Site icon Jamuna Television

আগুনের শিখায় বিষাদগ্রস্ত ‘২৯ ফেব্রুয়ারি’

৩৬৫ দিনের ক্যালেন্ডারে ফেব্রুয়ারির শেষে বাড়তি একটি দিন যোগ হওয়াই ‘লিপ ইয়ার’। আর অতিরিক্ত এক দিনকেই আমরা ‘লিপ ডে’ বলি। বিশেষ এই দিনটিকে স্মরণীয় করে রাখতে অনেকেই প্রিয়জনদের নিয়ে পা রেখেছিলেন রাজধানীর বেইলি রোডের বহুতল ওই ভবনে।

সাপ্তাহিক ছুটির আগের দিন রাত, আবার লিপ ডে (২৯ ফেব্রুয়ারি) সন্ধ্যা! সবমিলিয়ে জনসমাগমে ও ব্যস্ততায় ভরপুর ছিল ভবনটি। ব্যস্ততা ও সুখ সময়ের সেই মুহূর্তগুলো মুহূর্তেই পরিণত হলো বিষাদে।

আগুনের লেলিহান শিখা কেড়ে নিয়েছে নারী ও শিশুসহ ৪৫ প্রাণ। পরিবার, সন্তান, বন্ধু, আত্মীয় হারিয়ে হাসপাতালের বারান্দায় আহাজারি করছেন স্বজনরা। অনেকে স্বজনদের মৃত্যুর জন্য দায়ী করছেন নিজেদেরই।

অগ্নিকাণ্ডে ছারখার হওয়া ভবনটিতে ছিল কাচ্চি ভাই, পিজ্জা ইন, স্ট্রিট ওভেন, হাক্কাডাক্কা, খানাসসহ নামকরা ও জনপ্রিয় সব রেস্টুরেন্ট। এছাড়াও ইলিয়েন, ক্লোজেস্ট ক্লাউডসহ পোশাকের জনপ্রিয় দোকান। নিচতলায় রয়েছে স্যামসাং ও গ্যাজেট অ্যান্ড গিয়ার-এর শোরুমও। এক ভবনে যেখানে এতকিছুর সমাহার, স্বাভাবিকভাবেই সবসময় ভবনটিতে ব্যস্ততা লেগে থাকতো।

ভবনটিতে আগুন লাগার পরে অনেকেই ফোন করেছিলেন পরিবারের কাছে। জানিয়েছিলেন বাঁচার আকুতি। তবে ফিরতে পারেননি অনেকেই। ঢাকা মেডিকেল আর শেখ হাসিনা বার্ন ইনস্টিটিউটে অনেকেই এসেছেন মৃত হয়ে। আহতদের সংখ্যাও কম নয়। সব মিলিয়ে হাসপাতালগুলোয় সৃষ্টি হয়েছে হৃদয়বিদারক এক পরিবেশ।

অন্যদিকে প্রিয়জনের খোঁজে রাজধানীর এসব হাসপাতালে বাড়ছে স্বজনদের ভিড়। কেউ ছেলে হারিয়েছেন, কেউ বোন, আবার কেউ হারিয়েছেন সহপাঠী।

হাসপাতালে থাকা নিহতের এক স্বজন (মহিউদ্দিন) বলেন, স্ত্রী ভুগছিলেন দাঁতের ব্যথায়। হাসপাতালে যান মেয়েকে নিয়ে। ফেরার পথে কাচ্চি খেয়ে আসার পরামর্শ দেন স্বামী মহিউদ্দিন নিজেই। পরে, ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে তাদের মরদেহ খুঁজে পান তিনি। এ ঘটনায় এখন নিজেকে অপরাধী ভাবছেন তিনি। করছেন বিলাপ, তার কান্নায় ভারী হয়েছিল রাতের আকাশ।

নিহত নারী ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের ইংরেজি বিভাগের শিক্ষিকা লুৎফুর নাহার করিম (৪৭)। তার মেয়ে ব্রাক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী জান্নাতি তাজরিন (২৩)। তিনিও একই কলেজের সাবেক শিক্ষার্থী ছিলেন।

চোখে অশ্রু নিয়ে নিহতের আরেক স্বজন জানান, আমার পরিবারের ৩ জন ছিল, সবাই মারা গেছে। আমার সব শেষ হয়ে গেছে..।

/এমএইচ

Exit mobile version