Site icon Jamuna Television

সাতক্ষীরায় সুপেয় পানির সঙ্কট, ত্রাতার ভূমিকায় ‘প্রবাহ’

তানভীর মৌসুম

জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষতিকর প্রভাবে সাতক্ষীরায় নিরাপদ খাবার পানির ব্যাপক সঙ্কট চলছে বহু বছর ধরে। প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে নোনা পানি লোকালয়ে ঢুকে মিষ্টি পানির জলাশয়গুলোতে লবণাক্ততার পরিমাণ বাড়িয়ে দিচ্ছে। সেই পানি ব্যবহারে বাড়ছে রোগব্যাধি।

সাতক্ষীরার তেমনই এক এলাকা শ্যামনগর উপজেলার নীলডুমুর। এখানে সুপেয় পানির তীব্র সংকট। চাহিদার তুলনায় নিরাপদ পানির যোগান কম। সঙ্কট নিরসনের চেষ্টায় বেসরকারি উদ্যোগে এখানে স্থাপিত হয়েছে নিরাপদ খাবার পানির প্রকল্প ‘প্রবাহ’ পানির প্ল্যান্ট।

সামান্য এগোলেই খোলপেটুয়া নদী আর ওপারেই গাবুরার উপকূলীয় অঞ্চল। চারপাশে জলাধারের অভাব নেই। কিন্তু নিরাপদ পানির প্রচণ্ড অভাব এলাকাটিকে পরিণত করেছে কারবালার প্রান্তরে। এই পানি এখানকার অনেক রোগের উৎস। নিরাপদ, সুপেয় পানির সঙ্কট এই অঞ্চলের মানুষের নিত্য ঘটনা। এই লড়াই যেন চলছে এক প্রজন্ম থেকে আরেক প্রজন্মে।

বিশুদ্ধ পানির জন্য স্থানীয়দের যেতে হয় দূরদূরান্তে। ওয়াটার প্ল্যান্টের সুপেয় পানি তাদের কাছে ‘মাম পানি’ নামে পরিচিত। খাওয়া ছাড়া অন্যান্য কাজে ব্যবহৃত হয় পুকুরের পানি। বর্ষায় জমানো বৃষ্টির পানি সামান্য হলেও চাহিদা মেটায়।

স্থানীয় একজন বলেন, ফিটকিরি দিয়ে বসিয়ে তারপর পানি খেতে হয়। তা না হলে পানিটা গ্যাসের মতো লাগে। আরেকজন বলেন, ‘মাম পানি’ কিনে আনতে হয় এবং বর্ষার পানি ধরে রাখতে হয়। তা না হলে এই পানির কারণে ডায়রিয়া, কলেরার মতো রোগ হয়। আরেকজনের বক্তব্য, গ্যাস কেনার সামর্থ্য নেই আমাদের। তাহলে পানি ফুটাব কী দিয়ে?

‘প্রবাহ’ পানির প্ল্যান্ট প্রতিদিন এলাকাবাসীর মাঝে সরবরাহ করছে নিরাপদ খাবার পানি। প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল হলেও এই পানিটুকুই লাঘব করছে অনেক কষ্ট। স্থানীয়দের বক্তব্যে মেলে সেই তথ্য।

একজন বলেন, আগে পুকুরের পানি খেয়ে মানুষ অসুস্থ হতো। এখন কিন্তু সেটা আর হয় না। স্থানীয় আরেকজন বলেন, আগে পানি দূর থেকে কিনে আনতাম। এখন বাড়ির পাশ থেকেই পাচ্ছি পানি, এটাই সুবিধা।

প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা জানালেন ‘প্রবাহ’ নিয়ে ভবিষ্যৎ পরিকল্পনার কথা। প্রবাহ প্রতিনিধি আবু সালমান মো. আবদুল্লাহ জানান, আমরা হয়তো খাবার পানির নিশ্চয়তা দিতে পারছি। কিন্তু এর বাইরে তাদের নিত্য প্রয়োজনীয় অন্যান্য কাজেও পানির দরকার হয়। সবার জন্য নিরাপদ পানি নিশ্চিত করার লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে আমাদের পক্ষে যতোটুকু সম্ভব, আমরা বাংলাদেশ সরকারকে সহযোগিতা করে যেতে চাই।

‘প্রবাহ’ প্রকল্পটি সাতক্ষীরা জেলার আশাশুনি, নলতা এবং শ্যামনগর উপজেলায় রিভার্স অসমোসিস প্রযুক্তির মোট আটটি পানি বিশুদ্ধকরণ প্ল্যান্ট স্থাপন করেছে। যাতে সরাসরি উপকৃত হচ্ছে প্রায় ২০ হাজার মানুষ।

/এএম

Exit mobile version