Site icon Jamuna Television

ঐক্যফ্রন্টের ইশতেহারে ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরীর ৫ প্রস্তাব

কৃষক-শ্রমিক-ছাত্র-বয়স্ক মানুষ এই ৪টি শ্রেণির কথা মাথায় রেখে ঐক্যফ্রন্টের ইশতেহারে ৫টি প্রস্তাব যুক্ত করার প্রস্তাব দিচ্ছেন গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ও জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের অন্যতম উদ্যোক্তা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী। তিনি তার প্রস্তাবে মানুষের কর্মসংস্থান ও স্বাস্থ্যসেবার ওপর গুরুত্ব আরোপের তাগিদ দিয়ছেন। এ বিষয়ে যমুনা নিউজকে ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, আমি আমার প্রস্তাব তুলে ধরছি। আশা করি নেতৃবৃন্দ এটা আমলে নেবেন। ঐক্যফ্রন্ট ক্ষমতায় এলে সাধারণ মানুষের কী লাভ হবে এটা পরিষ্কার করতে হবে। মানুষের সমস্যাগুলো নিয়ে কথা বলতে হবে, প্রশ্ন তুলতে হবে।

তার প্রস্তাবে আছে আইন ও বিচার বিভাগের সংস্কার, বিচারকদের স্বচ্ছ নিয়োগ পদ্ধতি, গণভোট ও ন্যায়পাল নিয়োগের প্রস্তাব থাকছে। থাকছে কৃষক-শ্রমিকদের বাড়তি প্রণোদনা দেওয়ার প্রস্তাবও।

ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরীর ৫ প্রস্তাব:

১.(ক) স্থানীয় সমবায়ের মাধ্যমে কৃষকের উৎপাদিত পণ্যের উৎপাদন খরচের সর্বোচ্চ দ্বিগুণ মূল্য স্থির হবে বিক্রয়মূল্য হিসেবে এবং নগরবাসী কৃষিপণ্য পাবেন উৎপাদক সমবায় সমিতির নির্ধারিত মূল্যের সর্বোচ্চ ২-৩ গুণ বেশি মূল্যে। অর্থাৎ কৃষকের ১ কেজি পণ্যের স্থানীয় বিক্রয় দর ৫ টাকা হলে নগরবাসী তা পাবেন ১০-১৫ টাকায়।

(খ) প্রয়োজনমাফিক সব কৃষিপণ্য উৎপাদনের জন্য ভর্তুকি দেওয়া হবে, যেন কৃষিতে কর্মসংস্থান বাড়ে এবং ভারত ও পার্শ্ববর্তী দেশ থেকে কৃষিজাত পণ্যের আমদানি কমে।

২. বাজারমূল্যের সঙ্গে সঙ্গতি রেখে শ্রমিকের মজুরি নির্ধারণ হবে এবং সামরিক বাহিনীর দরে সব শ্রমিককে রেশন দেওয়া হবে। শ্রমিকরা মাসিক মাত্র ২৫০ টাকা প্রিমিয়ামে সব স্বাস্থ্য সুরক্ষা বীমা সুবিধা পাবেন। শ্রমিকরা কেবল ওষুধের মূল্য দেবেন।

৩. (ক) সারাদেশের স্বাস্থ্যব্যবস্থায় দ্রুত উন্নয়নের নিমিত্তে ‘১৯৮২ সালের জাতীয় ঔষুধনীতির’ সুষ্ঠু প্রয়োগ হলে তিন মাসের মধ্যে সব অত্যাবশ্যকীয় ওষুধের মূল্য ন্যূনতম অর্ধেক হবে এবং সব ডায়াগনস্টিক পরীক্ষার দর কমপক্ষে ৫০ শতাংশ কমে আসবে। হৃদরোগের চিকিৎসা খরচও একই হারে কমবে। প্রাথমিক অবস্থায় ঢাকা শহরে নতুন কোনো হৃদরোগের সরকারি হাসপাতাল তৈরি না করে ৮টি প্রধান শহরে হৃদরোগের চিকিৎসা ব্যবস্থা নিশ্চিত করা হবে।

(খ) গ্রামীণ জনসাধারণকে স্বাস্থ্যসেবা দেওয়ার লক্ষ্যে সব ইন্টার্ন চিকিৎসককে এক বছর ইউনিয়ন পর্যায়ের স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণকেন্দ্রে সার্বক্ষণিকভাবে অবস্থান করে এক বছর প্রশিক্ষণ বাধ্যতামূলক করা হবে।
(গ) সব বড় ও জেলা শহরে জেনারেল প্র্যাকটিশনার্সপ্রথা চিকিৎসা সৃষ্টি করে দ্রুত যথাযথ চিকিৎসার জন্য রেফারেল ব্যবস্থা শুরু হবে। (ঘ) আইনের সংশোধন করে অঙ্গ প্রতিস্থাপন নিয়মাবলি সহজলভ্য করা হবে। বাংলাদেশের সর্বত্র ৬ মাসের মধ্যে কিডনি প্রতিস্থাপন হবে দেড় লাখ থেকে দুই লাখ টাকায়।

৪. (ক) দুই বছরের মধ্যে ৫ লাখ গ্রাজুয়েটের কর্মসংস্থান হবে। (খ) সব বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের তিন মাস বাধ্যতামূলক সামরিক শিক্ষা দেওয়া হবে দেশের নিরাপত্তার স্বার্থে।
(গ) বয়োবৃদ্ধরা অর্ধেক মূল্যে বাস ও ট্রেনে ভ্রমণ সুবিধা পাবেন এবং শিক্ষিত বয়োবৃদ্ধদের জন্য অবৈতনিক কর্মসংস্থান হবে।

৫. (ক) মুখে রক্ত সঞ্চার স্বাস্থ্যের লক্ষণ নয়, বরং মৃত্যুর ঘণ্টা। ঢাকা শহরে আর একটিও সরকারি বিল্ডিং, এমনকি সরকারি হাসপাতালও নয়। দুই বছরের মধ্যে প্রশাসন, স্বাস্থ্য, শিক্ষা ও টেক্সট বই প্রকাশনা, গণপরিবহন, নারী উন্নয়ন এবং সমাজকল্যাণ ব্যবস্থাপনা ৮টি প্রদেশ বা ১৭টি স্টেটভিত্তিক বিকেন্দ্রীকরণ করা হবে। কেন্দ্রীয় সরকারের অধীনে থাকবে সুপ্রিমকোর্ট, সেনাবাহিনী, পররাষ্ট্র, বৈদেশিক বাণিজ্য, বিমান ও সমুদ্রবন্দর, আন্তঃজেলা মহাসড়ক এবং ইনকাম ট্যাক্স ও শুল্ক ব্যবস্থাপনা। জাতীয় রাজস্ব বোর্ড ও নৌবাহিনীর সদর দপ্তর এবং নৌ ও বন্দর মন্ত্রণালয় চট্টগ্রামে স্থানান্তরিত হবে।

(খ) আইন ও বিচার বিভাগের সংস্কার, বিচারকদের স্বচ্ছ নিয়োগ পদ্ধতি ও বিচারকাজে তাদের পূর্ণ স্বাধীনতা নিশ্চিতকরণ। হাইকোর্টের বিচারপতিদের বার্ষিক ছুটি ৪ সপ্তাহে সীমিতকরণ এবং সর্বোচ্চ পাঁচ বছরের মধ্যে মামলার রায় চ‚ড়ান্ত করা হবে। সব সিভিল ও ক্রিমিনাল মানহানি মামলায় বাধ্যতামূলক কোর্ট ফি নির্ধারণ, পুলিশ বা অন্যভাবে সৃষ্ট মিথ্যা মামলার জন্য ক্ষতিপূরণ ব্যবস্থা এবং কেবল অভিযুক্ত ব্যক্তিদের বাসস্থানের শহর-আদালতে মানহানির মামলা করতে হবে, অন্যত্র নয়। অহেতুক মামলার জট কমানোর লক্ষ্যে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তি ছাড়া অন্য কেউ মানহানির মামলা করতে পারবেন না।

(গ) আইনের অপপ্রয়োগ নয়, সঠিক প্রয়োগই লক্ষ্য। খুনের মামলা ছাড়া অন্য মামলার আসামিদের হাইকোর্টে জামিন হলে সরকার সুপ্রিমকোর্টে আপিল করে অহেতুক সময় ও অর্থ ব্যয় করবে না।

(ঘ) সংবিধানের সংস্কার করা হবে, গণভোট, ন্যায়পাল নিয়োগ হবে। আলাদা সাংবিধানিক কোর্ট স্থাপন করা হবে প্রত্যেক প্রদেশ বা স্টেটে। সুপ্রিমকোর্ট বসবে কেন্দ্রীয় রাজধানীতে।

Exit mobile version