Site icon Jamuna Television

নিউমার্কেট এলাকায় ইঞ্চি হিসেবে বিক্রি হয় ফুটপাত, দৈনিক চাঁদা তোলা হচ্ছে কোটি টাকা

মনিরুল ইসলাম:

ইঞ্চি বা ফুট হিসেবে বিক্রি হচ্ছে ফুটপাত। আর তা কিনছেন প্রভাবশালীরা। বছরের পর বছর এই ফুটপাত ভাড়া দিয়ে চলছে ব্যবসা। আবার যে অংশ বিক্রি হয়নি সেখানকার হকারদের থেকেও প্রতিদিন তোলা হয় গড়ে ৫০০ টাকা। রাজধানীর নিউমার্কেট এলাকায় এভাবেই চলছে দিনের পর দিন। সিটি করপোরেশনসহ সরকারি সব সংস্থার নাকের ডগায় ফুটপাত থেকে তোলা হচ্ছে কোটি কোটি টাকা। সবার পকেটে ভাগ যাওয়ায় চাঁদাবাজি বন্ধের উদ্যোগও নেই।

যমুনা নিউজের অনুসন্ধানে জানা গেলো, স্থানভেদে ৬-৭ ফুট জায়গার জন্য গুণতে হয় ৫-২০ লাখ টাকা পর্যন্ত। প্রভাবশালী ও সামর্থবানরা পজিশন কিনে মাসিক ৫-১০ হাজার টাকায় তা ভাড়া দেন হকারদের কাছে। আর এসব হকাররা নিজেদের পরিচয় দেন কর্মচারী হিসেবে।

বাংলাদেশ হকার্স লীগের সভাপতি এম এ কাশেম বলেন, ফুটপাতে তিন বাই চার ফুটের একটি পজিশন বিক্রি হয় ৫-১০ লাখ টাকায়। পজিশনের মালিক কমপক্ষে প্রতি মাসে ৬ হাজার টাকা ভাড়া পান। আর চাঁদাবাজ দিনে ১০০ থেকে ৫০০ টাকা পর্যন্ত চাঁদা নেয়।

ফুটপাতের যে জায়গা বিক্রি হয় না, সেখানে হকার বসিয়ে সরাসরি চাঁদাবাজি করে লাইনম্যানরা। যাদের নিয়ন্ত্রণ করেন প্রভাবশালীরা। পুরো নিউমার্কেট এলাকা ৩০টি লাইনে ভাগ করে চলে চাঁদাবাজি। দোকানভেদে প্রতিদিন হকারদের থেকে তোলা হয় ৩শ’ থেকে ৮শ’ টাকা। দৈনিক ও সাপ্তাহিক হিসেবে টাকা তোলে ভাগ-বাটোয়ারা করে সবপক্ষ।

এম এ কাশেম আরও বলেন, নিউমার্কেটের সামনে পশ্চিমাংশের ফুটপাতের চাঁদাবাজ হলো সাত্তার মোল্লা, আর পূর্ব পাশের চাঁদাবাজ ইব্রাহিম ইবু। যখন যে দল ক্ষমতায় থাকে, তারা এদেরকে প্রশ্রয় দেয়। সাত্তার মোলা, ইবুরা বিএনপির সময়ও চাঁদাবাজি করেছে।

গত ২৬ মার্চ নিউমার্কেট থানায় একটি চাঁদাবাজির মামলা করে কয়েকজন হকার। ৪ আসামিকে গ্রেফতারের পর জানা যায়, এরা বহুবছর ধরে লাইনম্যানদের গ্রুপ চালায়। তাদের বড় ভাই হিসেবে ফুটপাত নিয়ন্ত্রণ করে ক্ষমতাসীন দলের নিউমার্কেট ও ১৮ নম্বর ওয়ার্ডের নেতারা। ফুটপাত নিয়ন্ত্রণ করে লাইনম্যান ও নেতারা ঢাকায় গাড়ি-বাড়ির মালিক। আটককৃতদের কাছ থেকে এসব নেতার নাম পেয়েছে পুলিশ।

ঢাকা মহানগর পুলিশের রমনা বিভাগের উপ-কমিশনার আশরাফ হোসেন বলেন, যতটুকু জানা গেছে, এর পেছনে অনেক বড় শক্তি আছে। এখানে অনেক টাকার বিষয়। হকারের সংখ্যাও কয়েক হাজার, চাঁদাবাজ যারা আছে তারাও কয়েকশ। যে টাকা তোলা হয় প্রতিদিনের হিসাব করলে তা অনেক। যারা এই টাকা তুলছে এবং কলকাঠি নাড়ছে, তাদেরকে আমরা আইনের আওতায় নিয়ে আসবো।

মূলত, প্রতিবার যখন ফুটপাত তুলে দেয়ার প্রসঙ্গ আসে, তখন সরকার থেকে বলা হয় এসব মানুষের জীবন-জীবিকার কথা ভেবে বন্ধ হয় না। কিন্তু আসলে সেটা বড় কারণ নয়। একটা অঙ্ক করলেই এর কারণ বের হবে। নিউমার্কেট এলাকায় অন্তত ২০ হাজার হকার আছে। গড়ে প্রতিদিন ৫০০ টাকা তুললে দিনে এক কোটি, মাসে ৩০ কোটি আর বছরে সাড়ে তিনশ কোটি। এই টাকার লোভেই দখল উচ্ছেদ হয় না পথচারীদের ফুটপাত।

/এমএন

Exit mobile version