Site icon Jamuna Television

ইফতারে মুড়ি মাখায় জিলাপি? নাকি না?

মুরশিদুজ্জামান হিমু:

বাঙালি ভোজনরসিক। ইতিহাস বলে, নানা স্থানের লোকজনের বসবাস এই বঙ্গে। তাই ভোজনের ক্ষেত্রেও তারা নিজ নিজ পদ এনে যুক্ত করেছেন আমাদের পাতে। সময়ের সাথে চলতে চলতে যার অনেকগুলোকেই আজ আমরা মনে করি বাঙালি খাবার।

জিলাপি তেমনই এক পদ। ইফতারে কেউ কেউ এই মিষ্টি জাতীয় খাবারকে অমৃত বলেন, কেউ আবার এমন মন্তব্যের বিরুদ্ধেও। কিন্তু আজকাল সামাজিক মাধ্যমে একটি আলোচনা তুঙ্গে, তা হলো ‘মুড়ি মাখায় জিলাপি, নাকি না’।

শুরুতেই প্রশ্ন আসে, মুড়ির সাথে পারস্যের খাবার জিলাপি খাওয়ার রীতি এলো কবে থেকে? কোন কোন এলাকায় এমন খাবারের রেওয়াজ আছে?

বিষয়টি নিয়ে কথা হয় পুরাণ ঢাকার আদি বাসিন্দা রায়হান ফিরদাউসের সঙ্গে। তার ভাষ্য, ইফতারে মিষ্টি জাতীয় খাবার খান ঠিকই। তবে, সেটা শুধু জিলাপি না। ‘শিরমাল’ নামে রুটির মতো মিষ্টি জাতীয় একটি খাবার পুরাণ ঢাকার লোকজন খায়। হালুয়া থাকে, খুরমা খেঁজুর দুধে ভিজিয়ে খায়। থাকে কাবাব জাতীয় খাবারও। কিন্তু কখনই মুড়ি মাখার সঙ্গে জিলাপি মিশিয়ে তারা খান না।

তবে কি চট্টগ্রামের লোকজন ইফতারে মুড়ির সঙ্গে জিলাপি মিশিয়ে খায়? সাগরপাড়ের শহরে বেড়ে ওঠা নাজিম উদ্দিন জানালেন, তারা ইফতারে সব মিশিয়ে খান না। হয়ত একটু মুড়ির সঙ্গে ছোলা মেশানো হয়। তাও সেটা নিজের প্লেটে। বাসার সবার জন্য মুড়ি-ছোলা-পেঁয়াজু-বেগুনি-চপ একসাথে মাখানো হয় না। যে যার মতো আলাদা আলাদা প্লেটেই খায়। মানে, কোনোটির স্বাদ কোনোটির সঙ্গে মেলাতে চায় না।

উত্তরবঙ্গের বাসিন্দা আওলাদ কনক জানালেন, তাদের অঞ্চলে সবাই মিলে মুড়ি মাখা খাওয়ার রেওয়াজই খুব একটা নেই। বন্ধুরা একসঙ্গে হলে কখনও কখনও মাখানো হয়। তাই ইফতারে মুড়ির সঙ্গে জিলাপি অথবা বুরিন্দা বা বুন্দিয়া মাখানো হয় না সাধারণত। বেশিরভাগ বাসায় ইফতারের প্লেট হয় আলাদা। নানা আইটেমও পরিবেশন করা হয় আলাদাই।

কোনো অঞ্চলেই যদি ছোলা-মুড়ি মাখানোর সঙ্গে জিলাপি মেশানো না হয়, তবে এমনটা খায় কোন অঞ্চলের মানুষ? রায়হান, নাজিম বা কনকের সঙ্গে কথা বলে অবশ্য এনিয়ে একটা ধারণা পাওয়া গেছে। তাদের মতে, শহরে এসে মিশেছে বিভিন্ন অঞ্চলের মানুষ। ইফতারেও তাই সব অঞ্চলের ছোট্ট ছোট্ট খাবারের সংস্কৃতি মিশেছে। বলা যায় ব্লেন্ড হয়েছে। এই ব্লেন্ডেট সংস্কৃতিই ছোলা-মুড়ি মাখানোর সঙ্গে জিলাপি। যেটাকে বলা যেতে পারে ‘মিক্সড কালচার ফুড’।

/এমএমএইচ

Exit mobile version