Site icon Jamuna Television

সেমিফাইনালের মহারণে রাতে মাঠে নামছে স্পেন-ফ্রান্স

ছবি: সংগৃহীত

ইউরোপিয়ান চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনালে জায়গা করে নেয়ার লড়াইয়ে প্রথম সেমিফাইনালে রাতে মুখোমুখি হবে দুই সাবেক বিশ্বচ্যাম্পিয়ন ফ্রান্স ও স্পেন। দলের আক্রমণভাগের ফর্ম নিয়ে চিন্তিত, ফরাসী কোচ। অন্যদিকে, তরুণ দুই উইঙ্গার লামিন ইয়ামাল ও নিকো উইলিয়ামস স্পেনের মূল ভরসা। তবে, মিডফিল্ডার পেদ্রির ইনজুরি বাড়িয়েছে দুঃশ্চিন্তা।

মঙ্গলবার (৯ জুলাই) বায়ার্ন মিউনিখের অ্যালিয়েঞ্জ অ্যারেনায় বাংলাদেশ সময় রাত ১টায় মাঠে গড়াবে স্পেন ও ফ্রান্সের মধ্যকার সেমিফাইনালের ম্যাচটি। বিংশ শতাব্দীতে জার্মান ও ইতালিয়ান আধিপত্যের কাছে অনেকটাই ঢাকা পড়ে ছিল ফ্রান্স ও স্পেনের ফুটবল। কিন্তু ধীরে ধীরে সাম্প্রতিক দশকে বিশ্বের অন্যতম শক্তিশালী ও সফল দুই ফুটবল পরাশক্তি হিসেবে নিজেদের প্রমাণ করেছে ফ্রান্স ও স্পেন।

১৯৮৮ সালের পর এ পর্যন্ত ১৩টি বিশ্বকাপ ও ইউরোর ফাইনালের মাত্র চারটিতে এই দুই দলের কোনো দল খেলার যোগ্যতা অর্জন করেনি। এ সময়ের মধ্যে স্পেন দু’টি ইউরো ও বিশ্বকাপ জিতেছে। অন্য দিকে ফ্রান্স দুইবার বিশ্বকাপ ও ২০০০ সালে একবার ইউরো চ্যাম্পিয়নশিপের শিরোপা ঘরে তুলেছে।

২০১৪ বিশ্বকাপের পর ফ্রান্স শুধু একবার বৈশ্বিক কোন টুর্নামেন্টের ফাইনালে খেলতে পারেনি। ২০২০ ইউরোতে শেষ ষোলতে তারা সুইজারল্যান্ডের কাছে পেনাল্টিতে হেরে বিদায় নিয়েছিল। ২০১৬ ইউরোতে রানার্স-আপ ছাড়াও ২০১৮ বিশ্বকাপে চ্যাম্পিয়ন ও ২০২২ বিশ্বকাপে রানার্স-আপ হয় ফ্রান্স।

সেমিফাইনালে খেলার আগে আক্রমণভাগে অপ্রতিরোধ্য স্পেন। তরুণ দুই উইঙ্গার লামিন ইয়ামাল ও নিকো উইলিয়ামসের উপর ভর করে স্পেন শেষ চারের টিকিট পেয়েছে। গোল করতে পারলে ইউরোর ইতিহাসে সবচেয়ে কম বয়সী খেলোয়াড় হিসেবে গোলের রেকর্ড গড়বেন ইয়ামাল। তবে সর্বোচ্চ তিনটি অ্যাসিস্ট করেছেন তিনি।

১১ গোল করে এখনো পর্যন্ত টুর্নামেন্টে সর্বোচ্চ গোল করার কৃতিত্ব দেখিয়েছে স্পেন। জার্মানিকে কোয়ার্টার ফাইনালে অতিরিক্ত সময়ের শেষ মুহূর্তের গোলে হারিয়ে সেমিফাইনালে খেলতে এসেছে স্প্যানিশরা। এ পর্যন্ত পাঁচ ম্যাচের সব ক’টিতেই জয়ী হয়েছে লা রোজারা। ইউরোর ইতিহাসে পেনাল্টি ছাড়া কোনো দলই পাঁচ এর বেশি ম্যাচে জিততে পারেনি।

ম্যাচের আগে সংবাদ সম্মেলনে স্প্যানিশ কোচ দে লা ফুয়েন্তে বলেন, আমরা ফ্রান্সকে ভয় পাচ্ছিনা। আমাদের জন্য দারুণ এক সুযোগ।এটা আমাদের জন্য আরেকটা ফাইনাল। দেখা যাক কি ঘটে,আমরা আমাদের সেরাটা দিতে প্রস্তুত।

কোয়ার্টার ফাইনালে মূল দলে খেলা তিন খেলোয়াড়কে পাচ্ছে না স্পেন। ডিফেন্ডার ডানি কারভাহাল ও রবিন লি নরমান্ড হলুদ কার্ডের কারণে নিষেধাজ্ঞায় পড়েছেন। অন্যদিকে, পেদ্রি হাঁটুর ইনজুরির কারণে ইউরো থেকে ছিটকে গেছেন।

বিপরীতে কাতার বিশ্বকাপে সর্বোচ্চ ১৬ গোল করা টুর্নামেন্ট ফেবারিট ফ্রান্স শুধু কিলিয়ান এমবাপ্পের উপর আক্রমণে নির্ভর করে শক্তিশালী রক্ষণভাগ নিয়ে এ পর্যন্ত এসেছে। গত পাঁচ ম্যাচে ফ্রান্স শুধু এক গোল হজম করেছে, তা-ও আবার পোল্যান্ডের বিপক্ষে পেনাল্টি থেকে। কাতার বিশ্বকাপে আট গোল করা সুপারস্টার এমবাপ্পে এখনো পর্যন্ত জার্মানিতে একটিমাত্র গোল করেছেন পেনাল্টি থেকে। ইউরো ক্যারিয়ারে এমবাপ্পের এটাই প্রথম গোল।

ইউরো ২০২০ এ অভিজ্ঞ স্ট্রাইকার আঁতোয়ান গ্রিজম্যান ছয় গোল করেছিলেন। একইসাথে দু’টি অ্যাসিস্টও করেছিলেন। কিন্তু জার্মানিতে তাকে খুঁজেই পাওয়া যাচ্ছে না। ফ্রান্স যদি কোনোমতে জিততে পারে তবে সেটা হবে স্পেনের দুর্বল রক্ষণভাগের কারণে। ম্যাচের আগে সংবাদ সম্মেলনে ফরাসি কোচ দিদিয়ের দেশম, আক্রমণভাগ যদি নিজেদের প্রমাণ করে তবে ম্যাচ জয় অনেকটাই সহজ হয়ে যায়। কিন্তু ইউরো কিংবা বিশ্বকাপের মতো বড় টুর্নামেন্টগুলোতে স্টাইকারদের ব্যর্থতায় খুব বেশি দূর এগোনো যায় না।

এখন পর্যন্ত ৩৬ বারের মুখোমুখিতে স্পেন ১৬টি ও ফ্রান্স ১৩টি জয় পেয়েছে, ড্র হয়েছে বাকি ৭টি। বড় আসরে এটা হবে দুই দলের ষষ্ঠ লড়াই। প্রথম চারটির মধ্যে তিনটিই জিতে নেয় ফ্রান্স (১৯৮৪ ইউরোর ফাইনালে ২-০তে, ২০০০ ইউরোর শেষ আটে ২-১-এ ও ২০০৬ বিশ্বকাপের শেষ আটে ৩-১-এ)। সর্বশেষ ২০১২ ইউরোর কোয়ার্টার  ফাইনালে ২-০ গোলে জিতেছে স্পেন। ১৯৯৬ ইউরোর গ্রুপ পর্বে দুই দলের লড়াইটা ড্র হয় ১-১ গোলে।

দুই দলের কোচের মধ্যেও লড়াই দেখতে প্রস্তুত ফুটবলপ্রেমীরা। দর্শনের দিক থেকে দুই কোচের ভিন্ন মত থাকলেও লক্ষ্য কিন্তু একটাই, ১৪ জুলাই বার্লিনের ফাইনাল। শেষ চারটি বড় টুর্নামেন্টের তিনটিতেই ফাইনাল খেলেছে লেস ব্লুজরা। অপরদিকে রেড ফিউরি রাও প্রস্তুত ব্লু’দের হারিয়ে আরেকটি ফাইনালে জায়গা করে নিতে।

/আরআইএম

Exit mobile version