Site icon Jamuna Television

ঈদ আনন্দ ধরা দেয় না প্রবাসীদের, উৎসব আসে যায় কষ্ট ফুরোয় না

মালয়েশিয়ার এই প্রবাসীরা ঈদের দিন সন্ধ্যায় একসঙ্গে ঘুরতে বের হয়েছিলেন

আহমাদুল কবির, মালয়েশিয়া:

ঈদ মানে আনন্দ, ঈদ মানে খুশি! প্রচলিত এই কথাটি সত্য হলেও প্রবাসীদের জীবনে এর বাস্তবতা খুঁজে পাওয়া কঠিন। প্রবাসীদের ঈদ ভিন্ন রকম। প্রবাসে অনেকেই আছেন যাদের কাছে ঈদের দিনটাও কষ্টের।

মুসলমানদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব ঈদকে কেন্দ্র করে মানুষের প্রত্যাশা আর প্রস্তুতির কমতি থাকে না। একের পর এক ঈদ আসে যায়, তবে লাখ লাখ প্রবাসী বাংলাদেশির জীবনে ঈদের আনন্দ আসে না। পরিবারহীন নিঃসঙ্গ জীবন কুঁড়ে কুঁড়ে খায় তাদের। ভার্চুয়াল যুগে অন্যদের ঈদ উদযাপন দেখলে যেন আরও পীড়া দেয়া পরিবার ছেড়ে থাকে এসব প্রবাসীদের।

ফজরের আজানের পর দল বেঁধে ছোটাছুটি করে গোসল সেরে মিষ্টি মুখে নতুন জামা-কাপড় পরে ঈদগাহ মাঠে যাওয়া প্রবাসীদের জন্য যেন শুধুই স্মৃতি। নামাজ পড়তে যাওয়ার সময় পাশের বাড়ির কেউ সেমাই খেতে ডাকেন না। শত কর্মব্যস্ততার মাঝে ঈদের ছুটিতে লম্বা ঘুম অধিকাংশ প্রবাসীর ঈদের দিনে মূল কর্মসূচি!

ঈদের নামাজ শেষে পরিবারের সঙ্গে মোবাইলে কথা বলার পর বুকের ভেতর কষ্টের তীব্রতা যেন আরও বেড়ে যায়। বুকফাটা যন্ত্রণাকে বুকে নিয়ে বিছানায় হয়তো চোখের পানিতে বালিশ বিজিয়ে ঘুমানোর চেষ্টা করেন অনেকে! আর এরপর দুপুর গড়িয়ে পুবের সূর্যটা পশ্চিমে হেলতে শুরু করে। বিছানা ছেড়ে দু’একজন বন্ধুকে সঙ্গে নিয়ে সামান্য আনন্দের প্রত্যাশায় অজানার উদ্দেশ্যে ছুটে চলা। এভাবেই কেটে যায় প্রবাসীদের ঈদ নামের নিঃসঙ্গ বেদনার দিনটি।

বাংলাদেশের সাথেই রোজা শুরু হলেও বুধবার ঈদ উদযাপন করেছে মালয়েশিয়া। ঈদের পরদিন বৃহস্পতিবার পড়ন্ত বিকেলে রাজধানী কুয়ালালামপুর শহরের প্রাণকেন্দ্রে মারদেকা স্কয়ারে কয়েকজন প্রবাসীর সঙ্গে তাদের ঈদ ভাবনা নিয়ে কথা হয়। আলাপকালে তারা জানিয়েছেন ঈদের অনুভূতি। আর তাতেই উঠে এসেছে পরিবারকে কাছে না পাওয়ার কষ্ট আর যন্ত্রণার কথা।

কুমিল্লার তিতাস উপজেলার নজরুল, কবির, সুমন, মো. মুছা মোল্লা, ফয়সাল ও ইসমাইল হোসেন ১০ থেকে ১১ বছর ধরে মালয়েশিয়ায় কর্মরত। নজরুল বলেন, ঈদ মানে আনন্দ হলেও, প্রবাসীদের কাছে তা কষ্টের। জীবিকার প্রয়োজনে প্রিয়জনদের ছাড়া একাকি ঈদ উদযাপন করতে হয়। সবসময় তো বটেই, ঈদের সময় পরিবারের সবাইকে খুব বেশি মিস করি।

ঈদের নামাজ পড়ে এসে ঘুমান, বিকেলে বন্ধুদের নিয়ে কিছুটা সময় আড্ডা দিয়ে বাসায় ফিরে আসেন- এই হলো প্রবাসীদের ঈদ বলেও জানান নজরুল।

কবির বলেন, দেশে পরিবারের সঙ্গে কাটানোর চেষ্টা করলেও বিভিন্ন কারণে যাওয়া হয়নি, বেশ খারাপ লাগছে। দেশে যেতে না পারলেও, ফোনে পরিবারের সঙ্গে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রক্ষা করার চেষ্টা করেন। এভাবেই কার ১০ বছরের প্রবাস জীবনের ঈদ কেটেছে।

ফয়সাল বলেন, ঈদের সময় পরিবারের সবাইকে খুব মিস করি। বন্ধু-বান্ধবদের নিয়ে আনন্দ করে কষ্ট ভুলে থাকার চেষ্টা করেন তিনি।

ইসমাইল বলেন, প্রবাসের কষ্টটা একটু অন্য রকম। সব আছে, তবু যেন কিছুই নেই। প্রবাসী না হওয়া পর্যন্ত কেউ তাদের কষ্ট অনুভব করতে পারবে না। ঈদের মতো বিশেষ উৎসবগুলো প্রবাসীদের কষ্ট কয়েকগুণ বাড়িয়ে দেয় বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

/এনকে

Exit mobile version