Site icon Jamuna Television

দুঃখের সাথেই আছে শান্তি: সূরা ইনশিরাহ

ছবি: গেটি ইমেজ।

আহাদুল ইসলাম:

শাহরু রমাদানাল্লাজি উনিজলা ফিহিল কোরআন, হুদাললিন্নাসি ওয়া বায়্যিনাতিম মিনাল হুদা ওয়াল ফুরকান।’

অর্থাৎ, রমজান মাস এমন যে, তাতে কোরআন নাজিল করা হয়েছে; মানুষের জন্য পথপ্রদর্শকরূপে ও হিদায়াতের সুস্পষ্ট বর্ণনা ও সত্যাসত্যের পার্থক্য নির্ণয়কারী হিসেবে। (সূরা-২ বাকারা, আয়াত: ১৮৫)।

মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সা.) বলেছেন, বছরের সব মাসের মধ্যে রমজান মাস সবচেয়ে উত্তম। কারণ, মহান আল্লাহ এই মাসেই আসমানি কিতাব কোরআন মাজিদ নাজিল করেছেন। যেহেতু, কোরআন মাজিদ নাজিলের মাস এটি; তাই এই মাসটির গুরুত্ব ও মর্যাদা অনেক।

প্রকৃতপক্ষে, প্রত্যেক মুমিনের জন্য ধৈর্য ও ত্যাগের মাস এটি। যেহেতু মাসটি মুসলিম ধর্মাবলম্বীদের জন্য বিশেষ একটি মাস। তাই, এই মাসের কিছু সুন্নতও রয়েছে। রমজানের পাঁচটি সুন্নতের মধ্যে রয়েছে সাহরি খাওয়া, ইফতার করা, তারাবি সালাত পড়া, কোরআন মাজিদ তিলাওয়াত করা ও ইতিকাফ করা।

যেহেতু কোরআন মাজিদ এই মাসে নাজিল করা হয়েছে, তাই কোরআন শুদ্ধভাবে পড়া ও বুঝা অনেক গুরুত্বপূর্ণ। মহান আল্লাহ তায়লা মানুষের জন্য পুরো ৩০ পারায় কী বার্তা রেখেছেন, কী বলতে চেয়েছেন; তা এক জীবনে পড়া খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

রমজান মাস দরজায় কড়া নাড়ছে। তাই, পুরো মাসজুড়েই অভ্যাস করা যেতে পারে কোরআন মাজিদ পড়ার। একটু-একটু করে। তবে, অর্থ বুঝে পড়তে পারলে পাওয়া যাবে অধিক সুফল। আজ থাকছে ৩০ নম্বর পারার একটি সূরা। সূরাটির নাম ‘ আল ইনশিরাহ’। এই সূরাটি মক্কায় অবতীর্ণ। সূরা নম্বার ৯৪। আয়াত সংখ্যা ৮টি।

উচ্চারণ: ১) আলাম নাশরাহলাকা সাদরাক। ২) ওয়া ওয়াদা‘না-‘আনকা বিঝরাক ৩) আল্লাযীআনকাদা জাহরাক। ৪) ওয়া রাফা‘না-লাকা যিকরাক। ৫) ফাইন্না মা‘আল ‘উছরি ইউছরা-। ৬) ইন্না মা‘আল ‘উছরি ইউছরা-। ৭) ফাইযা-ফারাগতা ফানসাব। ৮) ওয়া ইলা- রাব্বিকা ফারগাব।

অর্থ: ১) আমি কি আপনার বক্ষ উম্মুক্ত করে দেইনি? ২) আমি লাঘব করেছি আপনার বোঝা, ৩) যা ছিল আপনার জন্যে অতিশয় দুঃসহ। ৪) আমি আপনার আলোচনাকে সমুচ্চ করেছি। ৫) অনন্তর দুঃখের সাথেই রয়েছে শান্তি। ৬) অবশ্যই দুঃখের সাথেই রয়েছে শান্তি। ৭) অতএব, যখন অবসর পান পরিশ্রম করুন। ৮) এবং আপনার পালনকর্তার প্রতি মনোনিবেশ করুন।

কুরআন মাজিদের বিভিন্ন স্থানে রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের বক্ষদেশ উন্মুক্ত করে দেবার শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে। কোথাও বলা হয়েছে, “কাজেই যে ব্যক্তিকে আল্লাহ হেদায়াত দান করার ইচ্ছা করেন তার বক্ষদেশ ইসলামের জন্য উন্মুক্ত করে দেন।” [সূরা আল-আন’আম: ১২৫]

আবার কোথাও বলা হয়েছে, “আল্লাহ ইসলামের জন্য যার বক্ষ উন্মুক্ত করে দিয়েছেন এবং যে তার রবের দেয়া আলোতে রয়েছে, সে কি তার সমান যে এরূপ নয়? দুর্ভোগ সে কঠোর হৃদয় ব্যক্তিদের জন্য যারা আল্লাহর স্মরণে পরাঙ্মুখ! তারা স্পষ্ট বিভ্রান্তি তে আছে।” [সূরা আয-যুমার: ২২] এই উভয় স্থানে বক্ষদেশ উন্মুক্ত করার অর্থই হচ্ছে, সব রকমের মানসিক অশান্তি ও সংশয়মুক্ত হওয়া, জ্ঞান ও সত্য উপলব্ধি করার উপযুক্ত করা এবং বক্ষকে প্রজ্ঞার আধার করার জন্য প্রস্তুত করা।

এছাড়াও, বোঝা নিয়ে মহান আল্লাহ সূরার আয়াতে বলেছেন, কোন বড় বোঝা কারও মাথায় তুলে দিলে যেমন তার কোমর নুয়ে পড়ে, তেমনি এই সূরার একটি আয়াতে বলা হয়েছে, যে বোঝা আপনার কোমরকে নুইয়ে দিয়েছিল; আমি (আল্লাহ) তাকে আপনার উপর থেকে অপসারিত করে দিয়েছি। সে বোঝা কি ছিল, তার ব্যাখ্যায় কোন কোন তাফসীরবিদ বলেছেন যে, নবুওয়তের গুরুভার রাসূলুল্লাহ্’র জন্য সহজ করে দেয়ার সুসংবাদ আয়াতে ব্যক্ত হয়েছে।

এমনকি এই সূরাতে, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে অনেক সম্মানিত করা হয়েছে। কোন সৃষ্টিকে তার মত প্রশংসনীয় করা হয়নি। এমনকি খুতবা, ইকামত, আযান, ইত্যাদির ক্ষেত্রে মহান আল্লাহর নামের সাথেও রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নাম স্মরণ করা হয়। এভাবে তার মর্যাদা ও স্মরণ সমুন্নত করা হয়েছে। এছাড়াও তার উম্মত ও অনুসারীদের নিকট তার সম-মর্যাদার আর কেউ নেই।

সূরাটির একটি আয়াতে বলা হয়েছে, ”অনন্তর দুঃখের সাথেই রয়েছে শান্তি”। হাদীসে এসেছে, “নিশ্চয় বিপদের সাথে মুক্তি আছে, আর নিশ্চয় কষ্টের সাথে আছে স্বস্তি”। [মুসনাদ আহমাদ: ১/৩০৭]

শেষ আয়াতে বলা হয়েছে, একমাত্র আল্লাহরই নিকট মনোযোগী হয়ে সকল ইবাদত যেন তিনি কবুল করে নেন, এ আশা করা। এ আয়াতে মুমিনদের জীবনে কর্মহীন থাকার কোন স্থান দেয়া হয়নি। হয় সে দুনিয়ার কাজে ব্যস্ত থাকবে, নয়তো মগ্ন থাকবে আখেরাতের কাজে। (তাফসিরে মাআরিফুল কোরআন, ৮/৮০৯)

Exit mobile version