প্রকাশ্যে আন্তঃক্যাডার দ্বন্দ্ব, সংকটের গোড়ায় নজর দেয়ার তাগিদ সাবেকদের

|

শাকিল হাসান:

পদ আর পদোন্নতি নিয়ে আন্তঃক্যাডার দ্বন্দ্ব এখন প্রকাশ্যে। দাবি আদায়ে কলমবিরতি, সভা-জমায়েতের মতো কর্মসূচিও পালিত হচ্ছে। সেখানে কর্মরতদের বক্তব্য, অনেক ক্ষেত্রেই লঙ্ঘন হচ্ছে সরকারি কর্মচারী আচরণবিধি। সরকারও এসব বিবেচনায় নিয়ে, দিয়েছে সতর্কীকরণ বিজ্ঞপ্তি। তবে, গোড়ায় সমাধান না করে শুধু বিজ্ঞপ্তিতে সংকট কাটবে না- মনে করছেন সাবেক কর্মকর্তারা।

আন্তঃক্যাডার দ্বন্দ্ব নতুন নয়। তবে গত ১৭ ডিসেম্বর জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের সংবাদ সম্মেলনে উপসচিব পদে কোটা এবং পদোন্নতিতে পরীক্ষা ব্যবস্থা রাখার প্রস্তাবের বিষয়টি জানানোর পর তা রীতিমতো প্রকাশ্য রুপ নেয়।

কমিশনের প্রস্তাবের বিরোধিতা করে পরস্পরবিরোধী অবস্থান নেয় প্রশাসন ক্যাডার এবং বাকি ২৫ ক্যাডার কর্মকর্তারা। প্রশাসন ক্যাডার বলছে, পদোন্নতিতে পরীক্ষা নয় এবং উপসচিব পদের শতভাগ তাদের জন্য রাখতে হবে। উল্টো দিকে ২৫ ক্যাডার জোট বলছে, পদোন্নতিতে পরীক্ষা এবং উপসচিব পদ সবার জন্য উন্মুক্ত করার কথা। এই দ্বন্দ্বে প্রশাসন বিভাগে তৈরি হয়েছে অস্থিরতা। প্রশাসন ও কৃষি ক্যাডারের সাবেক দুই ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার সাথে আলাপে উঠে এসেছে সংকটের গোড়ার কথা।

বিষয়টি নিয়ে সাবেক সচিব আবু আলম মো শহিদ খান বলেন, ব্রাকেটবন্দী কিছু ক্যাডার আছে। এগুলো যখনই সৃষ্টি করা হয়েছে, তখন থেকেই তাদের মধ্যে একধরনের দ্বন্দ্ব ও সংঘাত শুরু হয়েছে। যদি সংস্কার করাই হয়, তবে এটি বিবেচনায় রাখতে এতগুলো ক্যাডার পদ রাখার প্রয়োজন আছে কিনা।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের সাবেক পরিচালক আহমেদ আলী চৌধুরী ইকবাল বলেন, তদবির বা রাজনৈতিক পরিচয়ে যদি পদোন্নতি হয় তাহলে সমতার ভিত্তিতে একটি বৈষম্যহীন দেশ বা আমলা গঠন করা হলো না।

দাবি আদায়ে দু’পক্ষই সভা-সমাবেশ, সচিবালয়ে জমায়েত, কলমবিরতির মতো কর্মসূচি পালন করেছে। এতে প্রশাসনে স্থবিরতার পাশাপাশি মুখোমুখি অবস্থানে সরকারি কর্মকর্তারা।

বাধ্য হয়ে ৩১ ডিসেম্বর তাদের সতর্ক করে বিজ্ঞপ্তি দেয় সরকার। এতে সরকারি কর্মচারী আচরণ বিধিমালা ১৯৭৯ এর ৩০ ধারা স্মরণ করিয়ে দিয়ে ব্যবস্থা নেয়ার কথাও বলা হয়।

এ নিয়ে আহমেদ আলী চৌধুরী ইকবাল বলেন, অফিস চলাকালীন অবরোধ, মানববন্ধন কিংবা কলমবিরতি এগুলো সরকারি চাকরিবিধিতে নেই। এগুলো চাকরিবিধি পরিপন্থী।

সাবেক সচিব আবু আলম মো শহিদ খান বলেন, সরকারের কাছে দাবি পেশ করার জন্য সমাবেশ করা আমাদের চাকরিবিধি অনুমোদন করে না। এটি করলে অবশ্যই চাকরিবিধি লঙ্ঘণ করা হবে।

রাষ্ট্র পরিচালনায় যেখানে সব ক্যাডার একে অপরের পরিপূরক; সেখানে এমন প্রকাশ্য মুখোমুখি অবস্থান। সংকট কাটানোর উপায় বাতলে দিয়েছেন সাবেকরা।

এ নিয়ে আবু আলম মো শহিদ খান বলেন, এমন অসংখ্য সুপারিশ আসবে। সেসব সুপারিশ আলাপ-আলোচনা করতে হবে। এরপর যখন পদেক্ষপ নেওয়া হবে সেসময় সব অংশীজনকে নিয়েই সিদ্ধান্ত নিতে হবে। তিনি বলেন, একটি দক্ষ ও পেশাদার প্রশাসন দরকার। যারা মেধাবী, সহায়ক ও দলনিরপেক্ষ থেকে দেশের কল্যাণে কাজ করবে।

সাবেক দুই কর্মকর্তাই বলছেন, কল্যাণমূলক রাষ্ট্র গড়তে এবং সেবা মানুষের কাছে পৌঁছে দিতে দক্ষ ও পেশাদার কর্মকর্তার বিকল্প নেই। যোগ্যদের বাছাই করতে সঠিক কৌশল প্রণয়ন করতে হবে সরকারকেই।

/এনকে


সম্পর্কিত আরও পড়ুন




Leave a reply