Site icon Jamuna Television

বার্বাডোসের তৃতীয় ফাইনাল, ভারতের ১১ নাকি দক্ষিণ আফ্রিকার ২৬ বছরের অপেক্ষার অবসান?

মেহেদী হাসান রোমান⚫

ঢাকা থেকে বার্বাডোসের দূরত্ব সাড়ে ১৪ হাজার কিলোমিটারেরও বেশি। ১০ বছর আগে মিরপুরে শেষবার টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে নকআউটের কোন ম্যাচে মুখোমুখি হয়েছিল ভারত-দক্ষিণ আফ্রিকা। শেষ চারের সেই ম্যাচে সেবার মেন ইন ব্লু’রা জিতলেও ফাইনালে তারা ধরাশায়ী হয় লঙ্কানদের কাছে। অপরদিকে গত ২৬ বছরে আইসিসি ইভেন্টের ফাইনালে খেলেনি দক্ষিণ আফ্রিকা। তাদের একমাত্র ফাইনালও ঢাকায়, ১৯৯৮ আইসিসি নকআউট টুর্নামেন্টে।

২০০৭ সালে আইসিসি বিশ্বকাপ ক্রিকেট দিয়ে প্রথমবারের মতো বৈশ্বিক কোন ইভেন্ট আয়োজন করে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। এটি আসলে কোনো দেশ নয়, অনেকগুলো স্বাধীন দেশের সমন্বয়ে এই পশ্চিম ভারতীয় দ্বীপপুঞ্জ গঠিত। ‘ক্যারিবিয়ান’ হিসেবে সবচেয়ে সহজ হয় এই অঞ্চলকে বুঝতে। তবে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের চলতি আসরসহ এক যুগ আগেও একবার (২০১০ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ) একই সংস্করণের টুর্নামেন্ট আয়োজন করেছিল তারা । প্রতিবারই ফাইনালের আয়োজক বার্বাডোস, ভেন্যু কেনসিংটন ওভাল।

এই ভেন্যুতে চ্যাম্পিয়ন হবার রেকর্ড আছে অস্ট্রেলিয়া ও ইংল্যান্ডের। তৃতীয়বারের মতো আয়োজিত এবারের ফাইনালে মুখোমুখি হবে ভারত-দক্ষিণ আফ্রিকা।

শেষ বার ভারত-দক্ষিণ আফ্রিকা বিশ্বকাপ নকআউট লড়াইয়ে জিতেছিল ভারত। ঢাকা, ২০১৪।

গত ১১ বছর ধরে শিরোপা জিততে পারেনি ভারত। ধোনির প্রাইম টাইম ক্যাপ্টেন্সিতে মাত্র ৬ বছরের ব্যবধানে আইসিসির তিনটি মেজর ট্রফিই জিতেছিল তারা। তবে ২০১৩ সালে বার্মিংহামে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির পর এক দশকে আর ট্রফি জেতেনি মেন ইন ব্লু শিবির। এর মধ্যে তিনটি ওয়ানডে বিশ্বকাপে একবার ফাইনালসহ দুইবার শেষ চারে গিয়ে ইতি টানতে হয়েছে তাদের বিশ্বকাপ যাত্রার। টি-টোয়েন্টির কুফাটা শুরু ঢাকায়, ২০১৪ সালে। সেবার ফাইনালে লঙ্কানদের কাছে হেরে শিরোপা স্বপ্ন ভাঙে ধোনি-কোহলিদের। পরের তিন টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপেও ভক্তদের খুশি করতে পারেনি তারা। শেষবার চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির ফাইনালে পাকিস্তানের বিপক্ষে সেই বিশাল হারও দগ্ধ করেছে ভারতীয়দের। এমনকি বিশ্ব ক্রিকেটের নতুন চোকার হিসেবেও কেউ কেউ ভেবে নিচ্ছেন ভারতকে।

এজবাস্টন, ২০১৩। শেষবার দেখা গিয়েছিল ভারতের এমন উল্লাস।

দক্ষিণ আফ্রিকার নামের সাথে অবশ্য চোকার শব্দটা বিশেষভাবে পরিচিত। তবে তারা ফাইনালও হারেনি কোনদিন। তাহলে তারা চোকার কেন? উত্তরটা হচ্ছে, শেষ চারে গিয়ে হতাশা নিয়ে ফেরা কিংবা অনাকাঙ্ক্ষিত ফলাফল করা। এই যেমন ২০১১ সালে মিরপুরের ঘটনাই ধরা যাক। গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হয়েও অপর গ্রুপের চতুর্থ র‍্যাঙ্কের দল নিউজিল্যান্ডের সাথে হেরে বিদায় নেয় প্রোটিয়ারা। ঠিক ক’দিন আগে এই মাঠেই স্বাগতিক বাংলাদেশকে ৭৮ রানে অলআউট করেছিল তারা। গ্রুপপর্বে আরেক স্বাগতিক ভারতকে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন পর্যন্ত হয়। কিন্তু নকআউটে? সেই একই গল্প।

আপাতত বলা যায় রিয়েল চোকার আর উদীয়মান চোকারদের ক্ল্যাসিকো এই ফাইনাল। ভারত চাইবে ১১ বছর পর শিরোপা জিততে। দক্ষিণ আফ্রিকাও চাইবে ২৬ বছর পর আইসিসি ইভেন্টের ট্রফি জিততে। হ্যা, অনেকেই জানে না দক্ষিণ আফ্রিকার একটি আইসিসি টুর্নামেন্টের শিরোপা আছে। সেই টুর্নামেন্ট আয়োজন করেছিলো বাংলাদেশ। ১৯৯৮ সালের আইসিসি চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি (তখন এই টুর্নামেন্টের নাম ছিল আইসিসি নকআউট টুর্নামেন্ট) জিতেছিলো প্রোটিয়ারা। আর কোন ফাইনালে উঠতে পারেনি তারা।

দক্ষিণ আফ্রিকা একেবারে ট্রফিশূন্য নয়।

টুর্নামেন্টে এখন পর্যন্ত অপরাজিত দুই দল ভারত ও দক্ষিণ আফ্রিকা। একটি দলের জয়রথ থামবে শনিবার। এখন দেখার বিষয় ট্রফি কাকে খুঁজে নেয়। মার্করাম নাকি রোহিত। বুনো উল্লাসে মাতবে কার দল? বার্বাডোস প্রস্তুত। প্রস্তুত দু’দল। ঢাকার প্রতিশোধ কি বার্বাডোসে নেবে প্রোটিয়ারা? নাকি ১৪০ কোটি ভারতীয় ট্রফি জয়ের উৎসবে মাতবে?

Exit mobile version