Site icon Jamuna Television

‘তুমি ১০ টাকা আয় করলে আমাকে ১ টাকা দিতে হবে’

রাজিব আহমেদ:

রাজধানীর গুলশান ও বনানী এলাকার বারে প্রায় প্রতিদিনই বসে নাচ-গানের আসর। ডিজে গানের তালে তালে চলে উদ্দাম নাচ। মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইন অনুযায়ী এমন আয়োজন সম্পূর্ণ অবৈধ। তাহলে প্রশ্ন, প্রশাসনের নাকের ডগায় দিনের পর দিন এগুলো চলছে কীভাবে?

এ নিয়ে অনুসন্ধানে নামে যমুনা নিউজ। জানা যায়, গুলশান-বনানীর এই ডিজে পার্টির নিয়ন্ত্রণ করেন খোদ মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের একজন ইন্সপেক্টর। নাম তার সুমনুর রহমান। দায়িত্বপালন করেন গুলশান সার্কেলে। তার একটি অডিও রেকর্ড যমুনা নিউজের হাতে এসেছে। যাতে তার এসব অনিয়মের প্রমাণও মিলেছে।

ওই অডিওতে সুমনুর রহমানকে বলতে শোনা যায়, আমি লা মেরিডিয়ানের পার্টি বন্ধ করে দিছি। গার্টস নিয়ে চাকরি করি। বারগুলো আমাদের নিয়ন্ত্রণে। বারে কী হবে, না হবে ১২-১৪টা শর্ত দেয়া থাকে। বারে টিকিট দেয়া যাবে না, নাচ-গান করা যাবে না, পারমিট ছাড়া বাঙালিকে মদ বিক্রি করা যাবে না। আমি যদি কালকে রিপোর্ট দিই, তাহলে বারের লাইসেন্সটা হেল্ড আপ করে দেবে। তুমি জানো, নারকোটিক্সের যে প্রতিষ্ঠান আছে… বারের ভেতরে একমাত্র সংশ্লিষ্ট জোনের নারকোটিক্সের ইন্সপেক্টর ছাড়া র‍্যাব-পুলিশও ঢুকতে পারে না। পুলিশ যদি ঢুকতে চায়, তাহলে আমাকে ফোন দেবে। ভাই আসেন, আমরা এই বারে অভিযান চালাবো।

শুধু ডিজে পার্টির নিয়ন্ত্রণ না, গুলশান-বনানীতে অবৈধ মাদক কেনাবেচা এমনকি সিসা লাউঞ্জও চলে সুমনের ইশারায়।

অডিওতে এই কর্মকর্তাকে বলতে শোনা যায়, তুমি জোনে দাবড়িয়ে বেড়াচ্ছ এখানে-সেখানে, দুইদিন পর সীসা লাউঞ্জ খুলবা, তুমি যত লোককে দিয়েই ফোন দিইয়াও, আমি যদি বলি তোমাকে খুলতে দিবো না, তাহলে তুমি কি পারবা খুলতে?

ফোনের অপরপ্রান্ত থেকে তখন বলতে শোনা যায়, সিসা লাউঞ্জ তো পুরো আপনার নিয়ন্ত্রণে। জবাবে সুমনুর রহমান বলেন, তাহলে তুমি আমার সাথে হাই-হ্যালো করো না… একদিন সালাম দিলা না।

প্রতি মাসে আয়ের একটি অংশ তাকে ভাগ দিতে হবে বলেও ব্যবসায়ীকে হুমকি দেন সুমনুর রহমান। অভিযোগ আছে, বারের লাইসেন্স নবায়ন করতেও দিতে হয় মোটা অঙ্কের টাকা।

সুমনুর নিজেও এ বিষয়ে কথা স্পষ্ট করেন। যমুনা নিউজের হাতে আসা অডিওতে তাকে বলতে শোনা যায়, একটা লাইসেন্স নবায়ন করতে গেলেও চোখ বুইঝা ৫ লাখ টাকা দেয়।

এরপর তাকে আরও বলতে শোনা যায়, তুমি ভাই ব্যবসা করো, ১০ টাকা আয় করলে আমাকে ১ টাকা দাও বা দুই টাকা দাও। ইনকামটা তো অবৈধ। না হয় আমি ডিস্টার্ব করবো। সোজা হিসাব। কারণ, এই জোনে আসতে আমার অনেক টাকা খরচ হয়েছে। থাকতেও অনেক টাকা খরচ হয়। আমি সারাজীবন এখানে থাকবো না। দুইটা পয়সার জন্য এখানে এসেছি। তুমি দেখো আমি ডিস্টার্ব করলে তুমি একঘণ্টা ব্যবসা করতে পারো না কি না।

বিষয়টি নিয়ে সুমনুর রহমানের বক্তব্য পেতে প্রতিবেদক একাধিকবার তার মুঠোফোনে কল দিলেও তিনি রিসিভ করেননি। এমনকি অফিসে গিয়েও পাওয়া যায়নি তাকে।

এই অভিযোগের প্রসঙ্গে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের মহাপরিচালক খোন্দকার মোস্তাফিজুর রহমান জানিয়েছেন, এই ধরনের অনিয়মের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে। কোনো কর্মকর্তা বা কর্মচারী তার অপরাধের মাত্রা অনুযায়ী শাস্তি পাবেন।

/এমএন

Exit mobile version