Site icon Jamuna Television

মেটা ব্যবহারকারীদের জন্য প্রতারণার ফাঁদ, ব্যবহার হচ্ছে ভুয়া খবর-বিজ্ঞাপন

বাংলাদেশের বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ও অর্থ উপদেষ্টা সালেহ উদ্দিন আহমেদ বিস্মিত হন, যখন তিনি দেখেন যে একটি দেশের পরিচিত সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছে যে, বাংলাদেশ ব্যাংক তার বিরুদ্ধে অনলাইন বিনিয়োগ স্কিম প্রচারের অভিযোগে মামলা করেছে। আরও চাঞ্চল্যকর বিষয় ছিল, প্রতিবেদনে ব্যবহৃত ছবি—যেখানে দেখা যাচ্ছে, তাকে পুলিশ গ্রেফতার করছে।

কিন্তু পুরো বিষয়টাই ছিল ভুয়া! এটি ছিল না কোনো প্রকৃত সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদন, বরং একটি নকল ওয়েবসাইটের তৈরি মিথ্যা খবর, যা ফেসবুকের পেইড বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে ছড়ানো হয়েছিল। দীর্ঘদিন ধরে এই ভুয়া প্রতিবেদনটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রচারিত হয়ে আসছিল।

বাংলাদেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ করার চেষ্টা?

এ বিষয়ে সালেহ উদ্দিন আহমেদ একে শুধু ব্যক্তিগত মানহানির চেষ্টা নয়, বরং বাংলাদেশের সার্বিক ভাবমূর্তিকে দেশে ও বিদেশে ক্ষুণ্ণ করার অপচেষ্টা বলে মন্তব্য করেন। তবে এটি শুধু গুজব ছড়ানোর জন্য তৈরি করা হয়নি। বরং তদন্তে বেরিয়ে আসে, এটি একটি সুসংগঠিত প্রতারণার অংশ, যা বিশ্বব্যাপী কমপক্ষে ৩৬টি দেশে পরিচালিত হচ্ছে।

গবেষণা প্রতিষ্ঠান ডিসমিসল্যাব ৩৭টি সংবাদ ও ফ্যাক্ট-চেকিং প্রতিবেদনের পাশাপাশি ১৫টি অনলাইন রিভিউ এবং অসংখ্য ভুয়া স্ক্যাম নিবন্ধ বিশ্লেষণ করে নিশ্চিত করে যে, এই চক্রটি বিশ্বজুড়ে বহু মানুষকে প্রতারণার ফাঁদে ফেলছে। তারা কমপক্ষে ৩৯টি স্বনামধন্য সংবাদমাধ্যমের ওয়েবসাইট নকল করেছে, যার মধ্যে রয়েছে ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল, বিবিসি, সাউথ চায়না মর্নিং পোস্ট, খালিজ টাইমসও।

প্রতারণার কৌশল: ভুয়া সংবাদ ও বিজ্ঞাপন

এই স্ক্যাম চক্রটি ভুয়া ওয়েবসাইট তৈরি করে এবং সেখানে জালিয়াতিপূর্ণ বিনিয়োগের সুযোগ সম্পর্কে মিথ্যা সংবাদ প্রকাশ করে। এসব প্রতিবেদনে বিখ্যাত ব্যক্তিদের নাম ব্যবহার করা হয়, যাতে মানুষ বিশ্বাস করে যে তারা সত্যিই এই প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে লাভবান হতে পারে।

এরপর ফেসবুক ও অন্যান্য সামাজিক মাধ্যমে পেইড বিজ্ঞাপন ব্যবহার করে এসব ভুয়া সংবাদ ছড়ানো হয়। ব্যবহারকারীরা যখন লিংকে ক্লিক করেন, তখন তারা একটি নকল ওয়েবসাইটে প্রবেশ করেন, যেখানে তাদের অর্থ লগ্নি করতে উৎসাহিত করা হয়। একবার কেউ লগিন করলে বা তথ্য শেয়ার করলে, স্ক্যামাররা তাদের ব্যক্তিগত ও আর্থিক তথ্য চুরি করে নেয়।

৩৬টি দেশে ৬৪ জন বিশিষ্ট ব্যক্তিকে লক্ষ্য করে প্রতারণা চক্র

ডিসমিসল্যাব বলছে, বিশ্বজুড়ে অন্তত ৩৬টি দেশে ৬৪ জন বিশিষ্ট ব্যক্তিকে টার্গেট করে একটি সংঘবদ্ধ প্রতারণা চক্র সক্রিয় রয়েছে। এই চক্রটি ভুয়া সংবাদ ও বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে মিথ্যা তথ্য ছড়িয়ে প্রতারণার ফাঁদ তৈরি করছে।

বিশ্বের স্বনামধন্য ব্যক্তিদের নাম ও ছবি ব্যবহার করে তাদের বিরুদ্ধে ভুয়া মামলা, গ্রেফতারের খবর বা বিনিয়োগ প্রচারের অভিযোগ এনে কেলেঙ্কারি তৈরি করা হচ্ছে। এরপর এসব ভুয়া খবর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম, বিশেষত ফেসবুক ও ইনস্টাগ্রামে পেইড বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে ছড়ানো হয়।

কেন মেটা ব্যবহারকারীদের টার্গেট করা হচ্ছে?

মেটা (Meta), যা ফেসবুক, ইনস্টাগ্রাম ও হোয়াটসঅ্যাপের মতো প্ল্যাটফর্ম পরিচালনা করে বিশ্বব্যাপী কোটি কোটি ব্যবহারকারীর কাছে সহজে পৌঁছানোর সুযোগ দেয়। প্রতারক চক্রের জন্য এটি একটি বড় সুবিধা, কারণ ফেসবুকের বিজ্ঞাপন ব্যবস্থার মাধ্যমে লক্ষ্যবস্তু অনুযায়ী নির্দিষ্ট ব্যক্তিদের কাছে প্রচারণা চালানো সম্ভব।

বিশেষ করে বাংলাদেশ, ভারত, ফিলিপাইন ও আফ্রিকার কিছু দেশে অনলাইন বিনিয়োগের প্রতি মানুষের আগ্রহ বেশি থাকায় এই প্রতারণার ফাঁদ সহজেই কাজ করে। সাধারণ মানুষ দ্রুত টাকা আয়ের লোভে এই ধরনের স্ক্যামের শিকার হয়ে পড়ে।

/এমএমএইচ

Exit mobile version