Site icon Jamuna Television

একজন লেখকের মনের জানালা খোলা রাখা জরুরি: জাকির তালুকদার

সম্প্রতি বাংলা বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার ফেরত দিয়ে আলোচনায় এসেছেন কথাশিল্পী জাকির তালুকদার। তার নাটোরের বাসায় বসে চায়ের আড্ডায় কথা হয় পুরস্কার ফেরত, বাংলা একাডেমি ও সমকালীন সাহিত্য নিয়ে। আলোচনায় উঠে আসে তার ভবিষ্যত চিন্তা-লেখালেখি প্রসঙ্গও। এবারের মেলায় কী আসছে, তাও জানান। এই ভাষাচিত্রীর সঙ্গে কথা বলেছেন নাজমুল হাসান

যমুনা অনলাইন: কেমন আছেন?

জাকির তালুকদার: ভালো আছি।

যমুনা অনলাইন: শুরুতেই আপনার লেখালেখি সম্পর্কে জানতে চাই। শুরুটা কীভাবে হয়েছিল?

জাকির তালুকদার: শুরুতেই অতিসাধারণ মানের লেখা আমিও লিখেছি। সেটা বলতে পারেন হাত পাকানোর জন্য। পরবর্তীতে নিজে অনুধাবন করলাম, কিছু নিজস্বতা আনতে হবে লেখায়। না হলে শুধু প্রকাশনার সংখ্যাই বাড়বে। বাংলা সাহিত্যে তা বাড়তি কিছু যোগ করবে না। সেই থেকেই নিজের পথ খুঁজে বের করলাম। প্রচুর পড়া শুরু করলাম। বঙ্কিম পড়লাম, আখতারুজ্জামান ইলিয়াস পড়লাম, সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ পড়লাম। এভাবে নিজেকে তৈরি করা শুরু করলাম।

যমুনা অনলাইন: আপনি তো ছাত্র রাজনীতি করেছেন। সেটা আপনার লেখায় কতটা প্রভাব ফেলেছে?

জাকির তালুকদার: আমি বামধারার রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত ছিলাম ছাত্রজীবন থেকে। সেখান থেকে শিখেছি, কোনো জিনিসকে একদিক থেকে দেখা উচিত না। তাহলে ভেতরের জিনিসটা দেখা যায় না। কোনো কিছু দেখতে হলে তার ওপর দশ দিক থেকে মনের আলো ফেলতে হয়। মনের জানালাকে খোলা রাখতে হয়। সেটার প্রভাব নিশ্চয়ই আমার লেখায় আছে।

যমুনা অনলাইন: এবারের মেলায় নতুন কী বই আসছে আপনার?

জাকির তালুকদার: এবারের বইমেলায় আমার তিনটি বই আসছে। পুথিনিলয় থেকে আসছে ‘ব্যক্তিগত পাঠশালা’। এটাতে ভিন্নরকম এক প্রবন্ধের স্বাদ পাবে পাঠক। চন্দ্রবিন্দু থেকে প্রকাশ হচ্ছে ‘তারাশঙ্কর, সাহিত্যের গ্লানি এবং অর্জন’ এবং ‘আমার বন্ধু শবনম’ আসছে প্রসিদ্ধ প্রকাশনী থেকে।

যমুনা অনলাইন: ‘আমার বন্ধু শবনম’র প্লট নিয়ে একটু ধারণা দেবেন?

জাকির তালুকদার: এটি লেখা শুরু করেছিলাম করোনার সময়। ধীরে ধীরে লেখা এগিয়েছে। এখানে শবনম একজন ‘স্ট্রিট কলগার্ল’। তার মাধ্যমে আমি সমাজের সাইকো-সেক্সুয়াল বিষয়টি তুলে আনার চেষ্টা করেছি।

যমুনা অনলাইন: সমসাময়িক সাহিত্য নিয়ে আপনার মন্তব্য জানতে চাই।

জাকির তালুকদার: দ্যাখেন, সবার হাত থেকে মাস্টারপিস বেরুবে না, এটাই স্বাভাবিক। সবাই গতিপথ বদলে দেয়ার মতো লিখবেন না। কিন্তু লিখতে লিখতে একজন লেখকের অবশ্যই বোধোদয় আসবে, তাকে কালোত্তীর্ণ কিছু লিখতে হবে। এজন্য অবশ্যই অনেক কিছু পড়তে হবে, জানতে হবে। সাহিত্যের বাইরেও রাজনীতি, সমাজনীতি জানতে হবে। তাকে পণ্ডিত হতে হবে, তা নয়। কিন্তু ভালো লেখার জন্য নানা বিষয়ে সম্যক ধারনা থাকা জরুরি।

যমুনা অনলাইন: সম্প্রতি বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার ফেরত দিয়েছেন আপনি। কী মনে করেন, আপনার এই প্রতিবাদে কোনো কাজ হবে?

জাকির তালুকদার: বাংলা একাডেমি যে জায়গায় চলে গেছে, সেখান থেকে এই প্রতিষ্ঠানকে ফিরিয়ে আনা খুব কঠিন। কেবল এক ব্যক্তির জায়গায় আরেক ব্যক্তিকে বসিয়ে দিলে কাজ হবে না। প্রয়োজন একজন দেশপ্রেমিক। যিনি গণতান্ত্রিক ধারায় পরিচালনা করবেন প্রতিষ্ঠানটিকে।

যমুনা অনলাইন: আসলেই পুরস্কার কেন ফিরিয়ে দিলেন?

জাকির তালুকদার: আমি পুরস্কার ফিরিয়ে দিয়ে কোনো ‘ক্রিমিনাল অফেন্স’ (ফৌজদারি অপরাধ) করিনি। দেশ-বিদেশে অনেকেই এমন পুরস্কার-পদক ফিরিয়ে দিয়ে প্রতিবাদ জানিয়েছেন। বাংলা একাডেমির ফেলো হওয়ার আগ পর্যন্ত জানতাম না প্রতিষ্ঠানটি এতটা অস্বচ্ছ। তাদের সংশোধন করার জন্য বারবার বসেছি। কখনও ব্যক্তিগতভাবে, কখনও এককভাবে। তাতে কাজ হয়নি।

যমুনা অনলাইন: পুরস্কার ফেরত দেয়ার আর কোনো কারণ কী আছে?

জাকির তালুকদার: গেল কয়েক বছর ধরে যারা পুরস্কার পাচ্ছেন, দু-একজন ছাড়া বেশিরভাগ বলার মতো কেউ নন। তারা যখন বলছেন, আমি বাংলা একাডেমি পুরস্কার পেয়েছি, তখন নিজেকে অসম্মানিতই মনে হয়। পুরস্কার ফেরত দেয়ার এটাও কারণ। তবে, সেটা আমি চিঠিতে উল্লেখ করিনি।

যমুনা অনলাইন: আপনাকে ধন্যবাদ। ভালো থাকবেন।

জাকির তালুকদার: যমুনা পরিবারকেও ধন্যবাদ।

/এমএমএইচ

Exit mobile version