Site icon Jamuna Television

অনিয়ম পর্ব-১: কৃষি ব্যাংকে ঋণ পান না কৃষকরাই

ছবি- সংগৃহীত

আলমগীর হোসেন:

কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধি এবং খাদ্য নিরাপত্তায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে ব্যাংক ঋণের। এ ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি অবদান ছিল বিশেষায়িত বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকের। তবে সময়ের সাথে সেই চিত্র বদলেছে অনেকটাই। কৃষির চেয়ে বাণিজ্যিক খাতে অর্থায়নেই মনোযোগ বেশি ব্যবস্থাপকদের। যার প্রমাণ মিলেছে বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিদর্শনেও।

গত ৫ বছরের তথ্য অনুযায়ী, ব্যাংকটির গ্রাহকদের প্রতি ২৯ জনে মাত্র একজন কৃষক ঋণ পেয়েছেন। বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিদর্শনে উঠে এসেছে, খাদ্য নিরাপত্তায় ব্যাংকটির উল্লেখ করার মতো অবদান নেই। কৃষি ঋণের লক্ষ্য অর্জন নিয়েও নয়-ছয়ের প্রমাণ মিলেছে। বিশ্লেষকরা বলছেন, আর্থিক সূচকেও অবনতি হয়েছে। বেড়েছে অনিয়ম ও জালিয়াতি। তবে ব্যাংকটির কর্মকর্তারা বলছেন, কৃষিখাতে তাদের মনোযোগ কমেনি বরং ঋণের পরিমাণ বেড়েছে।

অনুসন্ধানে মিলেছে, ব্যাংকটির স্বল্প মেয়াদি কৃষি ঋণের পরিমাণ ১৮ হাজার কোটি টাকার কিছু বেশি। এরমধ্যে সাড়ে ৮ হাজার কোটি টাকাই পুনঃতফসিলকৃত। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, গত ৫ বছরে ৫ লাখ ৬ হাজার ৫২৭ গ্রাহককে ঋণ দিয়েছে কৃষি ব্যাংক। এরমধ্যে কৃষিতে নিয়োজিত গ্রাহক মাত্র ৩ দশমিক ৪৭ শতাংশ।

এছাড়া, কৃষি ঋণের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন নিয়েও বাংলাদেশ ব্যাংককে বিভ্রান্তিকর তথ্য দিয়েছে কৃষি ব্যাংক। সাড়ে ৬ হাজার কোটি টাকা লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে ৭ হাজার ৫০২ কোটি টাকা বিতরণের তথ্য দেয়া হলেও প্রকৃতপক্ষে তারা বিতরণ করেছে ৫ হাজার ৩১১ কোটি টাকা। ঋণ বিতরণে তথ্যের গড়মিল রয়েছে ২ হাজার ১৯০ কোটি টাকার। কৃষি ঋণের বিভ্রান্তিকর পরিসংখ্যাণের বিষয়ে ব্যাখ্যা চেয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।

বেসরকারি ব্যাংক নির্বাহীদের সংগঠন অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশের (এবিবি) সাবেক চেয়ারম্যান নুরুল আমিন বলেন, প্রতিষ্ঠাকালীন যে লক্ষ্য-উদ্দেশ্য এবং সরকারের যে নীতিমালা, সেখান থেকে কৃষির ঋণ বাড়াতে পারে। তবে একেবারে কমিয়ে দিতে পারে না। কৃষি ঋণের ক্ষেত্রে কৃষি ব্যাংকের অবস্থা যদি এই হয়, তাহলে ধরেই নিতে হবে তারা নিজ কার্যক্রম থেকে লক্ষ্য অন্যত্র সরিয়ে নিয়েছে। এটি কাম্য কিনা সেটি মূল্যায়ন করতে হবে।

তিনি আরও বলেন, ম্যানেজমেন্ট অদক্ষ। তারা তথ্য গোপন করার সুযোগ যখন নিয়েছে, তখন বাংলাদেশ ব্যাংকের ব্যবস্থা নেয়ার সুযোগ ছিল। কোনো অন্যায় করে ছাড় পাবে এমনটি চলতে পারে না।

বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ব্যাংক ম্যানেজমেন্টের (বিআইবিএম) সাবেক মহাপরিচালক ড. তৌফিক আহমেদ চৌধুরী বিষয়টি নিয়ে বলেন, কৃষি ব্যাংক উন্নয়ন কাজের ব্যাংক। এর উদ্দেশ্যই ছিল উন্নয়নের জন্য কৃষিতে ঋণ প্রদান করা। তাদের এই ডাটা দেখার পর মনে হচ্ছে এই নাম রাখাই উচিত না। কৃষি ব্যাংকের ‘কৃষি‘ শব্দটা পরিবর্তন করা উচিত।

তবে এসব বিষয়ে বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শওকত আলী খান বলেছেন, ব্যাংকটির ঋণ বিতরণে বৈচিত্র্য আনা হয়েছে। কৃষিতে ঋণ বিতরণ কমেনি, ববং অনেক ক্ষেত্রে বেড়েছে। তিনি বলেন, কৃষিভিত্তিক এসএমইতেও ঋণ বাড়ানোর উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে।

/এনকে

Exit mobile version