার মধ্যে আলাবামার একটি জেলে তার ওপর এই পদ্ধতিতে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করার কথা।

এই মৃত্যুদণ্ডকে ‘নিষ্ঠুর ও অস্বাভাবিক শাস্তি’ আখ্যায়িত করে মার্কিন সুপ্রিম কোর্ট ও নিম্ন আপিল আদালতে আবেদন করেছিলেন স্মিথের আইনজীবীরা। তাতে মৃত্যুদণ্ড রহিত করার আবেদন জানানো হয়েছিল। কিন্তু আদালত তা প্রত্যাখ্যান করেন। ফলে বৃহস্পতিবার যেকোনো সময়ে স্মিথের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হবে।

নিহত এলিজাবেথ সেনেট।

দেশটির আলাবামা অঙ্গরাজ্যে ১৯৮৯ সালে ইলিজাবেথ সেনেটকে এক হাজার ডলারের বিনিময়ে হত্যা করেন আসামি। নিহতের স্বামী ছিলেন একজন ঋণগ্রস্ত ধর্মপ্রচারক। স্ত্রীর জীবন বীমার অর্থ সংগ্রহ করার জন্য তিনি কেনেথ স্মিথ ও ফরেস্ট পার্কারকে ভাড়া করেন। তদন্তকারীরা তাকে গ্রেফতার করতে এলে আত্মহত্যা করেন যাজক স্বামী।

২০১০ সালে পার্কারের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়। এ অভিযোগ প্রমাণিত হয় ৫৮ বছর বয়সী স্মিথের বিরুদ্ধে। ফলে তাকেও মৃত্যুদণ্ড দেয় আদালত।

দুবছর আগেও একবার স্মিথকে প্রাণঘাতি ইনজেকশনের মাধ্যমে মৃত্যদণ্ড দেয়ার চেষ্টা চালানো হয়। কিন্তু রাত ১২টা বাজার আগে মৃত্যুসূচ ফোটানোর জন্য কেনেথের শিরা খুঁজে পাননি সংশ্লিষ্টরা। যার ফলে মৃত্যুদণ্ডাদেশের মেয়াদ উত্তীর্ণ হয় এবং তিনি সে যাত্রা প্রাণে বেঁচে যান। আজ নাইট্রোজেন গ্যাস ব্যবহার করে তার মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হবে।

নাইট্রোজেন গ্যাস সিলিন্ডারের সাথে যুক্ত একটি মাস্ক পরানো হবে স্মিথকে। পরে শ্বাস-প্রশ্বাসের মাধ্যমে সে গ্যাস তার দেহে ১৫ মিনিট ধরে প্রবেশ করলে বন্ধ হবে অক্সিজেন সরবরাহ। আর তাতেই মৃত্যু হবে আসামির।

প্রাণঘাতী ইনজেকশন দেয়ার জন্য বিশেষ বিছানা।

অসুস্থ প্রাণীর কষ্টহীন মৃত্যুতে কোথাও কোথাও নাইট্রোজেন গ্যাস ব্যবহার করা হলেও প্রাণী চিকিৎসকদের দাবি, এই পদ্ধতি পরীক্ষিত নয়। কাজেই স্মিথের সাজার পন্থাকে ‘যন্ত্রণাদায়ক’ ও ‘অমানবিক’ আখ্যা দিচ্ছে মানবাধিকার সংগঠনগুলো। অপরীক্ষিত পদ্ধতিতে মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের সমালোচনা করছে জাতিসংঘও।

জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক কমিশনের মুখপাত্র রাভিনা স্যামদাসানি বলেন, নাইট্রোজন গ্যাসের মাধ্যমে কেনেথ স্মিথের মৃতুদণ্ড কার্যকরের অপরীক্ষিত পদ্ধতি নিয়ে আমরা শঙ্কিত। এটি আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইন অনুসারে নিষ্ঠুর ও অমানবিক আচরণ। এমনকি যুক্তরাষ্ট্রের প্রাণী চিকিৎসকরাও বড় প্রাণীকে এই পদ্ধতিতে মৃত্যু ঘটানোর ক্ষেত্রে অজ্ঞান করার পরামর্শ দিয়েছেন। অথচ স্মিথের মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের সময় তেমন কোনো ব্যবস্থাই নেয়া হচ্ছে না।

প্রসঙ্গত, প্রাণঘাতী ইনজেকশনে যে ওষুধ ব্যবহার করা হয়, মানুষ হত্যার কাজে তার বিক্রি নিষিদ্ধ ইউরোপে। যার প্রভাব পড়েছে যুক্তরাষ্ট্রে। আর তাই দেশটির অনেক অঙ্গরাজ্যই খুঁজছে বিকল্প পন্থা।

/এএম

Exit mobile version