Site icon Jamuna Television

সচিবালয়ে ছিল না অগ্নিসুরক্ষা ব্যবস্থা, ‘রাষ্ট্রীয় সংস্থাগুলো ভেঙেছে আইন’

দেশের প্রশাসনের কেন্দ্রবিন্দু সচিবালয়ের ভেতরে-বাইরে মিলিয়ে ২৪ ঘণ্টা দায়িত্ব পালন করেন একশর বেশি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য। আগুনে পোড়া সাত নম্বর ভবনে আছে তিনটি গেট। প্রতি তলায় আছে আলাদা গেট। প্রতিদিনের অফিস শেষে সবাই বের হওয়ার পর ধাপে ধাপে সবগুলো গেট বন্ধ করা হয়। চাইলেই কেউ প্রবেশ করতে পারে না সচিবালয়ে।

এখানে কর্মকর্তাদের জন্য আছে পরিচয়পত্র। ক্যান্টিন বা খাবারের দোকানে যারা কাজ করেন তাদেরও পাস নিতে হয়। সচিবালয়ে সংবাদ সংগ্রহ করতে যাওয়া সাংবাদিকদেরও নিতে হয় অ্যাক্রিডিটেশন কার্ড। এমনকি দর্শনার্থীদেরও পাস নিয়ে ভেতরে প্রবেশের সুযোগ মেলে। প্রতি তলার করিডোরে আছে সিসিটিভি। আছে ভবনের বাইরেও। সচিবালয়ের চারপাশে আছে উঁচু দেয়াল। দেয়ালের বাইরেও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা সারাক্ষণ টহল দেন। এখানে নিরাপত্তা দিচ্ছেন সেনাবাহিনীর সদস্যরাও। এর মধ্যেই মধ্য রাতে ঘটলো নজিরবিহীন আগুনের ঘটনা।

তারপরেই সবার চোখের সামনে এলো সচিবালয়ে অগ্নিসুরক্ষা ব্যবস্থা না থাকার বিষয়। ছিল না স্বয়ংক্রিয় অ্যালার্ম সিস্টেম ও পর্যাপ্ত অগ্নিনির্বাপন সরঞ্জামও। মূল ফটক দিয়ে ঢুকতে বেগ পেতে হয়েছে ফায়ার সার্ভিসকেও।

অথচ এসব তৈরির দায়িত্ব যাদের ছিল, সেই রাষ্ট্রীয় সংস্থাগুলোই পদে পদে ভেঙেছে আইন। তাতেই ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠেছিল সচিবালয়— জানালেন ফায়ার সার্ভিসের সাবেক মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আলী আহমেদ খান।
সচিবালয়ের ভবনগুলো বেশ পুরনো। বৈদ্যুতিক সংযোগও অরক্ষিত। ভবনগুলোতে বৈদ্যুতিক সংযোগ কেবল অনেক জায়গাতেই ঝুলে থাকে। ফায়ার সার্ভিসের পক্ষ থেকে সচিবালয়ের সুরক্ষায় নানা পরামর্শ দেয়া হলেও তা মানেনি রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলোই।

আলী আহমেদ খান বললেন, এটি রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা (কেপিআই) হলেও নিরাপত্তা ব্যবস্থা সন্তোষজনক ছিল না। অথচ কেপিআই অনুযায়ী আমাদের প্রস্তুতি থাকার কথা ছিল। এ কারণে সময়ের সাথে সাথে আগুন ছড়িয়ে পড়ে। আর আগুন আয়ত্বের বাইরে চলে যায়। যার জন্য অগ্নিনির্বাপনে অনেকক্ষণ সময় লেগেছে। আগুন নেভাতে গাড়িগুলো যে আসবে, সেভাবে কিন্তু নকশা করেনি। গণপূর্ত অধিদফতর কাজগুলো করে, তার সাথে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় নিরাপত্তা দেখে, সে অনুযায়ী আমরা একটি পরিকল্পনা দিয়েছিলাম। নিয়ম যারা বানাবে তারাই কিন্তু অনিয়মটা করে বসে। তারা কিন্তু নিয়মগুলো আসলে মানছে না। যার জন্য বড় একটি দূর্ঘটনা ঘটলো।

সচিবালয়ের সাত নম্বর ভবনের তিনটি তলা আগুনে পুড়েছে। সেখানে স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়, সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়, যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়, শ্রম ও প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয় এবং ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয় অবস্থিত। আগুনে পুড়েছে এসব মন্ত্রণালয়ের গুরুত্বপূর্ণ নথি।

এসব ব্যবস্থা পুরোপুরি ডিজিটাল না হওয়ায় কিছু ক্ষতি হলেও অনেক নথি তৈরি করা সম্ভব বলে মনে করেন সাবেক সচিব আবু আলম মোহাম্মদ শহীদ খান।

তিনি বলেন, কাগজের নথি পুরোপুরি ডিজিটালাইজড ফর্মে যেতে হয়তো সময় লাগবে। কিছু নথি হয়তো আবার সৃজন করা যাবে। কিছু জিনিস তো পাওয়া যাবে না। যেমন নোটশিটের মধ্যে কার কী কথা-মন্তব্য ছিল, প্রকল্প বাস্তবায়নকারী সংস্থার সাথে যেসব চুক্তি, টেন্ডার ডকুমেন্ট এ সমস্ত কাগজপত্র সৃজন করা যাবে।

এ অগ্নিকাণ্ডের পর প্রশ্ন এখন চারদিকে, এটি নাশকতা নাকি দুর্ঘটনা। পাশাপাশি মানুষের জিজ্ঞাসা, এ ঘটনায় তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন কি আলোর মুখ দেখবে? কারণ, আগুনের ঘটনা ঘটে, তদন্ত কমিটিও হয়। কিন্তু আলোর মুখ দেখে না সেগুলো। বাস্তবায়িত হয় না পরামর্শ। এরকমই হয়ে এসেছে এতকাল। এবার কি হবে ব্যতিক্রম?

/এমএন

Exit mobile version