Site icon Jamuna Television

যুগে যুগে হামলার শিকার যুক্তরাষ্ট্রের যেসব প্রেসিডেন্ট

আহাদুল ইসলাম:

ইতিহাসের পাতা ঘাঁটলে দেখা যাবে অন্তত চারজন মার্কিন প্রেসিডেন্ট গুপ্তহত্যার শিকার হয়েছেন। সেই সাথে আরও অনেকজন প্রেসিডেন্ট গুপ্ত হামলার শিকার হয়েছেন। তবে ভয়াবহ এসব হামলা থেকে প্রাণে বেঁচে ফিরেন তারা।

ইতিহাসের কালো অধ্যায়ে আজ যুক্ত হলো আরেকটি ভয়াবহ গুপ্ত হামলা। নতুন টার্গেট যুক্তরাষ্ট্রের ৪৫তম প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। স্থানীয় সময় শনিবার সন্ধ্যা ৬টা ১৫ মিনিটের দিকে পেনসিলভানিয়ায় এক নির্বাচনী জনসভায় বক্তৃতা দেওয়ার সময় এই ঘটনা ঘটে। এতে আহত হলেও প্রাণে বেঁচে গেছেন সাবেক এই প্রেসিডেন্ট। গুলিতে ট্রাম্পের ডান কানের ওপরের অংশে ফুটো হয়ে গিয়েছে। তবে যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে তিনিই প্রথম প্রেসিডেন্ট নন, আরও অনেকজন গুপ্ত হামলা ও গুপ্তহত্যার শিকার হয়েছেন।

ষড়যন্ত্রকারীদের লক্ষ্যবস্তুতে যে চারজন মার্কিন প্রেসিডেন্ট নিহত হয়েছিলেন, তাদের মধ্যে রয়েছেন লিংকন, গারফিল্ড, ম্যাককিনলি এবং জন এফ. কেনেডি। এছাড়াও অনেকজন রয়েছেন যারা গুপ্ত হামলার শিকার হয়েছেন এবং অল্পের জন্য প্রাণে বেঁচে গেছেন।

গুপ্তহত্যার চেষ্টা

৩০ জানুয়ারি, ১৮৩৫ – অ্যান্ড্রু জ্যাকসন

১৮৩৫ সালে, ওয়াশিংটন ডিসিতে একটি অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ায় তৎকালীন প্রেসিডেন্টকে হত্যা করার জন্য লুকিয়ে অপেক্ষা করছিলেন রিচার্ড লরেন্স নামের একজন বেকার চিত্রশিল্পী। তিনি প্রেসিডেন্ট জ্যাকসনকে দুটি ভিন্ন পিস্তল দিয়ে গুলি করার চেষ্টা করেছিলেন, কিন্তু দুটোই ভেস্তে যায়। তিনিই প্রথম ব্যক্তি যিনি একজন মার্কিন প্রেসিডেন্টকে হত্যার চেষ্টার অভিযোগে অভিযুক্ত হন।

তখনকার সময়ের একটি পত্রিকা হেডলাইন করে ‘প্রেসিডেন্টকে হত্যা চেষ্টা’। ছবি: সংগৃহীত।

১৪ অক্টোবর, ১৯১২ – থিওডোর রুজভেল্ট

১৯১২ সালে, একটি সেলুনের কর্মী জন ফ্লাম্যাং শ্র্যাঙ্ক উইসকনসিনের মিলওয়াকিতে প্রেসিডেন্ট রুজভেল্টের বুকে গুলি করেন। আর এমন ঘটনা তখনই হয়, যখন তিনি তৃতীয় মেয়াদে নির্বাচনী প্রচারণা চালাচ্ছিলেন। যাইহোক, রুজভেল্ট হত্যা প্রচেষ্টা থেকে বেঁচে যান।

তখনকার সময়ের একটি পত্রিকা হেডলাইন করে ‘একজন পাগল গুলি করে রুজভেল্টকে। ছবি: সংগৃহীত।

১৫ ফেব্রুয়ারি, ১৯৩৩ – ফ্র্যাঙ্কলিন ডি রুজভেল্ট

১৯৩৩ সালে, প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়ে ফ্লোরিডার মিয়ামির বে ফ্রন্ট পার্কে বক্তৃতা দিচ্ছিলেন ফ্র্যাঙ্কলিন ডি রুজভেল্ট। এমন সময় বেকার রাজমিস্ত্রি জিউসেপ জাঙ্গারা রুজভেল্টকে উদ্দেশ্য করে ৫টি গুলি করেন। গুলিগুলো রুজভেল্টের কিছুই করতে পারেনি। উল্টো রাজমিস্ত্রির ছোঁড়া গুলিতে তৎকালীন শিকাগোর মেয়র আন্তন সেরমাকসহ চারজন আহত ও নিহত হন।

দ্য মিয়ামি হেরাল্ড পত্রিকার শিরোনাম ‘বন্দুকধারীর গুলিতে পাঁচজন আহত’।

১ নভেম্বর, ১৯৫০ – হ্যারি এস ট্রুম্যান

১৯৫০ সালে, দুই পুয়ের্তো রিকান স্বাধীনতাপন্থী কর্মী অস্কার কোলাজো ও গ্রিসেলিও টরেসোলা ওয়াশিংটন ডিসির ব্লেয়ার হাউসে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ৩৩তম প্রেসিডেন্ট হত্যা করার চেষ্টা করেছিলেন। তখন হোয়াইট হাউসের সংস্কারের কাজের জন্য ব্লেয়ার হাউসে অবস্থান করছিলেন হ্যারি এস ট্রুম্যান।

ব্লেয়ার হাউসে অল্পের জন্য বেঁচে যান যুক্তরাষ্ট্রের ৩৩তম প্রেসিডেন্ট। ছবি: সংগৃহীত।

বাড়িতে প্রবেশ করার আগে নিরাপত্তাকর্মীদের সাথে ধস্তাধস্তি-ও হয় হামলাকারীদের। সেসময় নিশ্চিত গোলাগুলি-ও হয়েছিল। কিন্তু প্রেসিডেন্টকে হত্যার চেষ্টা শেষ পর্যন্ত ব্যর্থ হয়েছিল এবং একজন আক্রমণকারী নিহত হয়েছিল। অন্যজনকে বন্দী করা হয়। সেই হামলায় হোয়াইট হাউসের এক পুলিশ কর্মকর্তা লেসলি কফেল্ট নিহত হন।

৫ সেপ্টেম্বর, ১৯৭৫ – জেরাল্ড ফোর্ড

১৯৭৫ সালে, লিনেট “স্কিকি” ফ্রোমে নামের একজন নারী ক্যালিফোর্নিয়ার স্যাক্রামেন্টোতে প্রেসিডেন্ট ফোর্ডকে গুলি করার চেষ্টা করেছিলেন। যদিও, সে তার বন্দুক দিয়ে গুলি করার আগেই সিক্রেট সার্ভিস এজেন্টরা তাকে থামিয়ে দেয়।

লিনেট “স্কিকি” ফ্রোমেকে গ্রেফতার করে পুলিশ। ছবি: সংগৃহীত।

কয়েক সপ্তাহ পরে, সারা জেন মুর নামের আরেকজন নারী, ক্যালিফোর্নিয়ার সান ফ্রান্সিসকোতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ৩৮তম প্রেসিডেন্টকে গুলি করার চেষ্টা করেছিলেন। ফ্রোমের মতো, সে গুলি করার আগেই সিক্রেট সার্ভিস এজেন্টরা তাকে থামিয়ে দিয়েছিলো। ফলে, দু’বার ব্যর্থ হয় প্রেসিডেন্টকে মারার পরিকল্পনা।

সারা জেন মুর। ছবি: সংগৃহীত।

৩০ মার্চ, ১৯৮১ – রোনাল্ড রিগান

১৯৮১ সালে, ওয়াশিংটন, ডিসিতে হিলটন হোটেল থেকে বের হওয়ার সময় প্রেসিডেন্ট রিগান এবং তার নিরাপত্তা দলের ওপর বেশ কয়েকটি গুলি চালান জন হিঙ্কলি জুনিয়র নামের একজন হামলাকারী। বন্দুক থেকে ছোঁড়া গুলি প্রেসিডেন্টের লিমো গাড়ির থেকে ছিটকে পড়ে। ফলে আহত হয়েছিলেন রিগান। এরপর ১২ দিন তিনি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ছিলেন। ভয়াবহ সেই হামলা থেকে প্রাণে বেঁচে যান যুক্তরাষ্ট্রের ৪০তম প্রেসিডেন্ট।

হিলটন হোটেলের সামনে হামলার সময়ের একটি দৃশ্য। ছবি: সংগৃহীত।

এছাড়াও রয়েছেন জর্জ ওয়ালেস। তিনি ছিলেন আলাবামা অঙ্গরাজ্যের গভর্নর। ১৯৭২ সালে তৃতীয়বারের মতো প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের জন্য প্রচার চালিয়ে যাচ্ছিলেন। ওয়াশিংটনের বাইরে তার ওপর গুলি করা হয়। এতে প্রাণে বেঁচে যান তিনি।

এছাড়াও হোয়াইট হাউসে ২০১১ সালে গুলি করে প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামাকে হত্যা করার চেষ্টা করা হয়েছিল। ওবামাকে হত্যাচেষ্টায় আইডাহোর এক ব্যক্তিকে অভিযুক্ত করা হয়।

গুপ্তহত্যা

এবার আসা যাক গুপ্তহত্যায়। এখন পর্যন্ত চারজন মার্কিন প্রেসিডেন্টকে হত্যা করা হয়েছে। প্রথমেই রয়েছেন আব্রাহাম লিংকন;

১৪ এপ্রিল, ১৮৬৫ – আব্রাহাম লিংকন

১৮৬৫ সালে, ওয়াশিংটন ডিসির ফোর্ড থিয়েটারে ব্রিটিশ লাইট কমেডি ‘আওয়ার আমেরিকান কাজিন’ নাটকটি দেখতে গিয়েছিলেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ১৬তম প্রেসিডেন্ট আব্রাহাম লিংকন। তখন প্রেসিডেন্সিয়াল বক্সে ঢুকে লিংকনের মাথায় গুলি করে হত্যা করেন জন উইলকস বুথ নামের একজন হামলাকারী। আমেরিকার গৃহযুদ্ধের শেষের দিকে এই হত্যাকাণ্ডটি সংঘটিত হয়। কারণ-বুথ ও তার সহ-ষড়যন্ত্রকারীরা লিঙ্কনকে একজন অত্যাচারী হিসেবে দেখেছিলেন। তাদের নজরে লিংকন সংবিধান লঙ্ঘন করেছিলেন।

তখনকার সংবাদপত্রের একটি প্রতীকী ছবি। সংগৃহীত।

২ জুলাই, ১৮৮১ – জেমস এ গারফিল্ড

১৮৮১ সালে, স্বাধীনতা দিবসের বক্তৃতার জন্য ম্যাসাচুসেটস যাওয়ার উদ্দেশে ওয়াশিংটন ডিসির একটি ট্রেন স্টেশনে প্রবেশ করার সময় প্রেসিডেন্ট গারফিল্ডকে গুলি করেন চার্লস জুলিয়াস গুইটো নামের হামলাকারী। গুইটো মানসিকভাবে অসুস্থ ছিলেন এবং হত্যার কারণ ছিল ব্যক্তিগত।

হত্যাকাণ্ডের প্রতীকী ছবি। সংগৃহীত।

৬ সেপ্টেম্বর, ১৯০১ – উইলিয়াম ম্যাককিনলে

১৯০১ সালে, নিউইয়র্কের বাফেলোতে প্যান-আমেরিকান এক্সপোজিশনে লিওন সিজলগোস নামের একজন নৈরাজ্যবাদী প্রেসিডেন্ট ম্যাককিনলিকে বুকে ও পেটে দুটি গুলি চালান। এ হামলার আট দিন পর যুক্তরাষ্ট্রের ২৫তম প্রেসিডেন্ট মারা যান।

তবে এই হত্যাকাণ্ড ঘটনার পর তৈরি করা হয় আধুনিক দিনের সিক্রেট সার্ভিস।

বাফেলোতে প্রেসিডেন্ট ম্যাককিনলিকে গুলি করলো একজন নৈরাজ্যবাদী। ছবি: সংগৃহীত।

২২ নভেম্বর, ১৯৬৩ – জন এফ কেনেডি

১৯৬৩ সালে, টেক্সাসের ডালাসে প্রেসিডেন্ট কেনেডিকে হত্যা করেছিলেন লি হার্ভে অসওয়াল্ড নামের একজন হামলাকারী। তিনি তখন তার স্ত্রী জ্যাকলিনের সাথে একটি কনভার্টিবল গাড়িতে ছিলেন। পাশের একটি বিল্ডিংয়ের ৬তলা থেকে ৩টি গুলি ছোড়েন অসওয়াল্ড। তিনটির মধ্যে ২টি কেনেডির মাথায় আঘাত করেছিল। যার কারণে মৃত্যু হয় যুক্তরাষ্ট্রের ৩৫তম প্রেসিডেন্টের।

সূত্র: সিএনএন, দ্য ওয়াশিংটন পোস্ট, সিবিএস নিউজ,ওয়ান নিউজ

Exit mobile version