Site icon Jamuna Television

২৫ মার্চের গণহত্যা: এখনও আঁতকে ওঠেন বেঁচে ফেরা ও শহীদ স্বজনরা

শাকিল হাসান:

অপারেশন সার্চ লাইট, বাঙালির ইতিহাসে এক শোকের নাম। ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ অপারেশন সার্চ লাইট শুরু করে পাকিস্তানি বাহিনী। অপারেশনের প্রথম তিন দিনেই ঢাকায় প্রায় অর্ধলক্ষ মানুষ হত্যা করেছিল হানাদাররা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতি আক্রোশ ছিল হানাদারদের। তাই তো প্রতিটি হলে, আবাসিক কোয়ার্টারেও চালায় হত্যাযজ্ঞ। এক জগন্নাথ হলেই ২৫ মার্চ রাতে হত্যা করে একশর বেশি ছাত্র-শিক্ষক-কর্মচারিকে।

এক দলকে লাইন ধরে হত্যা করে আরেক দল দিয়ে তাদের মাটি চাপা দেয়া হতো। পরে হত্যা করা হতো বাকিদেরও। সেই গণহত্যা থেকে বেঁচে ফেরা প্রত্যক্ষদর্শীরা এখনও আঁতকে উঠেন দিনটির কথা শুনলেই। বুকের মধ্যে বছরের পর বছর হাহাকার বয়ে বেড়াচ্ছেন শহীদের স্বজনরাও।

২৫ মার্চের গণহত্যার সাক্ষি রবীন্দ্র মোহন দাস। তার বাবা রাম বিহারী দাস ছিলেন জগন্নাথ হলের কর্মচারি। এনবিসি টেলিভিশনে প্রচারিত ২৬ মার্চ সকালের জগন্নাথ হলের গণহত্যার যে ফুটেজ দেখা যায় সেখানে ছিলেন ১৫ বছরের রবীন্দ্র মোহন দাস। তিনি যমুনা টেলিভিশনকে শুনিয়েছেন, গণহত্যার হাত থেকে বেঁচে ফেরার গল্পও।

ওই সময়ের স্মৃতিচারণ করে রবীন্দ্র মোহন বলেন, রাত আনুমানিক ১২টা। তীব্র গোলাগুলি আরম্ভ হয়েছে। টিনশেড ভবন আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দিল। আমাদের ৩১ জনকে ধরে পাকিস্তানি বাহিনী, এর মধ্যে প্রথমে ১৫ জনকে হত্যা করে। তারপর তাদের মরদেহ টানিয়ে দেয়া হয়। সেগুলো আমরা যারা জীবিত ছিলাম তার নিজ চোখেই দেখছি। ব্রাশফায়ার করে হত্যা করা হয়। মধু দা (মধূসুদন দে) ও গোবিন্দ দেবের মরদেহ আমি নিজ হাতে এনেছি। তাদের রক্তে আমার পুরো শরীরে মেখে গিয়েছিল।

তিনি আরও বলেন, পরে আমাদেরকে গুলি করে। আমি জ্ঞান হারিয়ে পড়ে যাই। তবে আমার গায়ে গুলি লাগেনি। পাশের জনের গায়ে গিয়ে লেগেছিল। তার রক্তে আমার শরীর মেখে গিয়েছিল। পরে উঠে আমি দৌড়ে পালিয়েছি। ওইরাতে আনুমানিক একশ জনকে পাকিস্তানি বাহিনী হত্যা করেছে।

রোকেয়া হলের লিফটম্যান আহম্মদ আলী ফরাজীকেও ওইরাতেই হত্যা করে পাকিস্তানি হানাদাররা। সেসময় বাবার খোঁজে ঢাকা আসেন তার নয় বছরের ছেলে মোশারফ হোসেন।

বাবা হারানোর স্মৃতিচারণ করে তিনি বলেন, যখন আসি, দেখি রোকেয়া হলের এখানে (একটি জায়গাকে লক্ষ্য করে) মরদেহের স্তূপ জমা হয়ে রয়েছে। কারও হাত, কারও পা, আবার কারও চুল দেখা যাচ্ছে। সেসময় রোকেয়া হলের স্টাফ পিয়ারি লালের সাথে দেখা হয়। তাকে দেখে বলি, দাদা আমার আব্বা কোথায়? তাকে তো দেখছি না। তখন পিয়ারি লাল উত্তর দেয়, ‘বাবারে রোকেয়া হলের অনেক স্টাফকেই তো পাকিস্তানিরা মেরে ফেলেছে। তোমার বাবাকেও হয়ত তারা মেরে ফেলেছে।’

তিনি বলেন, মার্চ মাস আসলে এখনও ঘুমাতে পারি না। আমাদের গ্রামের বাড়ি থেকেই আগুনের লেলিহান শিখা দেখা গিয়েছিল। এগুলো এখনও মনে হয়।

তৎকালীণ পূর্ব পাকিস্তানকে যেকোনো মূল্যে ধরে রাখতেই পাকিস্তান এমন গণহত্যা চালায় বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সেন্টার ফর জেনোসাইড স্টাডিজের পরিচালক হাফিজুর রহমান কার্জন বলেন, পাকিস্তানি বাহিনী তিনটি পর্যায়ে গণহত্যা চালিয়েছে। প্রথম পর্যায়টি ছিল অপারেশন সার্চ লাইট। এটি ছিল শহরকেন্দ্রিক। অপারেশন সার্চ লাইটের প্রথম তিনদিনেই ঢাকা শহরের প্রায় পঞ্চাশ হাজার মানুষকে হত্যা করা হয় বলে জানান তিনি।

এনকে/এটিএম

Exit mobile version