Site icon Jamuna Television

জীবনানন্দের বায়োপিক নয়, তার কবিতার বোধ ছুঁতে সিনেমা করছি: মাসুদ পথিক

‘নয়ন তোমারে পায় না দেখিতে, রয়েছ নয়নে নয়নে। হৃদয় তোমায় পায় না জানিতে, হৃদয়ে রয়েছ গোপনে।’ কবিতা এভাবেই আমাদের অব্যক্ত অনুভূতিকে সহজ করে তুলে ধরে। কবিতা দ্রোহের কথা বলে, প্রতিবাদের কথা বলে। কবিতা কথা বলে স্বপ্নের, অনিন্দ্য সুন্দরেরও। অমর একুশে বইমেলায় এমন হাজারও কবিতা অপেক্ষা করে পাঠকের জন্য। যমুনা অনলাইনের বিশেষ আয়োজন ‘বাংলার বইমেলা’য় আজকের অতিথি কবি, চলচ্চিত্রকার মাসুদ পথিক। তার সঙ্গে কথা বলেছেন ফারহানা ন্যান্সি

যমুনা অনলাইন: প্রথমেই অভিনন্দন জানাই আপনাকে, বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার প্রাপ্তির জন্য।

মাসুদ পথিক: অনেক ধন্যবাদ।

যমুনা অনলাইন: আপনি কবিতার মানুষ। নির্মলেন্দু গুণ, জীবনানন্দ দাশের কবিতা নিয়ে আপনি সিনেমা বানিয়েছেন। কবিতাকে অনেকেই দুর্বোধ্য বলে থাকে। সেই কবিতাকে কীভাবে সিনেমায় রুপ দিলেন? এটার আইডিয়া কোথা থেকে এসেছে?

মাসুদ পথিক: হয়েছে কি, আমি মূলত কবিতাকর্মী। ছোটবেলা থেকেই কবিতা লিখি। যার ফলে আমার মনোজগতে কবিতাই বাস করে। কবিতার যে ইমেজারি, চিত্রকল্প বা অ্যালিগোরি-সিম্বলের জায়গাগুলো থাকে, তা কাজ করে আমার ভেতরে। শিল্পের যে কোনো জায়গাতেই দেখবেন, কাব্যিকতা রয়েছে। যখন কোনোকিছু সাজানো হয়, সেটা ভালো হলে আমরা বলি– খুব ‘পোয়েট্রিক’ হয়েছে। আসলে আমরা সর্বোপরি সমস্ত শিল্পকে কাব্যিক করে তুলতে চাই।

আমি যেহেতু কবিতাকর্মী, আমার মনে হয়েছে, আমি ফিল্ম করলে কবিতা নিয়েই করা উচিত। সেই প্রেষণা থেকেই নির্মলেন্দু গুণের ‘নেকাব্বরের মহাপ্রয়াণ’ করেছি। কবি কামাল চৌধুরীর ‘যুদ্ধশিশু’ অবলম্বনে ‘মায়া: দ্য লস্ট মাদার’ করেছি। জীবনানন্দ দাশের ‘আট বছর আগের একদিন’ অবলম্বনে ‘বক: দ্য সোল অব ন্যাচার’ করেছি। জীবনানন্দ দাশের সমগ্র কবিতাকে মিলিয়ে আমার চিন্তা-দর্শন থেকে একটা সিনেমা তৈরি করব বলে পরিকল্পনাও করেছি।

যমুনা অনলাইন: নির্মলেন্দু গুণের ‘নেকাব্বরের মহাপ্রয়াণ’ অবলম্বনে সিনেমা করে আপনি জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পেয়েছেন। সেখানে আদতে কবিতার এসেন্স কীভাবে ফুটে উঠেছে?

মাসুদ পথিক: বস্তুত ফিল্মের যে ন্যারেটিভ, তা অনেক রকম আছে। এটা আপেক্ষিক। মানে আধুনিক দুনিয়ায় অনেক রকম ন্যারেটিভ রয়েছে। লিনিয়ার, নন লিনিয়ার হয়, ফিউশন। ফিল্মের প্রচলিত ন্যারেটিভের বাইরে গিয়ে একটা পোয়েটিক পয়েন্ট অব ভিউ থেকে, কবিতার কাহিনীসূত্র থেকে আমি ফিল্ম বানাতে চেয়েছি। কবিতাকে বারবার ফিরিয়ে এনে একটা ভিন্ন মাত্রা যোগ করতে চেয়েছি সিনেমায়।

যমুনা অনলাইন: উদাহরণ দিয়ে আরেকটু যদি পরিষ্কার করতেন বিষয়টা..

মাসুদ পথিক: ধরেন, ‘নেকাব্বরের মহাপ্রয়াণ’-এ ভূমিহীন চাষার গল্প আছে। আমরা এটাকে একাত্তর সালের একজন পঙ্গু মুক্তিযোদ্ধার কাছে নিয়ে গেছি। তার হয়তো মেমরি লস হয়েছে যুদ্ধের কারণে। পরবর্তীতে, অনেক বছর পর সে হয়তো স্মরণশক্তি ফিরে পেয়েছে। তার তখন মনে হয়েছে সেই পুরোনো গ্রামে ফেরার, যেখানে তার নাড়ি পোঁতা। সেই যাওয়াটা সেই জার্নিটা কবি গুণ বলেছেন তার কবিতার মধ্য দিয়ে। আমরাও এটাকে সিনেমার যাত্রায় হাজির করেছি। দুজনের সাক্ষাৎ ঘটানো হয়েছে।

যমুনা অনলাইন: অন্যান্য সিনেমাতেও এভাবে কবিতা এসেছে?

মাসুদ পথিক: কবিতা তো আসলে বাইবেল জাতীয় কিছু নয়। মানুষের জীবন অভিজ্ঞতার ভেতর দিয়ে কবিতা হাজির হয়। মানুষের ছোট ছোট গল্প থেকেই কবিতা আসে। সেটাকে কবি নান্দনিকভাবে উপস্থাপন করে। ‘মায়া: দ্য লস্ট মাদার’-এও এটা হয়েছে। শিল্পী শাহাবুদ্দিন আহমেদের একটা পেইন্টিংয়ের ইম্প্রেশনও ছিল ছবিতে। এভাবে ‘বক: দ্য সোল অব ন্যাচার’-এও কবিতার অন্তর্গত ফিলোসফির যথার্থ ব্যবহার করা হয়েছে।

যমুনা অনলাইন: আপনি বলছিলেন, জীবনানন্দ দাশের সমগ্র কবিতাকে মিলিয়ে একটা সিনেমা তৈরি করবেন। কবির জীবনকে সবাই ডিসকভার করতে পারবে। এ কারনেই কি সিনেমাটা বানাচ্ছেন?

মাসুদ পথিক: আসলে জীবনানন্দকে জানবার জন্য এই ফিল্ম নয়। ফিল্মটা নির্মাণ করছি জীবনানন্দ দাশের কবিতা, তার জীবনের অপরিমেয়, অস্পর্শ বোধ-চৈতন্যকে স্পর্শ করার জন্য। আমি আসলে দাশের বায়োপিক বানাতে চাই না। তার সৃষ্টিগুলোকে বোধ করাতেই এই সিনেমা বানানো।

যমুনা অনলাইন: আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ।

মাসুদ পথিক: যমুনা অনলাইনকেও ধন্যবাদ।

/এএম

Exit mobile version