Site icon Jamuna Television

নাটকীয় ম্যাচে পাকিস্তানকে হারিয়ে সুপার এইটের পথে ভারত

ছবি: সংগৃহীত

টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের হাইভোল্টেজ ম্যাচে চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী পাকিস্তানকে ৬ রানে হারিয়েছে ভারত। টসে হেরে আগে ব্যাট করতে নেমে নাসিম শাহ-মোহাম্মদ আমিরদের বোলিং তোপের মুখে পড়ে ভারতের ব্যাটাররা। ব্যাটিং ব্যর্থতার দিনে ভারতের হয়ে একা লড়াই চালান রিশাভ পান্ত। তবে শেষ দিকে হারিস রউফের পেস আগুনে ৬ বল বাকি থাকতেই ১১৯ রানে গুটিয়ে যায় ভারতের ইনিংস। সহজ লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে মুখ থুবড়ে বাবর আজমের দলের। ভারতের পেসাররাও অসাধারণ পারফরম্যান্স দেখিয়ে ১১৩ রানে আটকে দেয় বাবরবাহিনীকে।

রোববার (৯ জুন) নিউ ইয়র্কের নাসাউ কাউন্টি আন্তর্জাতিক স্টেডিয়ামে টস জিতে ভারতকে ব্যাটিংয়ে পাঠান পাক অধিনায়ক বাবর আজম। ব্যাট করতে নেমে শাহিন আফ্রিদিকে ছক্কা হাঁকিয়ে রানের খাতা খোলেন রোহিত শর্মা। প্রথম ওভারে ৮ রান সংগ্রহ করে ভারত। এরপর বৃষ্টির কারণে বেশ কিছু সময় খেলা বন্ধ থাকে। বৃষ্টি থামার পর ব্যাট করতে নেমে পাক পেসারদের তোপের মুখে পরে ভারত।

ইনিংসের দ্বিতীয় ওভারে প্রথম বলেই নাসিম শাহকে বাউন্ডারি হাঁকান কোহলি। এই স্বস্তি অবশ্য শেষ হয়ে যায় এক বল পরেই। নাসিমের করা ওই ওভারের তৃতীয় বল মোকাবিলায় উড়িয়ে মারতে গিয়ে কাভার পয়েন্টে উসমান খানের হাতে ক্যাচ দিয়ে সাজঘরে ফেরেন ৪ রান করা কোহলি। এরপর ইনিংসের তৃতীয় ওভারে রোহিতকে প্যাভিলিয়নে ফিরিয়ে পাকিস্তানকে দ্বিতীয় সাফল্য এনে দেন শাহিন আফ্রিদি। দলীয় ১৯ রানে ১২ বলে ১৩ রান করে সাজঘরে ফিরে যান ভারতীয় অধিনায়ক।

এই দুই ওপেনারের বিদায়ের পর আক্সার প্যাটেলকে সঙ্গে নিয়ে শুরুর ধাক্কা সামাল দেয়ার চেষ্টা করেন রিশাভ পন্থ। পাওয়ারপ্লে’তে ২ উইকেট হারিয়ে ৫০ রান তুলে ভারত। আক্সারকে নিয়ে রিশাভ পান্ত ইনিংস মেরামতের চেষ্টা করেছিলেন। তবে জুটিটা ৩৯ রানের বেশি হয়নি। 

অষ্টম ওভারে নাসিমকে তেড়ে মারতে গিয়ে উল্টো নিজের স্টাম্প হারিয়ে ফেলেন আক্সার। ১৮ বলে ২০ রান আসে তার ব্যাট থেকে। সুরিয়াকুমার যাদব (৭) বিপদে হাল ধরতে পারেননি। শিবম দুবেকে (৩) ফিরতি ক্যাচে নিজের তৃতীয় শিকার বানান নাসিম। 

৯৫ রানে ৫ উইকেট হারিয়ে বিপাকে পড়া ভারতের আশার আলো হয়ে ছিলেন পান্ত। চল্লিশ ছাড়ানো ইনিংস খেলেন তিনি, কিন্তু হাফ সেঞ্চুরির দেখা পাননি। মোহাম্মদ আমির তাকে ও রবীন্দ্র জাদেজাকে (০) পরপর প্যাভিলিয়নে পাঠান। ৩১ বলে ৬ চারে ৪২ রান করেন পান্ত।

৯৬ রানে সাত উইকেট হারায় ভারত। হার্দিক পান্ডিয়া আগ্রাসী হয়ে উঠতেই বড় শট খেলে ইফতিখার আহমেদের ক্যাচ হন বাউন্ডারির সামনে। ১২ বলে ৭ রান করেন তিনি। ১৮তম ওভারে পরের বলে নতুন ব্যাটার জাসপ্রিত বুমরাহকে ফিরিয়ে হ্যাটট্রিকের সুুযোগ তৈরি করেন হারিস রউফ। ইমাদ ওয়াসিমের সহজ ক্যাচ হয়ে শূন্য রানেই ফেরেন বুমরাহ। ১১২ রানে ৯ উইকেটের পতন ঘটে ভারতের। 

দশম উইকেট জুটিতে মিসফিল্ডিংয়ে কয়েকটি রান বের করে নেয় ভারত। আর সাত রান যোগ করেই গুটিয়ে যায় তারা। ১৯তম ওভারের শেষ বলে মিড অফ থেকে বাবর আজমের দারুণ থ্রোতে মোহাম্মদ রিজওয়ান আর্শদীপ সিংকে (৯) রান আউট করেন।

৪ ওভারে ২১ রান খরচায় নাসিম শাহ নিয়েছেন ৩ উইকেট। ৩ ওভারে ২১ রান দিয়ে ৩ উইকেট নিয়েছেন হারিস রৌফ। ৪ ওভারে ২৩ রান খরচায় ২ উইকেট নিয়েছেন মোহাম্মদ আমির। এছাড়া একটি উইকেট নিয়েছেন শাহীন শাহ আফ্রিদি এবং একটি ছিলো রান আউট।

১২০ রানের ছোট লক্ষ্যে ব্যাট করতে নামলেও শুরু থেকেই সাবধানী ছিলেন বাবর আজম ও মোহাম্মদ রিজওয়ান। পাওয়ার প্লে’তে দু’জন দেখে শুনে খেলতে থাকলেও জাসপ্রিত বুমরাহ’র বিপক্ষে হার মানেন বাবর। স্লিপে দারুণ ক্যাচ নিয়ে বাবরকে প্যাভিলিয়নের পথ দেখান সুরিয়াকুমার।

১০ বলে ১৩ রান করে বাবর বিদায় নিলে তিনে নামা উসমান খানকে নিয়ে রান যোগ করতে থাকেন রিজওয়ান। অনেকটা ধীরগতিতেই এগোতে থাকে পাকিস্তান। তবে বোলিংয়ে এসে নিজের প্রথম বলেই উসমানকে লেগ বিফরের ফাঁদে ফেলেন আক্সার। এরপর ফখর জামান নেমে শুরুটা আক্রমণাত্মক করলেও ৮ বলে ১৩ রান করে হার্দিকের শিকার হন। এরপর রিজওয়ানকে সঙ্গ দিতে আসেন ইমাদ। কিন্তু ১৫তম ওভারের প্রথম বলে ৪৪ বলে ৩১ রান করা রিজওয়ানকে বোল্ড করেন বুমরাহ।

এরপর হার্দিকের বাউন্সারে উইকেট বিলিয়ে দেন শাদাব খানও। ৮৮ রানে ৫ উইকেট হারানো পাকিস্তানের সে সময় প্রয়োজন ২১ বলে ৩২ রান। এরপর ইফতিখার আহমেদকে সঙ্গে নিয়ে পাকিস্তানকে ১০০’র ঘরে নিয়ে যান ইমাদ। শেষ ১১ বলে পাকিস্তানের জয়ের জন্য প্রয়োজন ছিল ২০ রান।

১৯তম ওভারে বুমরাহর বিপক্ষে রানই বের করতে পারেনি পাকিস্তানের ব্যাটাররা। উল্টো উইকেট ছুঁড়ে দিয়ে সাজঘরে ফেরেন ইফতিখার আহমেদ। এরপর শেষ ওভারের প্রথম বলে আর্শদীপ ইমাদকে ফিরিয়ে দিলে আর ম্যাচে ফিরতে পারেনি পাকিস্তান। নাসিম শাহ চেষ্টা করলেও ৬ রানে হারে দলটি। ১১৩ রানে থামে পাকিস্তানের ইনিংস।

ভারতের জয়ের নায়ক বুমরাহ। ৪ ওভারে স্রেফ ১৪ রান দিয়ে ৩ উইকেট নেন ৩০ বছর বয়সী এই পেসার। ম্যাচ সেরার পুরস্কার ওঠে তার হাতেই।

/আরআইএম

Exit mobile version