Site icon Jamuna Television

নির্বাচনে অংশ নেয়ার সুযোগ নেই নাজমুল হুদার

ঘুষ গ্রহণের মামলায় দণ্ডিত ব্যারিস্টার নাজমুল হুদা আওয়ামী লীগের মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করলেও একাদশ সংসদ নির্বাচনে তার অংশগ্রহণের কোনো সুযোগ নেই।

আইন বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, সংবিধান অনুযায়ী একজন সাজাপ্রাপ্ত ব্যক্তি সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে পারেন না। দুর্নীতির মামলায় হাইকোর্ট থেকে চার বছরের সাজাপ্রাপ্ত নাজমুল হুদা।

সেই রায়ের সত্যায়িত অনুলিপি এখনও প্রকাশিত হয়নি। বিচারিক আদালতে অনুলিপি পৌঁছার ৪৫ দিনের মধ্যে তাকে সেখানে আত্মসমর্পণ করতে হবে।

তারপর আপিলের সুযোগ পাবেন তিনি, এর আগে নয়। কিন্ত এর আগে একজন সাজাপ্রাপ্ত ব্যক্তি কীভাবে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করলেন এ নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।

মামলার বাদী দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) আইনজীবী অ্যাডভোকেট খুরশীদ আলম খান যুগান্তরকে বলেন, দুদকের মামলায় ব্যারিস্টার নাজমুল হুদা হাইকোর্টে চার বছরের সাজা হয়েছে।

রায়ে বলা হয়েছে, পূর্ণাঙ্গ সত্যায়িত অনুলিপি বিচারিক আদালতে পৌঁছার ৪৫ দিনের মধ্যে নাজমুল হুদাকে ওই আদালতে আত্মসমর্পণ করতে হবে। এখনও সেই রায়ের অনুলিপি প্রকাশিত হয়নি। এখন আপিলের প্রশ্নই আসে না।

তিনি বলেন, ‘সংবিধানের ৬৬ (২) (ঘ) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী তিনি (নাজমুল হুদা) জাতীয় নির্বাচনে অযোগ্য।’ সেখানে বলা আছে, ‘নৈতিক স্খলনজনিত কোনো ফৌজদারি অপরাধে দোষী সাব্যস্ত হইয়া অন্যূন দুই বৎসরের কারাদণ্ডে দণ্ডিত হইলে এবং মুক্তিলাভের পর পাঁচ বৎসরকাল অতিবাহিত না হইয়া থাকলে তিনি নির্বাচনে অযোগ্য বিবেচিত হবেন।’

জানা যায়, ঢাকা-১৭ আসন থেকে নির্বাচন করার জন্য ৯ নভেম্বর আওয়ামী লীগের মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেন নাজমুল হুদা। ওইদিন বিকালে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার ধানমণ্ডির রাজনৈতিক কার্যালয় থেকে নাজমুল হুদার একজন প্রতিনিধি মনোনয়ন ফরমটি সংগ্রহ করেন।

ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী আগামী ২৮ নভেম্বর মনোনয়নপত্র দাখিলের সর্বশেষ তারিখ। সেই মোতাবেক আর আছে বারো কার্যদিবস। এর মধ্যে চার বছরের সাজা বাতিল অথবা স্থগিতের কোনো সুযোগ নেই।

২ কোটি ৪০ লাখ টাকা ঘুষ নেয়ার মামলায় ২০০৭ সালের ২৭ আগস্ট নাজমুল হুদাকে ৭ বছর ও তার স্ত্রী সিগমা হুদাকে ৩ বছরের কারাদণ্ড দেন বিচারিক আদালত। এ রায়ের বিরুদ্ধে তারা হাইকোর্টে আপিল করেন।

শুনানি শেষে ২০১১ সালের ২০ মার্চ হাইকোর্ট তাদের খালাস দেন। ওই রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করে দুদক। আপিল বিভাগ ২০১৪ সালের ১ ডিসেম্বর হাইকোর্টের রায় বাতিল করে পুনরায় বিচার করার নির্দেশ দেন। পুনঃশুনানি শেষে গত বছরের ৮ নভেম্বর হাইকোর্ট রায় দেন।

রায়ে নাজমুল হুদাকে চার বছর কারাদণ্ড ও সিগমা হুদাকে তার কারাভোগ কালকে সাজা হিসেবে ঘোষণা করেন। রায়ের কপি পাওয়ার ৪৫ দিনের মধ্যে আদালত তাকে আত্মসমর্পণ করতে নির্দেশ দেন।

কিন্তু নাজমুল হুদা আপিল বিভাগের রায়ের বিরুদ্ধে রিট করেন। রিটটি গত বছরের ১০ ডিসেম্বর খারিজ করে দেন হাইকোর্ট। এরপর তিনি আত্মসমর্পণ ছাড়াই আপিল করার অনুমতি চেয়ে আবেদন করেন।

এ বছরের ৭ জানুয়ারি সেই আবেদনও খারিজ করে দেন আপিল বিভাগ। ফলে এ মামলায় নিু আদালতে নাজমুল হুদাকে আত্মসমর্পণ করতেই হচ্ছে।

তবে রায় ঘোষণার প্রায় এক বছর হয়ে গেলেও এখনও পূর্ণাঙ্গ অনুলিপি প্রকাশিত হয়নি। আর এ সুযোগ নিয়ে তিনি এখনও রাজনীতিতে সরব রয়েছেন।

জানতে চাইলে সাবেক আইনমন্ত্রী ব্যারিস্টার শফিক আহমেদ যুগান্তরকে বলেন, ব্যারিস্টার নাজমুল হুদার বিরুদ্ধে হাইকোর্টের দেয়া সাজা এখনও বহাল আছে।

সংবিধানের ৬৬ (২)(ঘ) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী তিনি জাতীয় নির্বাচনে অযোগ্য। তাই আগামী নির্বাচনে তার অংশগ্রহণের কোনো সুযোগ দেখছি না। সাজপ্রাপ্ত ব্যক্তি কীভাবে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করলেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, যেহেতু উনার সাজা স্থগিত অথবা বাতিল হয়নি সেহেতু মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করার যৌক্তিকতা আমি দেখছি না।

এ বিষয়ে বক্তব্য জানতে সোমবার মোবাইল ফোনে ব্যারিস্টার নাজমুল হুদাকে কল দেয়া হয়। কিন্তু রিসিভ না করায় বক্তব্য নেয়া সম্ভব হয়নি।

ব্যারিস্টার নাজমুল হুদার বিরুদ্ধে ২০০৭-০৮ সালে (তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময়) তিনটি মামলা হয়। একটি জ্ঞাত-আয়বহির্ভূত অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে। দ্

বিতীয়টি এক ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে প্রতি মাসে ২৫ হাজার টাকা হিসাবে ৬ লাখ টাকা অবৈধভাবে নেয়ার অভিযোগে। তৃতীয়টি আকতার হোসেন লিমিটেড নামের একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মীর জাহির হোসেনের কাছ থেকে ২ কোটি ৪০ লাখ টাকা ঘুষ নেয়ার অভিযোগে।

প্রথম মামলাটিতে নাজমুল হুদাকে ১২ বছর সাজা দেন নিু আদালত। আপিলে হাইকোর্ট প্রথম মামলাটি খারিজ করে তাকে শাস্তি থেকে অব্যাহতি দেন। দ্বিতীয় মামলাটির কার্যক্রম আদালতের আদেশে বন্ধ আছে।

ব্যারিস্টার নাজমুল হুদা বিভিন্ন মেয়াদে খাদ্য, তথ্য এবং যোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। বিএনপির সঙ্গে টানাপোড়েন শুরু হলে তাকে বহিষ্কার করা হয়।

বহিষ্কার আদেশের পরও বিএনপির পরিচয়েই রাজনীতিতে থাকার চেষ্টা করেন। অবশেষে ২০১২ সালে তিনি বিএনপি থেকে পদত্যাগ করেন। এরপর বাংলাদেশ ন্যাশনালিস্ট ফ্রন্ট (বিএনএফ), বাংলাদেশ ন্যাশনালিস্ট অ্যালায়েন্স (বিএনএ), বাংলাদেশ মানবাধিকার পার্টি (বিএমপি) এবং সর্বশেষ ‘তৃণমূল বিএনপি’ গঠন করেন।

সম্প্রতি এ দলটিকে নিবন্ধন দিতে নির্বাচন কমিশনকে নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট।

Exit mobile version