Site icon Jamuna Television

হঠাৎ পাকিস্তান সফরে কেন গেলেন রইসি?

কূটনৈতিক সম্পর্ককে মজবুত করতে তিন দিনের সফরে পাকিস্তান পৌঁছেছেন ইরানের প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রইসি। সোমবার (২২ এপ্রিল) কঠোর নিরাপত্তার মধ্যে রাজধানী ইসলামাবাদে পৌঁছান তিনি। আগামী বুধবার পর্যন্ত তিনি পাকিস্তানেই অবস্থান করবেন বলে জানিয়েছেন দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। এক প্রতিবেদনে কাতার ভিত্তিক সংবাদ মাধ্যম আল জাজিরা এ তথ্য জানায়।

প্রতিবেদনে বলা হয়, গাজা যুদ্ধকে আঞ্চলিক সংঘাতে পরিণত করার ঝুঁকি নিয়ে ইরান ও ইসরায়েল একে অপরের বিরুদ্ধে হামলা চালানোর কয়েকদিনের মধ্যেই আঞ্চলিক ও দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক নিয়ে আলোচনার জন্য তিন দিনের সফরে পাকিস্তানে গিয়েছেন ইব্রাহিম রইসি।

পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরীফসহ শীর্ষ পাকিস্তানি নেতাদের সাথে আলোচনা করার কথা রয়েছে রইসির। কারণ, দুই প্রতিবেশী দেশ গত জানুয়ারিতে ‘টিট-ফর-ট্যাট’ ক্ষেপণাস্ত্র হামলার পর সম্পর্ক সংশোধন করতে চাচ্ছে বলে জানিয়েছে যুক্তরাজ্যের সংবাদ সংস্থা রয়টার্স।

পাকিস্তানের স্থানীয় মিডিয়া জানিয়েছে যে, রইসি পাকিস্তানের সামরিক প্রধান জেনারেল আসিম মুনিরের সাথেও দেখা করবেন, যিনি ইতোমধ্যে দক্ষিণ এশিয়ার দেশটিতে বিশাল রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক প্রভাব বিস্তার করেছেন।

হঠাৎ পাকিস্তান সফরে কেন গেলেন রাইসি? 

আন্তর্জাতিক রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, দুই প্রতিবেশী দেশের অর্থনৈতিক, সীমান্ত ও জ্বালানি সম্পর্ক জোরদার করার লক্ষ্যে ইসলামাবাদে পৌঁছেছেন রাইসি।

ইরানের প্রেসিডেন্ট কার্যালয় থেকে সোমবার এক বিবৃতিতে জানানো হয়, ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরান পাকিস্তানের সাথে সম্পর্ক উন্নয়নে আগ্রহী এবং এই সফরের সময় অর্থনৈতিক ও বাণিজ্যিক সমস্যা, জ্বালানি এবং সীমান্ত সমস্যাসহ নানা বিষয়ে পাকিস্তান সরকারের সাথে আলোচনা করা হবে।

এদিকে, রোববার জারি করা এক বিবৃতিতে পাকিস্তানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক উন্নয়নের আহ্বান জানিয়েছে।

বিবৃতিতে বলা হয়েছে, পাকিস্তান-ইরান সম্পর্ককে আরও শক্তিশালী করতে এবং বাণিজ্য, জ্বালানি, কৃষি ও জনগণের মধ্যে যোগাযোগসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে সহযোগিতা বাড়াতে উভয় পক্ষের একটি বিস্তৃত এজেন্ডা থাকবে।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রাক্তন উপদেষ্টা মোশাররফ জাইদি একটি লিখিত বিবৃতিতে বলেছেন যে, ইসরায়েলের সাথে একটি বিপজ্জনক সংঘাতের দিকে যাচ্ছে ইরান। এমন সময়ে, ইসলামাবাদ ও রাওয়ালপিন্ডি থেকে সমর্থন সুরক্ষিত করার প্রচেষ্টা হিসেবে ইরানের জন্য রইসির সফর খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

জাইদি আরও বলেন, মধ্যপ্রাচ্যে চলমান সংঘাতে পাকিস্তানের জড়িত থাকার সম্ভাবনা সীমিত। কারণ-পাকিস্তানের অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক ও ক্রমবর্ধমান অর্থনৈতিক সঙ্কট, যে ব্যাপারে ইরান ভালভাবেই সচেতন রয়েছে।

কেন পাকিস্তান-ইরান সম্পর্ক গুরুত্বপূর্ণ?

প্রবীণ পাকিস্তানি কূটনীতিক মালিহা লোধি বলেন, সীমান্তে উত্তেজনা থাকা সত্ত্বেও ইরানের সাথে পুনরায় সম্পর্ক দৃঢ় করার সমর্থন করছেন পাকিস্তানের পররাষ্ট্রনীতি বিশ্লেষকরা। ইতোমধ্যে, ভারত ও আফগানিস্তানের সাথে সীমান্তে সমস্যা সৃষ্টি করেছে পাকিস্তান। তাই, ইরানের সাথে একটি স্বাভাবিক, স্থিতিশীল সম্পর্ক রাখা পাকিস্তানের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

এছাড়াও ইসলামাবাদ ও তেহরান দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য বৃদ্ধির লক্ষ্যে কাজ করছে, যা বর্তমানে ২ বিলিয়ন ডলারের বেশি। এছাড়াও দুটি দেশের মধ্যে তরল পেট্রোলিয়াম গ্যাস (এলপিজি) এবং অপরিশোধিত তেলসহ একটি বড় ধরনের অনানুষ্ঠানিক বাণিজ্য রয়েছে। অন্যদিকে, বেলুচিস্তান প্রদেশ এবং পাকিস্তানের অন্যান্য সীমান্ত এলাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহ করে ইরান।

তাছাড়া, দুই প্রতিবেশী দেশের মধ্যে ঘনিষ্ঠ সাংস্কৃতিক ও ধর্মীয় সম্পর্ক রয়েছে। কারণ, পাকিস্তান থেকে প্রতি বছর হাজার হাজার শিয়া সংখ্যালঘু মানুষ ইরানে তীর্থযাত্রায় যায়।

ইরান-ইসরায়েল উত্তেজনায় পাকিস্তান কীভাবে প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে?

১৪ এপ্রিল, ২০২৪। ইসরায়েলের ওপর ইরানের হামলার একদিন পর, পাকিস্তানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় একটি বিবৃতি জারি করে, যাতে দুই দেশকে উত্তেজনা কমানোর আহ্বান জানানো হয়। বিবৃতিতে, ঘটনাগুলোকে “কূটনীতিক বিপর্যয়ের পরিণতি” হিসেবে বিবেচনা করা হয়েছে।

মন্ত্রণালয়ের বিবৃতিতে বলা হয়েছে, এই সংঘাত গুরুতর যখন জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদ আন্তর্জাতিক শান্তি ও নিরাপত্তা বজায় রাখার দায়িত্ব পালন করতে অক্ষম।

এছাড়াও বিবৃতিতে জানানো হয়, পাকিস্তান এই অঞ্চলে শত্রুতা বন্ধ করতে এবং গাজায় যুদ্ধবিরতির জন্য আন্তর্জাতিক মতের ওপর জোর দিয়েছে।

/এআই

Exit mobile version