Site icon Jamuna Television

মাঝ আকাশে নারী যাত্রীকে যৌন হয়রানি করা বাবুকে আবারও ফ্লাইটে ফেরালো বিমান কর্তৃপক্ষ

আব্দুল্লাহ্ তুহিন:

রাষ্ট্রীয় উড়োজাহাজ সংস্থায় নারী যাত্রীকে যৌন হয়রানিসহ নানা অপকর্ম করা লুৎফুর রহমান ফারুকী বাবুকে আবারও ফেরানো হয়েছে বিমানে। সাময়িক বরখাস্তের পর কাজে যোগ দিয়েই আন্তর্জাতিক ফ্লাইট পেয়েছেন বাবু। শাস্তি হিসেবে এক ধাপ পদাবনতি করা হয়েছে ওই কর্মকর্তার। অথচ ভুক্তভোগী নারী যাত্রীর দেয়া লিখিত অভিযোগ প্রাথমিকভাবে প্রমাণের পর ওই কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলা করার কথাও বলেছিলেন বিমান কর্মকর্তারা।

জানা যায়, গত বছরের ১১ জুলাই সিলেট থেকে শারজাহ যাওয়ার পথে বিজনেস ক্লাসের একমাত্র যাত্রী ছিলেন ভুক্তভোগী ওই নারী শিক্ষার্থী। রাত সোয়া ৮টায় উড্ডয়নের পর থেকেই ওই নারী হেনস্তার শিকার হন। বিমানের তখনকার ব্যবস্থাপনা পরিচালককে দেয়া লিখিত অভিযোগে উল্লেখ করা হয়, তাকে একা পেয়ে ফ্লাইট পার্সার লুত্ফর রহমান ফারুকী বাবু অশালীন আলাপ শুরু করেন। একপর্যায়ে কেবিনের লাইট নিভিয়ে ভুক্তভোগীর পাশের সিটে বসেন এবং কুপ্রস্তাব দেন। কিছুক্ষণ পর ওই নারীকে সামনের অন্ধকার অংশে যাওয়ার প্রস্তাবও দেন তিনি। তবে ককপিটের বাইরে ইকোনমি ক্লাস ছাড়া মাঝের পুরো বিজনেস ক্লাসে আর কোনো যাত্রী না থাকায় নিজেকে চরম নিরাপত্তাহীন মনে করছিলেন বলে অভিযোগ করেন ওই ভুক্তভোগী।

অভিযোগের বিষয়ে ৭২ ঘণ্টার মধ্যে জবাব দেয়ার জন্য নোটিশ দেয়া হয় বাবুকে। অশোভন আচরণ ও কুপ্রস্তাবের কারণে কেনো শাস্তিমুলক ব্যবস্থা নেয়া হবে না, তা জানতেও চাওয়া হয় বিমানের পক্ষ থেকে। তবে নির্ধারিত সময়ে কোনো জবাব দেননি অভিযুক্ত ফ্লাইট পার্সার বাবু।

বিষয়টি নিয়ে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের ভারপ্রাপ্ত জেনারেল ম্যানেজার মো. মনিরুল ইসলাম বলেন, তাকে ৭২ ঘণ্টার মধ্যে নোটিশের জবাব দিতে বলা হয়েছিল। তবে তিনি এখনও রেসপন্স (সাড়া দেয়া) করেননি।

সবধরনের ফ্লাইট থেকে অভিযুক্তকে বিরত রাখার পাশাপাশি একটি তদন্ত কমিটিও গঠন করা হয়েছিল। বিষয়টি সম্পর্কে জানতে চাইলে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের ভারপ্রাপ্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক কামরুল হাসান খান বলেন, আমরা এসব নিয়ে আর কথা না বাড়াই। অভিযোগের নিষ্পত্তি আইন অনুযায়ীই হবে।

তবে এমন গুরুতর অভিযোগের পরও রহস্যজনকভাবে বাবুকে আবারও ফেরার সুযোগ দিয়েছে বিমান কর্তৃপক্ষ। দিল্লিসহ আন্তর্জাতিক ফ্লাইটে এখন নিয়মিত দায়িত্ব পালন করছেন তিনি। এবিষয়ে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের মুখপাত্র বোসরা ইসলাম বলেন, তাকে সবচেয়ে বড় শাস্তিই দেয়া হয়েছে। তাকে পদাবনতি দেয়া হয়েছে। সাময়িক বরখাস্ত রাখা হয়েছিল। তিনি একবছর প্রমোশন পাবেন না এবং তাকে এক পদ নিচে নামিয়ে দেয়া হয়েছে। এখন তো তিনি ফ্লাইটে দায়িত্ব পালন করবেনই।

এসব বিষয়ে জানতে অভিযুক্ত বাবুর সঙ্গে বার বার যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাকে পাওয়া যায়নি।

প্রসঙ্গত, এর আগেও যাত্রীদের সাথে বাজে ব্যবহার, একাধিক নারী সহকর্মীকে নিজের ফ্লাটে নাচ প্রশিক্ষণে অংশ নেয়ার প্রস্তাব দেয়ার অভিযোগও ছিল বাবুর বিরুদ্ধে। এছাড়া, ২০১৬ সালে লন্ডনের হিথ্রো বিমানবন্দরে চোরাই সিগারেটসহ ধরা পড়ার ঘটনায় দোষী প্রমাণ হলেও প্রভাবশালীদের সাথে সখ্যতার কারণে পার পেয়ে যান বিতর্কিত এই কর্মকর্তা। এর পর থেকেই দিনে দিনে বিমানে আরও বেপরোয়া হয়ে ওঠেন লুত্ফর রহমান ফারুকী বাবু।

/এনকে

Exit mobile version