Site icon Jamuna Television

অনিয়ম পর্ব-৩: অব্যবস্থাপনায় কৃষি ব্যাংকের এক-তৃতীয়াংশের বেশি আমানতকারী ঝুঁকিতে

ফাইল ছবি

আলমগীর হোসেন:

খেলাপি ঋণসহ প্রতিটি আর্থিক সূচকেই দুর্বল হয়েছে বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক। এতে ব্যাংকটির এক-তৃতীয়াংশের বেশি আমানতকারীই আছেন ঝুঁকিতে। সাড়ে ২৮ হাজার কোটি টাকার ঋণের বিপরীতে পর্যাপ্ত জামানত নেই। প্রায় ১৭ কোটি টাকা মূলধন ঘাটতিতে থাকা বিশেষায়িত কৃষি ব্যাংকের পুঞ্জীভূত লোকসানের পরিমাণ প্রায় সাড়ে ১৫ হাজার কোটি টাকা। বিশ্লেষকরা বলছেন, নিয়ম বহির্ভূতভাবে বিতরণের কারণে মন্দ ঋণের পরিমাণ বাড়ছে। ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষকে জবাবদিহিতার আওতায় আনার পরামর্শও তাদের।

বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিদর্শন প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সাড়ে ৪৯ হাজার কোটি টাকার মধ্যে আদায়যোগ্য সম্পদ এবং ভালো মানের ঋণের পরিমাণ ২১ হাজার কোটি টাকারও কম। ২৮ হাজার ৬শ’ কোটি টাকার বিপরীতে পর্যাপ্ত আদায়যোগ সম্পদ না থাকায় ঝুঁকির মুখে রয়েছেন আমানতকারীরা। তারল্য সংকট দেখা দিলে সরকারি সহায়তা ছাড়া আমানতকারীদের অর্থ ফেরত দিতে পারবে না ব্যাংকটি।

আরও পড়ুন: অনিয়ম পর্ব-১: কৃষি ব্যাংকে ঋণ পান না কৃষকরাই

বিশ্লেষকরা বলছেন, ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষের দুর্বলতা এবং অদক্ষতার কারণে খেলাপি ঋণ বেড়েছে। কমেছে সম্পদের গুনগত মান। বিপুল অর্থ বিনিয়োগের পরও তথ্য-প্রযুক্তি নির্ভর ব্যবস্থাপনা পদ্ধতি চালু করা সম্ভব হয়নি কৃষি ব্যাংকে।

বেসরকারি গবেষণা সংস্থা পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ মনসুর বলেন, আমানতকারী, বিনিয়োগকারী কিংবা সরকারের যারা টাকা দিয়েছে সবার টাকাই ঝুঁকির মধ্যে পড়ে গেছে। এই টাকা পাওয়ার সম্ভাবনা নেই। কাজেই শেষ পর্যন্ত সরকারকেই টাকা দিতে হবে। সেজন্য যারা নিয়ন্ত্রণের দায়িত্বে রয়েছে তাদের কাজ ছিল অব্যবস্থাপনাগুলো প্রতিরোধ করা।

আরও পড়ুন: অনিয়ম পর্ব-২: কৃষি ব্যাংকের ৫ হাজার কোটি টাকার খেলাপি ঋণের হিসাব নেই

অগ্রণী ব্যাংকের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ আবু নাসের বখতিয়ার আহমেদ বলেন, ঋণ দেয়ার আগে যেসব বিষয়গুলো দেখতে হয় তা সঠিকভাবে মিলিয়ে নেয়ার প্রয়োজন। এসব ক্ষেত্রে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা থাকতে হবে। জবাবদিহিতা না থাকার কারণেই তারা পার পেয়ে যাচ্ছে।

খেলাপি থেকে কৃষি ব্যাংকের বছরে ২০ শতাংশেরও কম অর্থ আদায় হচ্ছে। বাংলাদেশ ব্যাংক বলছে- এটি কোনভাবেই গ্রহণযোগ নয়। কৃষি ব্যাংকের মূলধন ঘাটতি ১৬ হাজার ৭শ’ কোটি টাকা। আর পুঞ্জিভূত লোকসান সাড়ে ১৫ হাজার কোটি টাকা। ব্যাংকটির দুর্বল আর্থিক অবস্থার জন্য ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষকে দায়ী করা হচ্ছে। শীর্ষ কর্তৃপক্ষকে জবাবদিহিতার আওতায় আনা ছাড়া ব্যাংকটির ভালো করা সম্ভব নয় বলে মনে করেন বিশ্লেষকরা।

বিষয়টি সম্পর্কে পিআরই’র নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ মনসুর বলেন, জালিয়াতি ও জোচ্চুরির মাধ্যমে টাকা লোপাট যাচ্ছে। এর নিয়ন্ত্রণকারীরা বিষয়টি দেখবেন না কিংবা তারাও আইনের আওতায় আসছে না, এটি গ্রহণযোগ্য নয়।

অগ্রণী ব্যাংকের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ আবু নাসের বখতিয়ার আহমেদ বলেন, ব্যাংকের অনিয়মে চুনোপুটিদের ধরা হয়। যে ঋণ নিয়ে আসলো তাকে ধরা হয়, কিন্তু যারা ঋণ পাস করলো মানে প্রতিষ্ঠানের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী বা বোর্ড তাদের কোনো বিচার হচ্ছে না। তারা শাস্তির আওতায় আসছে না। একের পর এক অপরাধ করে তারা পার পেয়ে যাচ্ছে।

তবে কৃষি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শওকত আলী খানের দাবি, ব্যাংকটিকে লাভজনক অবস্থায় নিয়ে যেতে কাজ করছেন তারা। ব্যাংকিং কার্যক্রম পরিচালনার প্রতিটি পর্যায়ে সুশাসন নিশ্চিতে উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। তিনি বলেন, কৃষি ব্যাংক শতভাগ সরকারি তাই আমানত নিয়ে ঝুঁকির মধ্যে থাকার কোনো প্রশ্নই ওঠে না। অভ্যন্তরীণ সুশাসন নিশ্চিতে প্রতিটি শাখায় নির্দেশনা দিয়েছেন বলেও জানান তিনি।

/এনকে

Exit mobile version