Site icon Jamuna Television

সড়ক দুর্ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্তদের পরিবারের কষ্ট কি কেউ বোঝে?

গত এপ্রিলে ফরিদপুরে এক সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণ যায় ১৪ জনের। ছবি- ফাইল

এইতো কয়েকদিন আগের ঘটনা। দেড় বছর বয়সী ছোট ছেলেকে কোলে নিয়ে রাস্তা পারাপারের সময় সড়ক দুর্ঘটনার শিকার হন মা জায়েদা। তিনি মারা গেলেও বেঁচে যান তার শিশুপুত্র জায়েদ। শিশুটি মাথায় আঘাত পেয়ে আহত হয়। ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজে মাকে জড়িয়ে ধরে শিশু জায়েদের কান্না সামাজিক মাধ্যমে ভাইরাল হয়। যে দৃশ্য দেখে কেঁদেছিল নেটিজেনরাও।

ছোট্ট জায়দের দুনিয়াতে সবচেয়ে নিরাপদ একখান বুকই ছিল, তার মায়ের। অনিরাপদ সড়ক এক মুহুর্তে সব শেষ করে দিলো। কেন, কীভাবে অথবা এখন কী হবে, অনিশ্চিত ভবিষ্যতের যাবতীয় প্রশ্নের কোনোটারই উত্তর জানা নেই অবুঝ জায়েদের। মায়ের শূন্যতা শিশু জায়েদের কীভাবে পূরণ হবে তার উত্তর কি কারও জানা আছে?

শুধু জায়েদই নয়, সড়ক দুর্ঘটনার শিকার হয়ে যারা প্রাণ হারান, তাদের পরিবারে শোক সারা জীবনের। আর যিনি বেঁচে ফেরেন, তার মধ্যে জমে থাকা আতঙ্ক আর আঘাতের বেদনা কতোটা তীব্র সেটি জানেন কেবল ভুক্তভোগীই। জীবন কি আর থেমে থাকে? বহমান জীবনে প্রতিদিন এই সড়ক দুর্ঘটনা কারও না কারও ভাগ্যে যোগ হয় নির্মমভাবে-অনাকাঙ্ক্ষিতভাবে।

মাকে জড়িয়ে ধরে শিশু জায়েদ। ছবি- সংগৃহীত

স্বজনদের পাঁজর কাপানো কান্নার ধ্বনি আর আহাজারি কেবলই সমবেদনা জাগায়। তারপর আবার নতুন সড়ক দুর্ঘটনা, আবার একটা জীবন সমাপ্তের গল্প। তালিকায় যোগ হয় আরেক বিষাদের অধ্যায়। শুধু থেকে যায় হারানেরা যন্ত্রণা।

কণ্ঠশিল্পী পিয়ালের ‘আমার সব স্মৃতি, তোমরা ভুলে যেও না’- গানের আকুতি কতোটা ছোঁয় আমাদের? স্মৃতি ভুলে না যাওয়ার এই আর্তি আদৌ কি গ্রহণযোগ্য? কারণ আমাদের সড়কে, প্রতিদিন দুর্ঘটনা জাস্ট একটি সংখ্যাই। পিয়াল গত ১১ মে নরসিংদী হাইওয়েতে মর্মান্তিক দুর্ঘটনার শিকার হয় শিল্পী পিয়ালকে বহনকারী মাইক্রোবাস। দুমড়েমুড়চে যাওয়া ওই মাইক্রোবাসটার সাথে পিয়ালও চলে যায়, মুছে যায়, পিষে যায়- যেন তার সব সৃষ্টি-স্বপ্ন।

সড়ক দুর্ঘটনায় মারা গেছেন কণ্ঠশিল্পী পিয়াল। ছবি- ফাইল

একটা দুর্ঘটনা, একটা গুমোট নিস্তব্ধতা, একটা ভারি দীর্ঘশ্বাস। তারপর কতশত সময় বয়ে যায়। কেউ দুর্ঘটনার শিকার হওয়া পরিবারের বুকে লুকানো হাজারো কষ্ট কি দেখতে পান?

এই যেমন, সড়ক দুর্ঘটনায় স্পাইনাল কর্ড ছিড়ে নার্ভ সিস্টেম অকেজো হয়ে যাওয়া অপুর পরিবারের কথাই বলা যাক। বেঁচে থাকার হাজারো স্বপ্ন ভাঙার দৃশ্য যেন অপুর সংসারে। গর্ভবতী স্ত্রীকে নিয়ে আহত অপুর সংসারে এখন শুধুই হাহাকার। অবশ শরীর নিয়ে কোথায় যাবেন অপু? তাইতো অনিরাপদ সড়কের কাছেই নিষ্ঠুর আত্মসমর্পন অপুর স্বজন ও প্রিয়জনদের।

অপু বলেন, এই অবস্থার জন্য কারো ওপর রাগ বা ক্ষোভ নেই। কাকে দোষী বানাবো বা কাকে কী বলবো? সরকারকে গালাগালি করবো, মন্ত্রী বা জনপ্রতিনিধিকে গালি দেবো? তাকে কী লাভ? কোনো লাভ নেই। আজকে ট্রাক বা বাস চালকের বিচার হলে, পরদিন চালকরা অবরোধ করবে। রাস্তাঘাট বন্ধ করে দেবে। এগুলোর বিচার তো বাংলাদেশে নেই। তাই বিচারের আশাও করা যায় না।

অপুর স্ত্রী বলেন, কী হবে জানি না। স্বপ্ন দেখি সে আবার সুস্থ্য হয়ে স্বাভাবিক জীবনে ফিরবে। এখন স্বপ্ন দেখা ছাড়া আর কী করার আছে।

সড়ক দুর্ঘটনায় আহত অপু কি ফিরতে পারবে স্বাভাবিক জীবনে? পিয়াল কি আর গাইবে আর কণ্ঠ ছেড়ে-বন্ধুদের আড্ডায়, অড সিগনেচারের হয়ে কনসার্টে কিংবা শিশু জায়েদের কখনো কি মনে জাগবে না মায়ের জন্য হাহাকার? এমন অজস্র প্রশ্ন, কে দেবে তার জবাব?

/এনকে

Exit mobile version