Site icon Jamuna Television

গাইবান্ধায় সরাসরি ভোটে লড়তে চান ৯ নারী মনোনয়ন প্রত্যাশী

জিল্লুর রহমান পলাশ, গাইবান্ধা প্রতিনিধি:
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে গাইবান্ধার পাঁচটি সংসদীয় আসনের মধ্যে চারটিতে দলের মনোনয়ন পেয়ে সরাসরি ভোটে লড়তে চান নয় নারী মনোনয়ন প্রত্যাশী। এরমধ্যে আ.লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশায় বর্তমান দুই এমপিসহ ৬ জন। জাতীয় পার্টির মনোনয়ন প্রত্যাশী দুইজন। বিএনপি থেকে দুই আসনে লড়তে মনোনয়ন নিয়েছেন একজন।

সম্ভাব্য মনোনয়ন প্রত্যাশীর মধ্যে কেউ পারিবারিক, কেউ রাজনীতির মাঠ থেকে, আবার কেউ ভাই ও বাবার অবর্তমানে স্থানীয় রাজনীতিতে সক্রিয় থাকতে মনোনয়ন দৌঁড়ে সামিল হয়েছেন। দীর্ঘদিন ধরে এসব প্রার্থীর অনেকেই নেতাকর্মীদের নিয়ে প্রচারণা ও গণসংযোগ করেছে বিভিন্ন এলাকায়। নিজেদের পরিচিতি ও জনপ্রিয়তা তুলে ধরে দোয়া চেয়েছেন ভোটার ও সাধারণ মানুষের কাছে।

ইতোমধ্যে প্রত্যেক প্রার্থী নেতাকর্মীদের সঙ্গে নিয়ে দলের মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করে জমাও দিয়েছেন। মনোনয়ন যুদ্ধে টিকে থাকতে পুরুষ প্রার্থীদের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করে নিজের প্রার্থীতা নিশ্চিত করতে জোর তদবিরও চালাচ্ছেন তারা।

গাইবান্ধা-১ (সুন্দরগঞ্জ) আসনে দুই নারীসহ আ’লীগের মনোনয়ন নিয়েছেন পাঁচজন। দুই নারীর মধ্যে জেলা আ’লীগের সহ-সভাপতি সৈয়দা মাসুদা খাজা ও সুন্দরগঞ্জ উপজেলা আ’লীগের সিনিয়র যুগ্ম আহবায়ক আফরুজা বারী। অাফরুজা বারী দুর্বৃত্তদের গুলিতে নিহত আ.লীগের সাবেক সংসদ সদস্য মঞ্জুরুল ইসলাম লিটনের বড় বোন। এর আগে, চলতি বছরের মার্চে অনুষ্ঠিত উপ-নির্বাচনে নৌকা প্রতীকে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে জাতীয় পার্টির প্রার্থীর কাছে হেরে যান তিনি। সৈয়দ মাসুদা খাজা এরআগেও তিনবার দলের মনোনয়ন নিয়েছিলেন।

আফরুজা বারী বলেন, ‘জামায়াত-শিবির অধ্যুষিত সুন্দরগঞ্জে আ’লীগের সক্রিয় অবস্থান সৃষ্টি করেছে তার ভাই সাবেক এমপি মঞ্জুরুল ইসলাম লিটন। নৌকা প্রতীকে এমপি নির্বাচিত হওয়ার নেতাকর্মীদের সাথে নিয়ে জামায়াত-শিবিরের এলাকা ছাড়া করেন তিনি। এলাকার বিভিন্ন উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে ব্যাপক অবদান রয়েছে লিটনের। পারিবারিক নেতৃত্ব আর এলাকার উন্নয়নে সক্রিয় ভূমিকা পালনে দলের মনোনয়ন নিয়ে এমপি হতে চান তিনি’।

গাইবান্ধা-২ (সদর) আসনে আ’লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশী আটজনের মধ্যে একজন নারী রয়েছেন। তিনি হলেন বর্তমান সংসদ সদস্য ও জাতীয় সংসদের হুইপ মাহাবুব আরা বেগম গিনি। ছাত্রজীবন থেকেই মাহাবুব আরা বেগম গিণি রাজনীতে সক্রিয়। নবম ও দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নৌকা প্রতিকের দুইবারের এমপি তিনি।

গাইবান্ধার উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে যথেষ্ট অবদান ও মানুষের কল্যাণে নিবেদিত ভাবে কাজ করার কথা জানিয়ে মাহাবুব আরা বেগম গিণি বলেন, ‘দলের অনেকেই মনোনয়ন চেয়েছেন। তবে যোগ্য হিসেবে দল তাকেই মনোনয়ন দিবে। এবারও বিপুল ভোটে জয়ী হবেন বলে আশা করেন তিনি’।

এ আসনে বিএনপির মনোনয়ন নিয়েছেন সাবেক এমপি রওশন আরা ফরিদ। গাইবান্ধা-৩ আসনেও দলীয় মনোনয়ন নিয়েছেন তিনি। বর্তমানে রওশন আরা ফরিদ বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য। একই সঙ্গে দুই আসনে মনোনয়ন নেয়ার বিষয়ে সাবেক এমপি রওশন আরা ফরিদ বলেন, ‘দুই আসনে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দিতা করতে মনোনয়ন নিয়েছি। এই দুই আসনে তার জনপ্রিয়তা ও মানুষের ভালোবাসা আছে। তবে এখন দলের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায়। সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ ভোট হলে জনগনের ভোটে বিজয়ী হবেন বলেও আশা করেন তিনি’।

গাইবান্ধা-৩ (সাদুল্যাপুর-পলাশবাড়ী) আসনে আ.লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশী বিশ জনের মধ্যে দুইজন নারী। তাদের মধ্যে সংরক্ষিত নারী এমপি উম্মে কুলসুম স্মৃতি ও পলাশবাড়ী উপজেলা মহিলা লীগের সভাপতি শ্যামলী আকতার। উম্মে কুলসুম স্মৃতি কৃষক লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ন সাধারণ সম্পাদক। উম্মে কুলসুম স্মৃতি ও শ্যামলী আকতার পলাশবাড়ী উপজেলার বাসিন্দা। নারী নেতৃত্বে সক্রিয় ভুমিকা পালনের পাশাপাশি এলাকার উন্নয়ন ও মানুষের পাশে থাকতেই দলের মনোনয়নে সরাসরি ভোটে প্রতিদ্বন্দিতা করতে চান বলে জানিয়েছেন উম্মে কুলসুম স্মৃতি।

এ আসনে জাতীয় পার্টির মনোনয়ন নিয়েছেন দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য ব্যারিস্টার দিলারা খন্দকার শিল্পী ও সাদুল্যাপুর উপজেলা পরিষদের মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান আকতার বানু লাকি। দিলারা খন্দকার শিল্পী দলের চেয়ারম্যান এইচএম এরশাদের ঘোষিত একক প্রার্থী।

দিলারা খন্দকার শিল্পী বলেন, ‘দীর্ঘদিন ধরে দুই উপজেলার সাংগঠনিক অবস্থান শক্তিশালী ও নেতাকর্মীদের সক্রিয় করতে ব্যাপক ভূমিকা পালন করেছেন। দলের নেতাকর্মীদের নিয়ে গণসংযোগ করেছেন শহর, বন্দর ও গ্রামগঞ্জে। মনোনয়ন নিশ্চিত হলে জনগণের দেয়া ভোটেই বিজয়ী হবে। বিজয়ী হলে অবহেলিত দুই উপজেলার দৃশ্যমাণ উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে নিজেকে নিয়োজিত করবেন বলে জানান তিনি’।

গাইবান্ধা-৫ (সাঘাটা-ফুলছড়ি) আসন থেকে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন তালিকায় নয় জনের মধ্যে একজন নারী রয়েছেন। তিনি বর্তমান এমপি ও ডেপুটি স্পিকার এ্যাড.ফজলে রাব্বী মিয়ার বড় মেয়ে ফাহিমা আকতার রিতা। ফাহিমা আকতার রিতা সুপ্রিম কোটের আইনজীবী। বাবার রাজনীতি ধরে রাখতে দলের মনোনয়ন নিয়েছেন তিনি। বাবার জনপ্রিয়তাকে কাজে লাগিয়ে রাজনীতি সক্রিয় ও মানুষের পাশে থাকতে চান বলে জানান এ্যাড. ফাহিমা আকতার।

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নারীদের অংশগ্রহণ ইতিবাচক হিসেবে দেখছেন জেলার নারী সংগঠনের নেত্রীরা। বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ গাইবান্ধা শাখার সাধারণ সম্পাদক রিক্তু প্রসাদ বলেন, ‘নারী-পুরুষের সমধিকার। সবক্ষেত্রেই নারীরা আত্মপ্রত্যয়ী হিসেবে নিজেদের প্রকাশ করছে’।

Exit mobile version